শিরোনাম: একটি স্বপ্ন সত্যি হওয়ার গল্প

গল্পকার: Default Avatar or Logo জুবায়ের আব্দুল্লাহ নাসিফ

আমার তো বাবা ছিলো না, ছিলো দাদা। সেদিন ঝড়ের রাতে বাবাকে আর হাসপাতালে নেওয়া গেলনা। তখন তো ছোট ছিলাম অতো–শতো বুঝতামও না আর মনেও নেই। মন জুড়ে শুধুই ছিলো দাদা। লাটিমের আবদার হোক কিংবা পাপড় সবই চাইতাম দাদার কাছে। কিন্তু হঠাৎ প্রিয় দাদাও একদিন বাজার থেকে ফিরে অসুস্থ হয়ে পড়লেন। ডাক্তারখানায় নিয়ে জানতে পারলাম তাকে ঢাকায় নিতে হবে। অন্ধকার ঠেলে এম্বুলেন্সে ফেরি ঘাটে গেলাম। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের বরুণা এলো, নাদের আলী এলো কিন্তু শীতের সেই ঘন কুয়াশার ঢেউ ঠেলে ফেরী আর এল না। পাড়ে বসেই প্রিয় দাদাকে হারালাম।

সেই দঃস্বপ্নের ঘন কালো কুয়াশা কেটে আমার জীবনে এসেছে রাঙা স্বপ্ন। সেই স্বপ্নের নাম পদ্মা সেতু। ওই সেতুর ৪১ টি স্প্যান আমার হৃদয়ের বাগানে এক একটি ফুটন্ত লাল গোলাপ। ৪১৫ টি জ্বলজ্বল বাতি যেন অন্ধকার রাতে এক ঝাক জোনাকি পোকা। সেই জোনাকি পোকার আলোয় আলোকিত হয়েছে পদ্মা, পদ্মা সেতু আর আমার মন। পদ্মা সেতু দক্ষিণবঙ্গের মানুষকে বাঁচতে শেখাবে। আর কোন এম্বুলেন্স আটকাবে না ফেরীর অভাবে। এই বাংলার আর কেউ আমার মতো দাদা হারা হবেনা।

৬.১৫ কিলোমিটারের এই সেতু আমার গল্পের প্রশস্ত পথ। আমার চিন্তা ধারার একেকটি সোপান। দক্ষিণবঙ্গের মানুষ জানে পদ্মা সেতু কি। ফেরী-ঘাটে এম্বুলেন্সে আটকে মাকে হারানো সন্তান জানে পদ্মা সেতু কি। ৩ ঘণ্টা দেরি হওয়াতে ইন্টারভিউ দিতে না পারা বেকার হিমু জানে পদ্মা সেতু কি। পদ্মার দুপারের মানুষ জানে এই সেতুর প্রতিটি স্প্যান শত আবেগ আর শত গল্পের বুক চিরে দাড় করানো হয়েছে। আমাদের এই স্বপ্ন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান চাইনা মেজন ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কন্সট্রাকশন কোম্পানির সাড়ে চার হাজার কর্মীর কষ্টের ফসল পদ্মা সেতু। নিজস্ব অর্থায়নে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকার আমাদের স্বপ্নের পদ্মা সেতু। ৬.১৫ কিলোমিটার এর এই দীর্ঘতম সেতু আমাদের গৌরব। ২৫ শে জুন ২০২২ সালে খুলে দেওয়া হয়েছে আমাদের স্বপ্ন। এই বাংলার আর কেউ আমার মতো প্রিয়জন হারা হবেনা। এই পদ্মা সেতু বাঙালিকে শেখিয়েছে স্বপ্ন দেখাতে।

এখন পর্যন্ত গল্পটি পড়া হয়েছে ২৭৯ বার
যদি গল্পটি সম্পর্কে কোন অভিযোগ থাকে, রিপোর্ট করুন
    মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন