নেতা আসবেন
মন্ত্রী আসবেন
দাদাদের ঘুম নেই
দাদাদের কারো ঘুম নেই
খালপাড়ের বস্তির দাদাদের কারও ঘুম নেই
বড় মেজ সেজ ছোট সবারই গেছে ঘুম ছুটে
শুধু কি দাদাদের
সেইসঙ্গে ঘুম নেই সরকারি আমলাদের
পুলিশদের
প্যারা মিলিটারি ফোর্স এর কমান্ডোদের
বাস্তবিক কারও ঘুম নেই
ওরকম একটা ঘিঞ্জি বস্তি
সেখানে নিরাপত্তার বিষয়টা মস্ত বড় বিষয়
কম করেও বাহাত্তর ঘণ্টা আগে
পজিশন নিতে হয় কমান্ডোদের
প্যারা মিলিটারি ফোর্স এর জওয়ানদের
বম্ব স্কোয়াডের ট্রেনিং নেওয়া কুকুরদের
আসলে এসব ঘিঞ্জি বস্তির ভিতরে
হাইপ্রোফাইল ভিভিআইপিদের আসাটাই একটা রিস্ক
মস্ত বড় রিস্ক
তবু তাঁদের আসতেই হয়
উপায় নেই
গণতন্ত্রে ভোট বড় বালাই
তাই ভোট এলে খালপাড়ের বস্তিতে
ভিভিআইপিদের আসতেই হয়
ব্যাপারটা কিন্তু কম ব্যাপার না
পতাকায় পোস্টারে ফেস্টুনে
ছোটখাটো একটা উৎসব ।
তবু ঝাপুর মা সাবিনা বেওয়ার কোনো হেলদোল নেই
সে ঝুপড়ি ঘরের মাটির দাওয়াতে বসে
পা ছড়িয়ে যেমন করে বিড়ি বাঁধে রোজ
তেমনি করে বাঁধতেই থাকলো বিড়ি ।
কত আর মজুরি দেয় মহাজন’
তবে তার সঙ্গে বার্ধক্য ভাতা বিধবা ভাতা ও আরও সব
ভাতা টাতা যদি জুটত
তাহলে দুটো ভালোমন্দ খেয়ে পরে
বেঁচেবর্তে থাকতে পারত
কি অদ্ভুত মানুষ
এতো যে ভাতা বিলি করছে সরকার
এত যে দান-খয়রাত করছে সরকার
তার সেসবে কোনও চাড় নেই
নেতা ধরাধরি দালাল ধরাধরি নিয়ে
কোনো কিছুতেই কোনো হেলদোল নেই তার
বস্তির লোকেরা বলে ,
“যাই বলো আর তাই বলো বাপু
গরিবের এত গোঁ ভালো নয়
একদম ভালো নয় ।”
সাবিনা বেওয়া কান দেয়না এসব কথায়
পুলিশের গুলি খেয়ে
তার সোয়ামি মরেছে ক’বছর আগে
আহা একেবারে নিরীহ গোবেচারা মানুষ
পুলিশের গোলাগুলির মাঝে পড়ে গিয়ে
তার জীবনটা গেল বেঘোরে
ঝাপু টা তখন কোলে
সে যে কি দিন গেছে
ছেলে কোলে ফুটে বসে শাকপাত বেচে
উপাসে কাপাসে
সে এক দুর্ধর্ষ লড়াইয়ের দিন গেছে কেটে
এই করে ঝাপু টা যখন গায়ে গতরে বড় হল
ইস্টিশনের শিরিষতলায় ঈশম শেখের গ্যারেজে
খাটতে গেল
তখন খানিক দুখ ঘুচল সাবিনা বেওয়ার ।
এইটুকুন
শুধু এই টুকুন হোম ওয়ার্ক
যদি করা থাকত মন্ত্রী মশাইয়ের
তাহলে কিন্তু ভালই হতো
তাঁর আর কি দোষ
আগাগোড়া যত লেখাপড়া সব বিলেতে
সেখানে কোনও খালপাড়ের বস্তি নেই
সেখানে কোন ও সাবিনা বেওয়া নেই ।
“কী অদ্ভুত কনট্রাস্ট ”
নিজের একলাখ এগারো হাজারের চশমার ফ্রেমে
হাত দিয়ে মনে মনে
নিজেই কথাটা আওড়ালেন তিনি
তারপর বস্তিবাসী লোকজনের ভিড়ে
তারপর ক্যামেরা কাঁধে মিডিয়ার
আলো ঝলকানির ভিড়ে
কমান্ডো আর সিকিউরিটিদের ভিড়ে
মাটির দাওয়াতে বসে তিনি শুধোলেন সাবিনা বেওয়াকে,
-ও বুড়িমা ,
তোমার এই চশমাটা কতদিনের ?
-ও বহু পুরনো দিনের বাবা
তখন খোকা সবে এক পা দু পা
চলতে শিখেছে ।
-অত পুরনো চশমা পর কি করে
কানে দড়ি বেঁধে কি করে পর বলতো তুমি
-আমরা গরীব মানুষ বাবা
আমরা সব পারি ।
-শোনো আর তোমাকে পারতে হবে না এসব ।
-কেন বলতো?
-আমি তোমাকে বানিয়ে দেব নতুন চশমা
সামনে ভোট আসছে
ভোটের আগেই দেব বানিয়ে ।
-না বাবা না
তোমাকে ওসব দিতে হবে না ।
– কেন বলছো ওকথা
আমি তোমাদের ঘরের মানুষ
আমি তোমাদের কাছের মানুষ
আমি তোমাদের মন্ত্রী
এলাকার মন্ত্রী
তোমাদের মতন গরিব-দুখী মানুষদের
শুধু ভোটের সময় নয়
সারা বছর জুড়ে কত কি দিতে হয় আমাকে
সেখানে সামান্য একটা চশমা
সে তুমি নেবে না কেন
সে কেন নেবে না তুমি ?
– দেখো বাবা
আমার ছেলে ঝাপু
সে এখন সকাল বিকাল দিন দুবেলা
রিকশা চালায় ইস্টিশনে
তুমি কিছু মনে করো না বাবা
মায়ের নতুন চশমার দরকার হলে
ঝাপুই দেবে বানিয়ে
আমার ওই ছেলে ই দেবে বানিয়ে ।
মন্তব্য করতে ক্লিক করুন