লাশ
ফররুখ আহমদ
যেখানে প্রশস্ত পথ ঘুরে গেল মোড়,
কালো পিচ-ঢালা রঙে লাগে নাই ধূলির আঁচড়,
সেখানে পথের পাশে মুখ গুঁজে প’ড়ে আছে জমিনের ‘পর;
সন্ধ্যার জনতা জানি কোনদিন রাখে না সে মৃতের খবর।
জানি মানুষের লাশ মুখ গুঁজে প’ড়ে আছে ধরণীর ‘পর,
ক্ষুধিত অসাড় তনু বত্রিশ নাড়ীর তাপে প’ড়ে আছে
নিঁসাড় নিথর,
পাশ দিয়ে চ’লে যায় সজ্জিত পিশাচ, নারী নর
-পাথরের ঘর,
মৃত্যু কারাগার,
সজ্জিতা নিপুণা নটী বারাঙ্গনা খুলিয়াছে দ্বার
মধুর ভাষণে,
পৃথিবী চষিছে কারা শোষণে, শাসনে
সাক্ষ্য তার রাজপথে জমিনের ‘পর
সাড়ে তিন হাত হাড় রচিতেছে মানুষের অন্তিম কবর।
প’ড়ে আছে মৃত মানবতা
তারি সাথে পথে মুখ গুঁজে।
আকাশ অদৃশ্য হ’ল দাম্ভিকের খিলানে, গম্বুজে
নিত্য স্ফীতোদর
এখানে মাটিতে এরা মুখ গুঁজে মরিতেছে ধরণীর ‘পর!
এ পাশব অমানুষী ক্রুর
নির্লজ্জ দস্যুর
পৈশাচিক লোভ
করিছে বিলোপ
শাশ্বত মানব-সত্তা, মানুষের প্রাপ্য অধিকার,
ক্ষুধিত মুখের গ্রাস কেড়ে নেয় রুধিয়া দুয়ার,
মানুষের হাড় দিয়ে তারা আজ গড়ে খেলাঘর;
সাক্ষ্য তার প’ড়ে আছে মুখ গুঁজে ধরণীর ‘পর।
স্ফীতোদর বর্বর সভ্যতা-
এ পাশবিকতা,
শতাব্দীর ক্রূরতম এই অভিশাপ
বিষাইছে দিনের পৃথিবী।
রাত্রির আকাশ।
এ কোন সভ্যতা আজ মানুষের চরম সত্তাকে
করে পরিহাস?
কোন ইবলিস আজ মানুষেরে ফেলে মৃত্যুপাকে
করে পরিহাস?
কোন আজাজিল আজ লাথি মারে মানুষের শবে?
ভিজায়ে কুৎসিত দেহ শোণিত আসবে
কোন প্রেত অট্টহাসি হাসে?
মানুষের আর্তনাদ জেগে ওঠে আকাশে আকাশে।
কোন প্রবৃত্তির কাছে আজ ওরা পড়িয়াছে বাঁধা?
গোলাবের পাপড়িতে ছুড়িতেছে আবর্জনা, কাদা
কোন শয়তান?
বিষাক্ত কামনা দিয়ে কে ভরায় আকাশের রঙিন খিলান?
কার হাতে হাত দিয়ে নারী চলে কাম সহচরী?
কোন সভ্যতার?
পাঁজড়ার হাড় কেটে নৃত্য সুর জেগে ওঠে কার?
শ্রমীকের রক্তপাতে পান-পাত্র রেঙে ওঠে কার?
কোন সভ্যতার?
মানুষ তোমার হাতে করিয়ছে কবে আত্মদান,
তারই শোধ তুলে নাও হে জড়-সভ্যতা শয়তান।
শিশুর শোণিত হেসে অনায়াসে করিতেছে পান,
ধর্ষিতা নারীর দেহে অত্যাচার করিছ অম্লান,
জনতার সিঁড়ি বেয়ে উর্ধ্বে উঠি অতি অনায়াসে
তারে তুমি ফেলে যাও পথ-প্রান্তে নর্দমার পাশে।
জড়পিন্ড হে নিঃস্ব সভ্যতা।
তুমি কার দাস?
অথবা তোমারি দাস কোন পশুদল।
মানুষের কী নিকৃষ্ট স্তর।
যার অত্যাচারে আজ প্রশান্তি; মাটির ঘর: জীবন্ত কবর
মুখ গুঁজে প’ড়ে আছে ধরণীর ‘পর।
সুসজ্জিত-তনু যারা এই জড় সভ্যতার দাস,
যাদের পায়ের চাপে ডুকরিয়া কেঁদে ওঠে পৃথিবী, আকাশ,
তারা দেখে নাকো চেয়ে কী কলুষ দুর্গন্ধ পুরীষে
তাদের সমগ্র সত্তা পশুদের মাঝে চলে মিশে।
কক্কুর, কুক্কুরী
কোন ব্যাভিচারে তারা পরস্পর হানিতেছে ছলনার ছুরি,
আনিছে জারজ কোন মৃত সভ্যতার পদতলে।
উরুর ইঙ্গিত দিয়ে তাদের নারীরা আজ মৃত্যুপথে চলে,
মানুষের পথ ছেড়ে বহু নিম্নে মৃত্যুর অতলে।
তাহাদেরি শোষণের ত্রাস
করিয়াছে গ্রাস
প্রশান্তির ঘর,
যেথা মুখ গুঁজে আছে শীর্ণ শব ধরণীর ‘পর।
হে জড় সভ্যতা।
মৃত-সভ্যতার দাস স্ফীতমেদ শোষক সমাজ।
মানুষের অভিশাপ নিয়ে যাও আজ।
তারপর আসিলে সময়
বিশ্বময়
তোমার শৃঙ্খলগত মাংসপিন্ডে পদাঘাত হানি
নিয়ে যাব জাহান্নাম দ্বার-প্রান্তে টানি;
আজ এই উৎপীড়িত মৃত্যু-দীর্ণ নিখিলের অভিশাপ বও;
ধ্বংস হও
তুমি ধ্বংস হও ।
কালো পিচ-ঢালা রঙে লাগে নাই ধূলির আঁচড়,
সেখানে পথের পাশে মুখ গুঁজে প’ড়ে আছে জমিনের ‘পর;
সন্ধ্যার জনতা জানি কোনদিন রাখে না সে মৃতের খবর।
জানি মানুষের লাশ মুখ গুঁজে প’ড়ে আছে ধরণীর ‘পর,
ক্ষুধিত অসাড় তনু বত্রিশ নাড়ীর তাপে প’ড়ে আছে
নিঁসাড় নিথর,
পাশ দিয়ে চ’লে যায় সজ্জিত পিশাচ, নারী নর
-পাথরের ঘর,
মৃত্যু কারাগার,
সজ্জিতা নিপুণা নটী বারাঙ্গনা খুলিয়াছে দ্বার
মধুর ভাষণে,
পৃথিবী চষিছে কারা শোষণে, শাসনে
সাক্ষ্য তার রাজপথে জমিনের ‘পর
সাড়ে তিন হাত হাড় রচিতেছে মানুষের অন্তিম কবর।
প’ড়ে আছে মৃত মানবতা
তারি সাথে পথে মুখ গুঁজে।
আকাশ অদৃশ্য হ’ল দাম্ভিকের খিলানে, গম্বুজে
নিত্য স্ফীতোদর
এখানে মাটিতে এরা মুখ গুঁজে মরিতেছে ধরণীর ‘পর!
এ পাশব অমানুষী ক্রুর
নির্লজ্জ দস্যুর
পৈশাচিক লোভ
করিছে বিলোপ
শাশ্বত মানব-সত্তা, মানুষের প্রাপ্য অধিকার,
ক্ষুধিত মুখের গ্রাস কেড়ে নেয় রুধিয়া দুয়ার,
মানুষের হাড় দিয়ে তারা আজ গড়ে খেলাঘর;
সাক্ষ্য তার প’ড়ে আছে মুখ গুঁজে ধরণীর ‘পর।
স্ফীতোদর বর্বর সভ্যতা-
এ পাশবিকতা,
শতাব্দীর ক্রূরতম এই অভিশাপ
বিষাইছে দিনের পৃথিবী।
রাত্রির আকাশ।
এ কোন সভ্যতা আজ মানুষের চরম সত্তাকে
করে পরিহাস?
কোন ইবলিস আজ মানুষেরে ফেলে মৃত্যুপাকে
করে পরিহাস?
কোন আজাজিল আজ লাথি মারে মানুষের শবে?
ভিজায়ে কুৎসিত দেহ শোণিত আসবে
কোন প্রেত অট্টহাসি হাসে?
মানুষের আর্তনাদ জেগে ওঠে আকাশে আকাশে।
কোন প্রবৃত্তির কাছে আজ ওরা পড়িয়াছে বাঁধা?
গোলাবের পাপড়িতে ছুড়িতেছে আবর্জনা, কাদা
কোন শয়তান?
বিষাক্ত কামনা দিয়ে কে ভরায় আকাশের রঙিন খিলান?
কার হাতে হাত দিয়ে নারী চলে কাম সহচরী?
কোন সভ্যতার?
পাঁজড়ার হাড় কেটে নৃত্য সুর জেগে ওঠে কার?
শ্রমীকের রক্তপাতে পান-পাত্র রেঙে ওঠে কার?
কোন সভ্যতার?
মানুষ তোমার হাতে করিয়ছে কবে আত্মদান,
তারই শোধ তুলে নাও হে জড়-সভ্যতা শয়তান।
শিশুর শোণিত হেসে অনায়াসে করিতেছে পান,
ধর্ষিতা নারীর দেহে অত্যাচার করিছ অম্লান,
জনতার সিঁড়ি বেয়ে উর্ধ্বে উঠি অতি অনায়াসে
তারে তুমি ফেলে যাও পথ-প্রান্তে নর্দমার পাশে।
জড়পিন্ড হে নিঃস্ব সভ্যতা।
তুমি কার দাস?
অথবা তোমারি দাস কোন পশুদল।
মানুষের কী নিকৃষ্ট স্তর।
যার অত্যাচারে আজ প্রশান্তি; মাটির ঘর: জীবন্ত কবর
মুখ গুঁজে প’ড়ে আছে ধরণীর ‘পর।
সুসজ্জিত-তনু যারা এই জড় সভ্যতার দাস,
যাদের পায়ের চাপে ডুকরিয়া কেঁদে ওঠে পৃথিবী, আকাশ,
তারা দেখে নাকো চেয়ে কী কলুষ দুর্গন্ধ পুরীষে
তাদের সমগ্র সত্তা পশুদের মাঝে চলে মিশে।
কক্কুর, কুক্কুরী
কোন ব্যাভিচারে তারা পরস্পর হানিতেছে ছলনার ছুরি,
আনিছে জারজ কোন মৃত সভ্যতার পদতলে।
উরুর ইঙ্গিত দিয়ে তাদের নারীরা আজ মৃত্যুপথে চলে,
মানুষের পথ ছেড়ে বহু নিম্নে মৃত্যুর অতলে।
তাহাদেরি শোষণের ত্রাস
করিয়াছে গ্রাস
প্রশান্তির ঘর,
যেথা মুখ গুঁজে আছে শীর্ণ শব ধরণীর ‘পর।
হে জড় সভ্যতা।
মৃত-সভ্যতার দাস স্ফীতমেদ শোষক সমাজ।
মানুষের অভিশাপ নিয়ে যাও আজ।
তারপর আসিলে সময়
বিশ্বময়
তোমার শৃঙ্খলগত মাংসপিন্ডে পদাঘাত হানি
নিয়ে যাব জাহান্নাম দ্বার-প্রান্তে টানি;
আজ এই উৎপীড়িত মৃত্যু-দীর্ণ নিখিলের অভিশাপ বও;
ধ্বংস হও
তুমি ধ্বংস হও ।
এখন পর্যন্ত কবিতাটি পড়া হয়েছে ২৪২ বার
যদি কবিতাটা সম্পর্কে কোন অভিযোগ থাকে, রিপোর্ট করুন
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন