ভাল অ ছিলম

পাহাড়

লদী

বন

তালপাতায় ছাওয়া মাটির ঘর

ইসব লিয়ে ভালভাবে

বাঁচে ছিলম

তাবাদে একদিন তফাতে গেল

কাঁকরা লাল মাটি

সবুজ ধান

শাল মহুলের গাছ

আর লীল জলের লদী

হাতের বাঁশি পড়ল খসে

মাদল গেল ভাঙে

মোষের পিঠে আদুল গায়ে গরুবাথানে

ঘুরে বুলার সময়টাকে

সময় লিলেক কাড়ে,

সুখ চাইলম

খড়ের ছাওয়া ফুটা চাল

পায়রার টঙ

চটুই পাখ

সুজনি কাঁথা

কোঠা ঘর

বুড়ি মা

লদীপারের পাহাড়কোলের শিউলিবনা গেরাম

সব ছাড়ে আমি আরও সুখ চাইলম

কইলকাতার আফিসে বসে

কলম পিষতে লাগলম

চকচকা টেবিলে মুখ দেখতে পালম

চাকরি লিয়ে দিন রাত তড়তড় করে বাড়তে লাগলম

সায়েব হয়ে গেলম

জীবগাড়ি

তেরতলা ফেলাটবাড়ি

সুট বুট

রঙিন টিভি

কমপিটর ইন্টরনেট সেল ফোন আইফোন

সঙ্গে দম দিয়া কলের পথুলের পারা

কলেজে মাস্টারি করা

শহুরা বিবি ,

ইসব নিয়ে কাটছিল বেশ

তা বাদে একদিন কেমন আটুপাটু লাগল

রঙ করা মুখ আর মুখোশের

মাপ করা কথা আর মাপা হাসি দেখে

বুকের ভিতরটা ডানাকাটা পাখের মতন

ছটফট করতে লাগল

আর থাকা নাই গেল

চলে গেলম আমার গাঁয়ে

জিব গাড়ি

সুট বুট

আইফোন

চোখে চশমা

হাতে ঘড়ি

কিনতুক খুঁজে নাই পালম

সেই গোবর মাটির লাতা দিয়া উঠান

খড়ের চাল

কোঠা ঘর

পায়রার টঙ

শিরিষ গাছ

বুড়ি মা

ছুটু কাকা

মাস্টারমশাই

হীরামতি

ধসা ঘরে উই ঢিবি

ফনিমনসা

ঝিঝি পোকা

ধাড়ী উঁদুর

শাঁখমলা চিতি

চন্দ্রবোড়া

শ্মশানে বাবলা গাছের সারি

দিন-দুফরে যম কাকের ডাক

দমকা হাওয়া ।

ইসব দেখে ভিতরটা গেল শুকাই

জলতিষটা লাগলো খু উব

গেলম পাহাড় কোলে ঝরণার কাছে

বললেক , “আর জল পাবে কুথা

লদীর বাঁধনে যত ঝরণা সব গেছে মরে “,

বললম ,তবে একটা গাছতল দাও

ছায়াতে বসে এ কটু জিরাবো,

বললেক

আখন ত সব শুকনো ডাঙা

যত গাছ ছিল সব কাঠ হইয়ে

চালান চলে গেছে ,

আমি ঝাঁঝাঁ দুফরে

চুপচাপ দাঁড়াই

মাথা হেঁট ,

গেলম মানুষের কাছে

ধুলা মাখা হাঁটুর উপরে

ছ হাতা কাচা পরা মানুষ।

তারা বললে ক,

দেখা করার সময় পালে তাহালে

তুমার কত কাজ

দিনরাত কত কাজ তুমার।

বললম আর বল না হে

শরম লাগছে

আস্য একবার কোলাকুলি করি ধুলা মাটির গন্ধ শুঁকি।

বললেক , না না আমাদে গায়ে গতরে ধুলা লাগে আছে

তুমার অমন সাহেবী কোট সুট বুট সে আবার ময়লা হবেক কেনে

আখন কী আর তুমার গায়ে ধুলা লাগা চলে।

কথা শুনে বড় দুখ পালম

সেই দুখে ভালে দেখলম

আমার ধসা ঘরের পাশে মস্ত বড় একটা শিমুল গাছ হইছে

তাতে থোকা থোকা ফুল ফুটেছে

দেখতে কিন্তু দারুণ

তবে তার গন্ধ নাই এতটুকুন

বুক মোচড়ানো দম ফেলে

আমি সেদিকে ভালেই থাকি

ভালতে ভালতে একসমতে গাছ তলাতে খুলে ফেললম সব

তখন উয়ারা বললেক,

আস্য।

আমি কাছকে গেলম

বললেক, তুমাকে আমরা টিপ পরাব একটা।

বলি ,কীসের টিপ হে ?

বলল, সে পরে বলছি আগে তুমি চোখ মুঁজ অ

আমি চোখ মুঁজলম,

কি একটা সর সর করে উঠল আমার কপালে যেমন এক ঝাপট সোঁদা

মাটির গন্ধ ওঠা বাদল নামল ঝমঝম করে,

বলল, উ কিছু লয়

আমরা তুমাকে লাল ধুলার টিপ পরালম একটা ।

বললম ধুলার টিপে এত খুশবয় উঠে

এত বাস উঠে !

কথা শুনে উয়াদে কী

ফুর্তি ,

বললেক,ই বাস্যা কী

সুন্দর মানাইছে

হেই দেখঅ

মিছা বলছি নাই

তুমাকে রাজার পারা লাগছে

ধুলার টিপ পরে

তুমাকে একবারি রাজার পারা লাগছে ।

পরে পড়বো
৯৪
মন্তব্য করতে ক্লিক করুন