“তোমাদের ওদিকে

সাঁওতাল মেয়ে পাওয়া যায়

অরিজিনাল সাঁওতাল মেয়ে

আমার ছবিতে লাগবে

ডকুমেন্টারি ছবি”

কথাগুলান বলেছিলেন কইলকাতার

টিভি সেন্টারের মেডাম,

আমি কিছু বুঝতে নাই পারছিলম

মেডাম বললেক, আমার কিন্তু

অরিজিনাল জিনিস চাই।

আমি শুদালম, জিনিস !

জিনিস আবার কি বঠে ?

মেডাম বললেক, তোমাদের গ্রামের মানুষদের নিয়ে

এই এক ঝামেলা

তোমরা সভ্য দুনিয়ার কোনো কথাই বোঝোনা।

তার ক’দিন পরে একদিন এক ফাগুন মাসের দুফরে

সবুজ শাল বনের পথে

লাল ধুলা ছুটাই

মেডামের গাড়ি আল্য ছুটে,

গাঁয়ের উপরকুলি আর নামকুলির মাঝখানে

মোরগ লড়াইয়ের ফাঁকা ডাঙ্গা

শালমোহল আর পলাশ ফুলে ঘেরা

লাল কাঁকরা ডাঙ্গা

সেখানে শুটিং এর জায়গা

তখন ভরা দুফরবেলা

ধামসা মাদলের তালে

তখনি বাজে উঠল

বাহা গানের সুর,

“বাহা বঙ্গায়ে মুলুয়েনা

সারজম দারে রে

সারজম দারে”

মেডাম হঠাৎ নাচ থামাই চেঁচাই উঠলেক,

” বোগাস বোগাস

এই তোমার নাচের মেয়ে

এই তোমার সাঁওতাল মেয়ে”

বললম, কেনে কী হইছে মেডাম ?

মেডাম বললেক, “তোমাকে আমি কি বলেছিলাম

মনে নেই

আমার অরিজিনাল জিনিস চাই

ওই দেখো ওই যে মেয়েগুলো

খালি গায়ে হাটুর উপরে শাড়ি পরে

শুটিং দেখছে ভিড় করে

ওরাই হল অরিজিনাল সাঁওতাল মেয়ে”

চেঁচামেচি শুনে সূরজমনি আল্য ছুটে,

সাঁওতাল গাঁয়ের সে পঞ্চায়েতের মেম্বার

শাওলা রঙের জুয়ান মেইয়া

চোখ দুটা খুউব সুন্দর

ভারী মিষ্টি দেখতে সূরজমনি,

মেডামকে সে শুদালে,

“কী হইছে

ও দিদিমণি কী হইছে ?”

মেডাম তাকে কাছকে ডাকে বুঝাল,

“তুমি তো জানো

সাঁওতাল মেয়েরা গায়ে কোনো ব্লাউজ দেয় না

তোমাদের আদিবাসী মেয়েদের

এটাই তো আদি বেশ

তাই এক কাজ করো

ওদের গায়ের ব্লাউজ গুলো খুলে ফেলতে বলো”।

মেডামের কথা ফুরাতে না ফুরাতেই

সেই দুদস্যি দুফরে

মোরগ লড়াইয়ের মাঠে

সূরজমনির দুচোখে

চিয়াগাড়ার সূয্যি উঠল ঝলসে

নাচের দলের মেইয়াদের দিকে তাকাতে যাইয়ে

সে দেখল,

ই কি স্বপুন না সত্যি

কাল কাল মানুষজনের ভিড়ের মাঝে

খালি গায়ে তীর ধনুক হাতে

টান টান হইয়ে

দাঁড়াই আছে তার ভালবাসার মরদ

শিকার পরবের তীরের ফলার চায়েও

ধারালো সেই মরদ

সে কি ইসব দেখে শুনে

আর দেখতে না পারে

ঠাকুরবাবার নামে শালগিরা পাঠাই

ডাক দিয়েছিল জঙ্গলমহলে,

“দেলায়া বিরিদ পে

দেলায়া তিঙগুন পে”।

“সূরজমনি

ও সূরজমনি”

মেডাম আবার ডাকে উঠল

মেডাম আবার বুঝাতে চাইল

“দেখো অন্য কিছুনা

আমি শুধু

ওদের গায়ের ব্লাউজগুলো খুলতে – – –

ব্যাস এইটুকুনি একটুন কথা

সে কথা শেষ হতে না হতেই

সূরজমনির বুকে জমাট বাঁধা হুলের বারুদ

দাও দাও করে উঠল জ্বলে

হাতে ধরা ছিল মেডামের দেওয়া কন্টাক্ট ফরম

সূরজমনি সেটা কুটি কুটি করে ছিড়ে

মেমসাহেবের মুখে দিলেক ছুঁড়ে

বললেক,

” যা- যা তুরা চল্যে যা

তুরা আমাদিকে বহুত লাচাইছিস

তুদের লাচ আমরা আর লাচব নাই”।

বিলাতি চশমা চোখে

মাথায় দামি টুপি পরা মেমসাহেব

বার্বি ডল পুতুলের মতন

শুটিংয়ের দলবল লিয়ে মোরগ লড়াইয়ের মাঠে

থ হইয়ে দাঁড়াই ।

তখেন বলা নাই কওয়া নাই

ভগনাডিহির চুনু মুর্মু র চার দামাল ছেল্যা

সিধু, কানু, চাঁদ, ভৈরব

কুথায় ছিল কে জানে

তারা ভিড় ঠেলে

গাঁ গেরামে র আদিবাসী মানুষদের সামনে দাঁড়াই

আকাশ বাতাস লদী পাহাড় কাঁপাই

আচকা উঠল গাঙাই

“নুসৌসাবোন ,নওয়ারাবোন চেলে হ বাকো তেঙগোন,

খাঁটি গেবোন হুল গেয়া হো

খাঁটি গেবোন হুল গেয়া হো”

……………

“আমরা নিজেরাই বাঁচব

কেউ আমাদের পাশে দাঁড়াবে না

আমরা সত্যিই বিদ্রোহ করব

আমরা সত্যিই বিদ্রোহ করব”

পরে পড়বো
৫৭
মন্তব্য করতে ক্লিক করুন