দেবব্রত সিংহ

কবিতা - মেয়ের মতো

দেবব্রত সিংহ

আমার নাম ?

ববিতা মন্ডল।

বয়স ?

ন’ বছর।

বাড়ি ?

দমদম ক্যান্টনমেন্টের মাঠকল এর বস্তি।

এখানে ?

দিদিমনির ফ্ল্যাটে থাকতাম

কাজ করতাম।

কী কাজ ?

কাজের লোকের কাজ।

দাদাবাবু দিল্লিতে

দিদিমণি কলকাতার আপিসে

ঘরে এগারো মাসের বাচ্চা

আমি সব সামলে দিতাম

বাচ্চা আগলাতাম

তাকে নাওয়াতাম

খাওয়াতাম

পটি পাল্টে দিতাম

এঁটো বাসন মেজে দিতাম

রান্নাঘরে মাসির সঙ্গে হাত লাগাতাম

এমনকি রাতের বেলা দিদিমনির পা টিপে দিতাম

তবু কেমন মেরেছে দেখো

স্কেল বাড়ি দিয়ে মেরেছে

পাশের ফ্ল্যাটে শুনতে পাবে বলে

জলের কল খুলে দিয়ে মেরেছে

আমার মুখের দিকে তাকিয়ে দেখো

কেমন বাড়ি মেরেছে এলোপাথাড়ি

আমার গালে,

কপালে,

চিবুকে,

কেমন দাগ বসিয়ে দিয়েছে দেখো।

মারল কেন অমন করে ?

কী করেছিলে তুমি ?

চুরি।

কী চুরি ?

বিস্কুট।

বিস্কুট ?

খিদে পেয়েছিলো খুব

রান্নাঘরের কৌটোতে ছিল বিস্কুট

তাই ফেলেছিলাম খেয়ে।

বিস্কুট খাওয়াতে এমন মার ?

মারের চোটে হাসপাতাল

বরানগরের বড় হাসপাতাল !

কোথায়

ম্যাডাম কোথায় ?

সাতসকালে ফ্ল্যাট বাড়িতে

উটকো লোকের জটলা

সেই জটলার মাঝে

ঘিরে ধরলো মিডিয়া

ম্যাডাম বললেন,

” কী বলছেন উল্টাপাল্টা

আমি তো ওকে মারিনি

শুধু ভয় দেখিয়েছি মারের,

আজ না হয় চুরি করেছে বিস্কুট

কদিন পরে ওই নেবে নেকলেস।”

-কিন্তু ম্যাডাম

ন’বছরের নাবালিকাকে

কাজের লোক হিসেবে বাড়িতে রাখাটা তো অপরাধ

দেশের দণ্ডবিধি অনুসারে

নাবালিকা পরিচারিকা রাখা

দণ্ডনীয় অপরাধ ।

” নাবালিকা পরিচারিকা ?

সে আবার কি!

কে নাবালিকা ?

কে পরিচারিকা ?

আমি তো কাজের লোক হিসেবে রাখিনি ওকে।

তাহলে ?

রেখেছিলাম মেয়ের মতো

আমি ওকে

মেয়ের মতো করেই রেখেছিলাম।

পরে পড়বো
১১৫
মন্তব্য করতে ক্লিক করুন