ওরা ভয় পায়।
সত্যের শব্দে ভয় পায়—
ছিন্নবস্ত্র, নির্ভীক, অনাহারে-সৃষ্ট
আওয়াজের ভিতরে লুকোনো বজ্রধ্বনিতে ভয় পায়।

ওরা একলব্যের আঙুল কাটে—
কারণ একটুকু দক্ষতা
তাদের রাজরাঙা অহঙ্কারকে কাঁপিয়ে দেয়।

ওরা কর্ণকে ফাঁদে ফেলে—
শ্রেষ্ঠত্বের গন্ধ পেলেই
ওদের ধনুক থরথর কেঁপে উঠে ।

বালির পিঠে ছুরি চালায় ওরা,
কারণ চোখে-চোখ রেখে বাঁচতে জানে
এমন মানুষদের সামনে
ওদের মাথা নত হয়ে যায়।

ওরা চৈতন্যের দ্রোহী কণ্ঠরোধ করে,
চায় না যেন কোনও দেবতার ওপরে
মানুষের সমতার রোদ উঠে আসে।

ওরা তুকারামের কবিতা পুড়িয়ে ফেলে—
কারণ শব্দে আগুন ধরলে
রাজপ্রাসাদের দেয়াল নরম হয়ে যায়।

ওরা লোরকা পড়তে সাহস পায় না—
একটা মাত্র ছন্দই
তাদের বর্মে ফাটল ধরিয়ে দেয়।

ওরা বই বাতিল করে—
কারণ পাতার নিচে লুকোনো হরফগুলো
ওদের বিরুদ্ধে চুপচাপ অস্ত্র বানায়।

ওরা গ্যালিলিওকে অন্ধকারে ছুড়ে দেয়,
আইনস্টাইনকে দেশছাড়া করে,
রামমোহনকে একঘরে করে—
কারণ যে আলো দূর থেকে আসে,
সেটাও তাদের অশান্ত করে দেয়।

ওদের তালিকায়
ক্ষুদিরাম, মাস্টারদা, আসফাকুল্লা, ভগৎসিং —
সবাই একই অপরাধে দোষী:
স্বাধীনতা চেয়েছিল।
সাহস দেখিয়েছিল।
ভয় দেখিয়েছিল ওদের।

এমনকি লকআপে রুল ঢুকিয়েও
ওরা বিপ্লব থামাতে চেয়েছিল—
কিন্তু বিপ্লবের মেরুদণ্ড
লোহা দিয়ে ভাঙা যায় না।

কারণ—
ওরা যত বার হাতে অস্ত্র তোলে,
আমরা তত বার আঙুলের নখে
নতুন নবান্নের আলো তুলে নিই।

কারণ—
ওরা ভয় পায়।
ওরা সবসময় ভয় পাবে।
কারণ সত্য, সাহস, কবিতা, প্রতিরোধ—
এগুলো জন্মায় আমাদের ভেতরে,
ওদের নয়।

এবং যতক্ষণ
হৃদয় বেঁচে আছে—
একটা বুক ধুকধুক করছে—
একটা শব্দ আগুনের মতো উঠে দাঁড়াচ্ছে—
ভয়ে ওরা আগ্রাসী হয়ে উঠবে..
আর আমাদের হৃদে জ্বলে উঠা আগুনে
পুড়ে ছাই হবে ওদের
ঐশ্বরিক অহংকার।
……

পরে পড়বো
২৬
মন্তব্য করতে ক্লিক করুন