একটি নির্বাক কাচখণ্ড, প্রতিদিন
চুম্বকের মতো টানে—
চোখহীন চাহনি, চেহারাহীন ছায়া,
দেহের গায়ে নামহীন এক নৈবেদ্য ঘষে চলে—
কোনো উৎসর্গ নয়,
কেবলই অবচেতনের পশম ঝরানো এক লৌহপিণ্ড।
ধরা হয়, সেখানে জমে থাকে সময়ের জ্বর,
আসলে, সময়ই সেখানে আয়না হয়ে দাঁড়িয়ে—
জীবনের ক্যানভাসে মুখের কালি লেপে
আঙুলে তোলে আত্মগ্লানির ছাই,
যেটা ধোয়া যায় না কোনো চৈত্রধূলি দিয়ে।
কেউ একজন ক্রমাগত কাচ মোছে—
যেন চেতনাহীন বিবস্ত্রতা ঢেকে ফেলবে আলো মেখে।
কিন্তু ত্বকে জমে থাকা প্রতিক্রিয়ার কুয়াশা
ছিঁড়ে পড়ে আড়মোড়া মুখের ফাটলে,
আর আঙুলে লেগে থাকে
অজস্র মুখোশের মৃত নাভিমূল।
এই তো, এক অন্তর্গত ভূগোলে—
রোজ জন্মায় এক একটি বিকৃত প্রতিবিম্ব,
যারা জীবিত নয়, মৃত নয়,
শুধু নিঃশ্বাস ফেলে ধূলির প্রতিচ্ছবিতে।
তারা নিজেরাই জানে না—
কার মুখ তারা ধারণ করে, আর কার লজ্জা তারা ফিরিয়ে দেয়।
আয়নাটি কোনোদিন কিছু বলে না—
কেবল তার নীরবতা এক মৃত আত্মজীবন,
যার প্রতিটি স্তব্ধতা চিবিয়ে ফেলে
মনের কোণে লুকানো অঙ্গভঙ্গির কর্কশতা।
একটি মুখ,
যে বুঝতে শেখেনি নিজের জন্মদাগের ব্যাখ্যা,
আয়নার উপর ঘষে চলে নিজের অনিচ্ছা—
অথচ দায় চাপায় কাচের উপর জমা ধুলোর ঘনত্বে।
শুদ্ধিকরণ আসলে এক অভিনব রক্তদান,
যেখানে ধারালো ওয়াক্তের আগুনে
ঘষে ফেলা হয় নিজস্ব অপরাধ।
আয়না তো কিছুই রাখে না,
শুধু ফিরিয়ে দেয়—
রঙহীন, গন্ধহীন এক করোটির পূর্ণাঙ্গ প্রতিকৃতি।
আর যখন সব কিছু মোছা হয়ে যায়,
তখন স্পষ্ট হয়—
ধুলো কেবল দেহের নয়, আত্মার রন্ধ্রে;
আর আয়না, সে তো
শুধুই সাক্ষী এক নির্বাক দেবতা
যার করুণা নেই— কেবল প্রতিবিম্ব আছে।
ধুলো যাদের অভ্যাস, তারা আয়না ধোয়—
অপরাধ যারা মুখে বয়ে বেড়ায়,
তাদেরই আঙুলে রক্ত জমে—
আয়না কেবল প্রতিবিম্ব দেয়,
দায় নয়।
মন্তব্য করতে ক্লিক করুন