দেবব্রত সিংহ

কবিতা - মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন

দেবব্রত সিংহ

কালকের কাগজের খবরটা কি দেখেছেন স্যার

দু’একটা চ্যানেলেও দেখিয়েছে খবরটা

ছেলেটাকে যে কি বলব কিছু খুঁজে পেলাম না

আসলে ভোট এলে ভোটের সময়

কাগজ পড়া আর টিভি দেখা

এই দুটো কাজ পুরোপুরি বন্ধ থাকে আমার

নেতাদের ওই ভুরিভুরি মিথ্যে

নেতাদের ওই মিথ্যে নিয়ে মিডিয়ার মার্কেটিং

এসব দেখতে দেখতে বিরক্ত হয়ে

সব বন্ধ করে দিয়েছি আমি

ছেলেটা বললে, কি বলবো স্যার

সোমবার মাঝরাতে

বাবাকে ভর্তি করেছিলাম হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে

আমাদের মহানগরীর সরকারি হাসপাতালের

করোনা ওয়ার্ডে

ফোনটা এলো বুধবার বিকেলে পৌনে চারটায়

বাবার ফোন

ভীষন হাঁপাতে হাঁপাতে বাবা বললেন

“আমার অক্সিজেনের নল টা খুলে গেছে

এদের বারবার বলছি

অনুরোধ করছি

কেউ আসছে না

আমার বেডের কাছে কেউ আসছে না

আমি আর পারছি না রে সোহম

আমি মরে যাচ্ছি”

আপনি বলুন স্যার

এরকম একটা ফোন পেয়ে

আমি কি থাকতে পারি বাড়িতে

সঙ্গে সঙ্গে ছুটে এসেছি হাসপাতলে

তবু ওরা আমাকে ঢুকতে দিলে না

ওরা আমাকে আটকে দিলে গেটে

আপনাকে কি বলবো স্যার

আমি হাত জোড় করে ওদের বলতে চাইলাম কথাটা

ওরা কেউ শুনতে চাইলে না

তবু ছাড়িনি আমি

চিৎকার করে বলেছি,

“বাবা মারা গেছেন না বেঁচে আছেন

সেটুকু জানার অধিকার তো আছে আমার

একজন সন্তানের সেটুকু জানার অধিকার আছে”

তখন ওরা আমাকে অনুমতি দিলে ভিডিও কলের

আমি দেখলাম

প্রায় অচৈতন্য অবস্থায়

বেডের একপাশে

শুয়ে আছেন বাবা

মাথাটা ঝুঁকে পড়েছে একদিকে

কেউ নেই

ধারে কাছে কেউ নেই

তবু আমার ফোনটা পেয়ে

বাবা একবার তাকালেন আমার দিকে

শুধু একবার তাকালেন

সে যে কি করুণ দৃষ্টি স্যার

সে যে কি অসহায় দৃষ্টি

সে আমি সারাজীবন পারবো না ভুলতে ।

তারপর ?

তারপর আর কিছু নেই স্যার

তারপর আর কিছু নেই

আপনি আশ্চর্য হবেন শুনলে

আমার যখন ওই মানসিক অবস্থা

তখন আমাকে ঘিরে ধরে

হাসপাতালের কয়েকজন কর্মী

রীতিমতন শাসাতে আরম্ভ করে দিলে

কেন আমি ফোন দিয়েছি

বাবার কাছে

কেন আমি ফোন দিয়েছি

একজন বৃদ্ধ করোনা রোগীর কাছে

আপনি শুধু এই টুকুই লিখে দেবেন স্যার

এর বেশি কিছু লিখবেন না

কেননা সবার উপরেই একটা চাপ আছে শুনেছি

তাই এ নিয়ে মিডিয়ার কাছে

কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ

মন্তব্য আপনিও করবেন না

শুধু একটা কথা লিখে দেবেন স্যার

একটা কথা লিখে দেবেন

বাবা কিন্তু বাঁচতে চেয়েছিলেন

করোনার সঙ্গে লড়াই করে

বাবা চেয়েছিলেন বাঁচতে।

পরে পড়বো
৮০
মন্তব্য করতে ক্লিক করুন