কী বলছেন
ছবি তুলবেন
বানের জলে ভিটে হারা মানুষগুলোর
ছবি তুলবেন
না আঁইজ্ঞা ওই কাজটি করবেন নাই
চিঁড়া ,গুড় ,মুড়ি, বিস্কুট শুকনো খাবার
যা দিবেন দিতে পারেন
তবে এসব নিয়ে ছবি তুলতে দিব নাই
তাতে যদি মনে করেন
জিনিসপত্তর যা এনেছেন
সব ফিরিয়ে নিয়ে চলে যাবেন
সে যেতে পারেন।
আমি এ সব কথা
বলেছি স্যার,
এন.জি.ও. বাবুদের মুখের উপরে বলেছি,
সেই কবে আয়লা গেছে,
তারপরে বুলবুল গেল,
আম্ফান গেল,
এবারে আবার ইয়াস
কী বলবো স্যার
সেই এক জিনিস দেখে আসছি আমরা
সত্যি বলছি আপনাকে
এসব আর ভালো লাগে নাই
এসব আর ভালো লাগে নাই একটুকুন ও
এই দেখুন
আপনি তো ঘুরে গেছেন
সন্দেশখালির কানমারি
আদিবাসী পাড়ার
গরিব ঘরের মানুষের দুর্দশা
নিজের চোখে দেখে গেছেন
একবার আমাদের এখানে আসুন
সন্দেশখালি দু’নম্বর ব্লকের
আতাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের
গোপালের ঘাটে র
আদিবাসী পাড়ার
কী হাল দেখবেন আসুন
আমি শশধর সদদার
বলছি স্যার
আমরা দুশো ঘর
আদিবাসী মানুষ
কেউ ঢালাই রোডের উপরে
কেউ নদী বাঁধের উপরে,
খোলা আকাশের তলায় তিরপল টাঙ্গিয়ে,
কোনোরকমে ত্রাণশিবিরের খাবার খেয়ে
বেঁচে আছি।
নদীর নাম রায়মঙ্গল
তার এমনিতেই এপার ওপার দেখা যায় না কিছুই
এর উপরে ঘূর্ণিঝড়ে সে যখন ফুঁসে ওঠে
তার চেহারাই যায় বদলে
সেই ফুঁসে ওঠা নদীর সামনে কাঁচা মাটির বাঁধ
কি করে থাকে টিকে
বলতে পারেন,
তবু আমরা আদিবাসী পাড়ার
এতগুলো মানুষ
জলে নেমে বুক দিয়ে আগলেছি বাঁধ
তাতেও রোখা যায় নি ভাঙ্গন
বানের তোড়ে ঘর-দুয়ার
ভেসে গেছে সব
সেই আয়লা থেকে
এই এক জিনিস
দেখে আসছি স্যার ।
আয়লার পরে পঞ্চায়েতের নেতারা বলেছিল,
তোরা জমি দে
আমরা তোদের কংক্রিটের বাঁধ করে দেবো।
সেই কথা শুনে
জমি দিলাম আমরা
সে জমি বছরের পর বছর পড়ে থাকার পরে
গিলে খেয়েছে রায়মঙ্গল,
তারপর আর কি
বছর বছর কাঁচা মাটির
বাঁধ হয়
আবার সেই মাটির বাঁধ
নদীর জলে ভেসে যায়,
তখন আবার আমরা
ভিটে হারিয়ে
সব হারিয়ে
এমনি করে বসে থাকি
নদীর পাড়ে
তখন বাবুরা আসেন
ত্রাণ বিলোতে
বাবুরা আসেন ছবি তুলতে
আপনি লিখে দেবেন স্যার
আমরা একদিন জঙ্গল কেটে হাসিল করেছি সুন্দরবন,
আমরা বীরসা মুন্ডার জাত
আমরা বছর বছর হাত পেতে করুণা চাই না
দান-খয়রাতি নিয়ে
বাঁচতে চাই না
আমরা মাথা উঁচিয়ে
বাঁচতে চাই
আমরা মাথা উঁচিয়ে
মানুষের মতন বাঁচতে চাই।।

মন্তব্য করতে ক্লিক করুন