জীবনের কতগুলো বসন্ত আমার কেটে গেল তোমার পাশে ,
এক সাথে, এক বিছানায়!
ক্রমশঃ চেনা মানুষটা তুমি কেমন যেন অচেনা হয়ে উঠলে দিন দিন..
আমিও যেন প্ৰিয় মানুষটাও অচেনা হয়ে উঠলাম তোমার কাছে।
কয়েকটা বসন্ত পেরিয়ে খোকন এল আমাদের ঘরে,
সে আমাদের সুখের দিন..
সারাদিন খোকন, আমি, আমার সংসার আর আমার খোকনের দুস্টুমি,
ভরিয়ে রাখতো আমায়।
আমি টেরই পাইনি কখন যেন চেনা মানুষটা আমার কাছে অচেনা হয়ে উঠেছে ক্রমশঃ।
তোমার আদর সে অর্থে কোনোদিন আমায় শান্তি দিতে পারেনি দুদন্ড!
মুখ গুঁজে কাঁদতাম বালিশে,
তুমি তখন ক্লান্ত হয়ে পাশ ফিরে শুয়ে পড়তে,
পাশের মানুষটার কোন সুখের হদিশ না নিয়েই।
মুখ বুঝে সয়েছি কত রাত,
চোখে ভিজিয়েছি নিস্তেজ বালিশ, এরই মাঝে শরীর ভারী হল আমার,
কেমন যেন একটা অতৃপ্তির মাঝেও আত্মসুখ উপলব্ধি করলাম,
মা হতে চলেছি আমি।
তারপর কেটে গেছে অনেক দিন,
খোকন এখন হোস্টেলে,
আমাদের জীবনটাও বাঁধা ধরা নিয়মে..
আমিও কেমন যেন বদলে গেছি,
না, কোন অভাব রাখোনি তুমি আমার,
এখনও মাস মাইনেটা হাতে তুলে দাও আমায়,
আমি তা দিয়ে নিজের ইচ্ছে মত সংসারের খরচ,
খোকনের খরচ,
কখনও কখনও নিজের সখ আল্হাদের পরিপাটি..
কিন্তু বিশ্বাস কর, কোন সুখ আমি খুঁজে পাইনা,
হয়তো মাস মাইনের টাকায় সুখ কেনা যায় না।
তোমার ইচ্ছে হলে কাছে আসো আজকাল,
দুটো মনের কথাও খুঁজে পাইনা তোমার কথায়,
তারপর কেমন নিস্তেজ হয়ে যায় তোমার ঝড়,
আর তখন আমার হৃদয় জুড়ে কালবৈশাখী তুফান!
বিশ্বাস কর, আমার মন টা সত্যি
ভালো থাকে না আজকাল,
তেমন কেউ নেই যাকে মনের কথাগুলো বলবো,
আর বিশ্বাসই বা করবো কেমন করে।
আমি চল্লিশ পেরোনোর মুখে দাড়ানো পুরোষ্ঠ যৌবন..
আমার সব থেকেও বড্ড একা আমি,
আমার মনে সত্যি কোন পাপ নেই,
তবে অধিকারবোধ আছে বটে,
সে অধিকারের ভাগ আমার কি পেতে নেই?
খোকন এখন অনেক বড়,
সে বিলেত যাবে কি যেন পড়তে,
ওর একটা জীবন তৈরি হয়েছে এখন,
আমি ওর মুখের দিকে তাকিয়েই তো সব ভুলেছি এতো দিন,
কিন্তু সত্যি কি ভুলে থাকা যায়
সব চেপে রাখা কষ্টগুলো?
নাকি এক জীবনে সব চেপে রাখার দায় শুধু আমারই?
খুব নষ্ট হতে ইচ্ছে হয় আজকাল,
কিন্তু সে মানুষ কোথায়?
যে আমাকে নষ্ট করে আগলে রাখবে এ জীবন!
আজ বসন্ত শেষে নিজেকে খুব একা মনে হয়,
বৃদ্ধাশ্রম আমায় ডাকে,
এবার এ বৃদ্ধাশ্রমে আমি শুধু একা আমাকেই আগলে রাখতে চাই।

মন্তব্য করতে ক্লিক করুন