ফারহান নূর শান্ত

কবিতা - পিচঢালা পথে

ফারহান নূর শান্ত

পিচঢালা পথে হেটে বেড়ালে
অনেক জীবনের সন্ধান মেলে, মেলে কিছু গল্প।
বাঁচার লড়াইয়ের প্রাত্যহিক দৃশ্যপট জুড়ে
আশ্রিত সেসব গল্প।
ভালো লাগে বেশ,
কখনো চোখ ফেরানোও যায় না।
এই দেখি,
অঝোর ধারায় বৃষ্টি এলো বলে,
বাতাস বইছে বেশ,
উড়ছে ধুলো, দেয়ালে শুকোতে দেয়া কাপড়।
ছোট্ট শিশুর খেলনা গাড়ি, লজেন্সের প্যাকেট।
তড়িঘড়ি করে গোছানো শুরু হয়ে যায় ফুটপাতে বাধা
একটা ছোট্ট সংসার।

ঝড়বৃষ্টি কি অন্ধ ?
ওদের দেখতে পায় না বুঝি!
গোটা পৃথিবীর এতো জায়গা ছেড়ে, ওদের
অস্থায়ী সংসারেই নজর পড়লো।
আরেকটু সময় দিলেও তো পারতো।

গতমাসে বাসায় কাজ করে কিছু পয়সা জমিয়েছিলো
শিশুর মা,
বাবা এটা ওটা বিক্রি করে
কোনো রকমে রোজকার বাজার সদাই কেনার ব্যবস্থা করতো।
সঞ্চয় করার সুযোগই বা কোথায় তার?
দিন এনে দিন খাওয়ার মতো আয়।

মাথার ওপর এত বিশাল আকাশ থাকার পরও
সে আকাশের বৃষ্টিই আজ ভোগাচ্ছে তাদের।
রান্নার হাড়িতে জমে যায় বৃষ্টির জল,
যে থালায় গতরাতে ভাত ডালের মাখামাখি জমে ওঠেনি
সে থালায় ধুলো সমেত জল গড়িয়ে পড়ছে আজ।

এমনিতেই আমরা, মানুষেরা পৃথিবীর অস্থায়ী বাসিন্দা
তবুও যেটুকু বেঁচে থাকার মতো করে, ঠাঁই খুঁজে নিয়ে
চলতে থাকি জীবনের যাত্রায়,
সেটুকুও কেড়ে নেয়া হলে, বাঁচার সাধটাই বা থাকে কোথায় ?

ঝড় থেমে গেলে ওরা ওদের সংসার গুছিয়ে নেয়,
একটা ভ্যানগাড়িতে করে,
পা দুলিয়ে ছোট্ট শিশুটা লজেন্স
খেতে খেতে নতুন ফুটপাতের সন্ধানে হেসে হেসে চলে যাচ্ছে।

নতুন ফুটপাত, খেলনা গাড়ি চালানোর নতুন রাস্তা,
সেকি আর জানে ফুটপাত যতোই বদলানো হোক,
ঝড়বৃষ্টির হানা ওদের জীবন থেকে যাবেনা।
তবুও ছুটে চলা, বাঁচতে হবে।

দূর থেকে ঝাপসা হয়ে আসে,পুরোনো ফুটপাত
ল্যাম্পপোস্ট থেকে উড়ে যায় ভেজা পাখি,
শিশুর সে’কি আনন্দ পাখির ওড়া দেখে।
ওর গালের ওপর দু’ফোটা বৃষ্টির জল এসে পরে,
ফোকলা দাঁতে হেসে দিয়ে আকাশের দিকে তাকায় সে।

এটুকু দেখা শেষেই, আমি বাড়ির পথে হাটা দিলাম।
একটু হাসলাম, একটু তৃপ্তি এলো।
বাচ্চাটা ওভাবেই হাসুক।

১৬৫
মন্তব্য করতে ক্লিক করুন