শিরোনাম: রুবাই ও শায়েরী
আলোচক: শংকর ব্রহ্ম
রুবাই ও শায়েরী
শংকর ব্রহ্ম
রুবাই ও শাযেরী কি এক জিনিষ?
– না শাযেরী ও রুবাই এক জিনিষ নয়।
তবে সব রুবাই-ই এক একটি শায়েরী, কিন্তু সব শায়েরী-ই কিন্তু এক একটি রুবাই নয়। কারণ, তবে তফাৎ কি?
তফাৎ হলো –
দার্শনিক চৌপদী (চার লাইনের) কবিতা হলো ‘রুবাই’।
রুবাইয়ের চলন খুব নিয়মানুগ ও লাগসই।
লেখা হবে চার লাইনে।
প্রথম দুই লাইনে অন্ত্যমিল থাকবে।
তৃতীয় লাইনের শেষে অন্ত্যমিল মুক্ত।
আবার চতুর্থ লাইনে, প্রথম দুই লাইনের মতো অন্ত্যমিল থাকবে।
প্রথম দুই লাইনে মূল বিষয়ের অবতারণা করা হবে। অন্ত্যমিল সেই বিষয়ের ঐক্য ধারণ করবে। তৃতীয় লাইনে কবি বা দার্শনিক তাঁর সেই ভাবনা তুলে ধরবেন, যা তিনি পদ্ধতিগত আলোচনা বা চর্চায় উত্তর পাচ্ছেন না। চতুর্থ লাইনের অন্ত্যমিলের মধ্য দিয়ে তৃতীয় লাইনের সমস্যা নিয়ে কবির নিজের কথা থাকবে। আর তা প্রথম দুই লাইনে বলা আলোচনার সঙ্গে তা যুক্ত হবে।
এর ইঙ্গিত বহন করবে চতুর্থ লাইনের অন্ত্যমিলে।
যেমন দু’টি রুবাইয়ের উদাহরণ –
১).
After so long time I met you in my dream last night
From bloomed body-garden I smelt the perfume-delight,
Your soft touch gave me spirit in my heart’s gloominess
Woke up from dream-remained the remorse in existence.
Aznabi
(বহুকাল পর গতরাতে স্বপ্নলোকে তোমার দর্শন পেলাম
প্রস্ফুটিত তোমার দেহবাগিচার অাকুল খোশবু পেলাম,
তোমার পেলব হাতের পরশ এ নীরস প্রাণে চেতনা দিল
স্বপ্ন ভেঙ্গে জেগে উঠলাম- বুকভরা খেদ রয়ে গেলো!)
২).
O Saki! Lo! The lovely morning has appeared
Arise and pour the wine into the bottle left from the night
Forget all miseries and drink the joy of life
This one breath is ours – think not of the next.
সোবহেই খোশ ও খুররম অাস্ত খীম অায়ে সাকী
দর শীশাহ্ বেকুন শরাব অায শব বাকী
জামী বামান অারদ দম গনীমত মীদান
ঈন একদমাহ্ নগদরা ওয়া ফরদা বাকী।
(ছিন্ন করে রাতের আঁধার এলো শুভ ঐ প্রভাত
সাকি ওঠো! ভাঙো নেশা জেগে উঠো অামার সাথ
ভুলো সকল বিষাদ ব্যথা – পান করো এ জীবনরস
বর্তমানটা ভোগ করে নাও – বাকি যা সব দাও না বাদ।)
আর শায়রী’ হল কবিদের ছোট ছোট কবিতা যা দিয়ে অল্প কথায় মনের অনেক গভীর ভাব প্রকাশ করা হয়ে থাকে। তাতে দার্শনিক ভাবনা থাকতেও পারে, আবার নাও থাকতে পারে। শায়েরী রুবাইয়ের মতো চার লাইনের হতেই হবে, এমন কোন বাধ্য বাধকতা নেই।
দু-লাইন, তিন লাইন, চার লাইন যা খুশি হতে পারে।
১-৩-৪ লাইনে মিল থাকার কোন বাধ্য বাধকতা নেই। তবে অন্তমিল থাকলে ভাল। না থাকলেও কোন ক্ষতি নেই।
যেমন কয়েকটি শাযেরীর উদাহরণ –
শায়রী (এক)
চমনমে ইখতালাতে রঙো বু সে বাত বনতি হ্যায়
হাম ই হাম হ্যায় তো কেয়া হাম হ্যায়
তুমহি তুম হো তো কেয়া তুম হো
সারসার সালানী
[বাগানে যে ফুল ফোটে রঙ আর সুরভীর মিলনেই তার সার্থকথা। তেমনি আমাদের দুজনের মিলনেই আমাদের চরম মূল্যায়ন, আমাদের জীবনের পূর্ণতা। একা আমি তো অসম্পূর্ণ একা তুমিও মূল্যহীনা।]
শের শায়রী (দুই)
ও ঔর হোঙ্গে যো পীতে হ্যায় বেখুদিকে লিয়ে
মুজেসে চাহিয়ে থোরিসে জ়িন্দেগীকে লিয়ে
জিগর মুরদাবাদী
[ওরা আলাদা জাতের লোক যারা সুরা পান করে জীবন কে ভুলে যাবার জন্য, আমার তো সুরার প্রয়োজন হয় জীবনকে ফিরে পাবার জন্য।]
শের শায়রী (তিন)
ময়নে যো তুমকো চাহা, কায়া ইসমে খতা হ্যয়
এ তুম হো, আ আয়না, ইনসাফ জরা করনা
জলীল মানিকপুরী
[আমি যে তোমাকে চাইছি এটা অপরাধ কি? এই তুমি এইবার তোমার সামনে এই আয়না রাখছি, দেখে বিচার কর, হে প্রিয়া তুমি এত সুন্দরী কার সাধ্য যে তোমাকে না ভালবাসে থাকতে পারে, নিজেকে আয়নায় দেখ, বুঝতে পারবে এত সুন্দরীকে সবাই চাইতে পারে এতে কারও কোন অন্যায় নেই।]
শের শায়রী (চার)
বদল যায়ে আগর মালী
চমন হোতা নেহী খালি
বাহারে ফিরভি আতি হ্যায়
বাহারে ফিরভি আয়েঙ্গে
দাগ
[মালি বদলে গেলে বাগান খালি হয়ে যায় না, শূন্য হয়ে যায় না বাগানের ফুলভার। কেন না বসন্ত আবারও আসবে তার ফুল সাজি নিয়ে, মালী অনেক বদলাবে কিন্ত বসন্তের আগমন তাতে কোন দিন রুদ্ধ হবে না।]
শায়েরী তাই রুবাই হতেও পারে, নাও হতে পারে।
কিন্তু প্রত্যেকটি রুবাই-ই এক একটি শাযেরী।
আশা করি বোঝা গেল নিশ্চয়ই শায়েরী ও রুবাইয়ের তফাৎ।
(৬১৫ শব্দ)
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন