প্রেম প্রয়োজনাতিরিক্ত, শিল্প। যেমন কবিতা কিংবা গান। যখন কথা ফুরায়, এরা হয়ে ওঠে। যেমন গোলাপ। এর রঙ এর প্রয়োজন, কিন্তু সুবাস এর প্রেম। মৌমাছি কিংবা ভ্রমর কিংবা মানুষ এর রঙ দেখে আকৃষ্ট হয়, কিন্তু যখন সে সুবাস পায়, মুগ্ধ হয়, হৃদয়ে জেগে ওঠে আনন্দ। মৌমাছি কিংবা ভ্রমর যখন এর উপর বসে, তখন গোলাপ কৌশলে তার প্রয়োজনের কাজটি সেরে ফেলে, সে তাদের ঠোঁটে, নখে, পাখায় মাখিয়ে দেয় রেণু। যখন তারা অন্য ফুলে বসে, এই রেণু সে মাখিয়ে দেয় সেই ফুলে, তারা নিষিক্ত হয়ে পড়ে, আবার জন্ম নেয় গোলাপ। যৌনতা প্রয়োজন, প্রেম তাকে শিল্পিত করে। রঙ নয় গোলাপের সুবাস এর প্রেম, যৌনতার সুবাস হচ্ছে প্রেম।
প্রেম যখন বিয়েতে গড়ায়, এর মাধুর্য হারায়, শিল্পসত্তা হারিয়ে বসে। সে তখন হয়ে পড়ে প্রয়োজনের দাস। তখন সে সন্তান উৎপাদন করে, সন্তান প্রয়োজন। প্রেম সামাজিক যে কোন চুক্তি বহির্ভূত এক শিল্পময় ইন্ধন। তাই সে খুব অল্পদিনেই একঘেয়ে হয়ে ওঠে। প্রেম হীরক কিংবা স্বর্ণ নির্মিত এক অলংকার, যখন সে শোভিত হয় অঙ্গে, অঙ্গ থেকে সৌন্দর্য ফুটে বের হয়। প্রেম যেন এক ওষ্ঠরঞ্জিকা, ঠোঁটে সে যখন সে লেপটায় তার রঙ, রমণীয় হয়ে ওঠে ঠোঁট, তখন ঠোঁট শুধু কথা বলার অঙ্গ নয়, অতিরিক্ত, প্রেমের দ্যোতক। একখণ্ড বস্ত্র প্রয়োজন কিন্তু যখন সে নকশায় ফুটে ওঠে, তখন সে প্রয়োজনের অতিরিক্ত হয়ে পড়ে। তখন এর শরীর থেকে সৌন্দর্য ঠিকরে বের হয়। প্রেম বস্ত্র নয় শাড়ী, শাড়ির জমিনে নকশার অংকন।
প্রেম যেন এক পেয়ালা মদ্য, খাদ্য নয়। যখন সে জিহ্বা স্পর্শ করে, রক্তে মেশে, সে দুলে ওঠে, সে গেয়ে ওঠে, কথা বলে ওঠে অন্য ভাষায়, সে কবিতা লেখে, তার কণ্ঠস্বর বাঙময় হয়ে ওঠে। সে সুন্দর হয়ে ওঠে। তার চোখ থেকে রঙের ঝিলিক বের হয়। এই রঙ প্রেম।
শরীরে যে প্রেম জাগে, তার পেছনে রয়েছে হরমোনের ইন্ধন। একসময় সে কথা বলে ওঠে। কি যেন জেগে ওঠে, কি যেন সে চায়। যখন সে পায় তার মনের মত, হরমোন তাকে খুঁচিয়ে তোলে, সে অন্যমানুষ হতে থাকে। সে রোমাঞ্চিত হয়, অনুভব করে কিছু একটা। এটাই প্রেম। তখন সে যা করে, তা অতিরিক্ত। সে রাত জাগে, কবিতা লেখে। কারো সঙ্গ চায়। সে তার ভেতরে জেগে ওঠা অনুভবগুলির ভাগ দিতে চায়। তারা তখন যা কিছুতে জড়ায়, এটাই প্রেম। এটা প্রয়োজন নয়, অতিরিক্ত। এটা যৌনতা নয়, এটা তার ছন্দ, এটা তার রঙ, এটা শিল্প।
*
মন্তব্য করতে ক্লিক করুন