ছেলেটির নাম বাহার নয়তো বাহারুল
আশিক নয়তো সাদিক
আলম নয়তো আমাল
যেকোনো নামেই ডাকতে পারেন তাকে
সে বলেছিল আমার আসল নামটা
আপনি বলবেন না স্যার
কাউকে বলবেন না
শুধু ঘটনাটা শুনুন
সেদিন যা ঘটেছিল সব বলছি আপনাকে,
তখন সবে পার হয়েছে সন্ধ্যেটা
মসজিদের আজান শেষ হয়েছে সবে
তাহমিনা উনুন জ্বেলে কাঁচা ধোঁয়ায়
ভাত বসিয়েছে রাতের
আমি গঞ্জের বাজারে রুহুল মিয়ার দোকানে
মাল ফেলে দিয়ে
ভ্যান চালিয়ে
সেই মাত্র ঢুকেছি ঘরে
তখনই শোনা গেল শোরগোল টা
তার সঙ্গে চিৎকার চেঁচামেচি কান্নাকাটি
অন্ধকারে মানুষজনের এদিক-ওদিক ছোটাছুটি
বাঁশবাগানে পুকুর পাড়ে মাঠের ওদিকে
যে যেদিকে পারছে ছুটছে ।
কারা ছুটছে
কেন ছুটছে
সে সব কিছু বুঝে ওঠার আগেই
নারাণ মাস্টার হাঁপাতে হাঁপাতে
বউ ছেলে মেয়ে নিয়ে সটান আমাদের উঠানে
বললেন,”বাঁচা রে বাপ
বাঁচা আমাদের”।
আমি দেখেশুনে গেছি হাঁ হয়ে
হঠাৎ হলটা কি রে বাবা
তারপর ও পাড়ায় জ্বলতে থাকা আগুন দেখে
যা বোঝার সব বুঝে গেছি
তখন আর দেরি করিনি
এক মুহূর্তও করিনি দেরি
মাস্টারের সঙ্গে তার বউ ছেলেমেয়েকে
ছোট ঘরটায় ঢুকিয়ে দিয়ে
বাইরে থেকে তালা মেরে দিয়েছি
কি বলবো স্যার আপনাকে
ঠিক তখুনি ছুটে এলো ওরা
মশাল হাতে ভোজালি হাতে ছুটে এলো
অন্ধকারে উঠানে তখন একা দাঁড়িয়ে আমি
আমাকে দেখে বলে উঠলো,
“ও চাচা তোর ঘরে যারা ঢুকেছে
তাদের বার করে দে”
বললাম, আমার ঘরে ঢোকে নি কেউ,
তখন ওরা বললে,
“দেখ এখনো বলছি বার করে দে
নইলে তোকেও এখানে কুপিয়ে রেখে যাব।”
আমি বললাম, দেখ বাপ আমার কথা শোন,
আল্লার কিরে বলছি
আমার ঘরে কেউ ঢুকে নাই
কেউ ঢুকে নাই আমার ঘরে,
তারপর কি জানি কি বুঝলে ওরা
তখনই গেল চলে।
তারপর রাতের অন্ধকারে তারা ফুটল আকাশে
তারপর অন্ধকার পেরিয়ে আলো ফুটলো ভোরের
ভোরের আলোয় গ্রামে পুলিশ গাড়ি
বেলা বাড়লে টিভি ক্যামেরা
নেতা-মন্ত্রী সব
পোড়া ছাইয়ের গাদায় সব হারানো মানুষের কান্না
পূনর্বাসনের সান্ত্বনা
তারপরে সব শান্ত
গোটা গ্রাম শান্ত।
শুধু আমি একা
একা আমি অশান্ত
যতই হোক আল্লার নামে মিথ্যা বলেছি
তার কাছে আমি মিথ্যাবাদী
আব্বা বলতো,” মিথ্যা বললে গুনাহ হয়
কখনো মিথ্যা বলবি না”
আমি সেই থেকে খুব কষ্টে আছি স্যার
আপনি বলুন
আমি কি মিথ্যাবাদী
আমি কি সত্যি মিথ্যাবাদী ?
মন্তব্য করতে ক্লিক করুন