শিরোনাম: খুনি
গল্পকার: শংকর ব্রহ্ম
খুনি
শংকর ব্রহ্ম
প্রিয়া আমার স্ত্রী। প্রিয়া রূপসী বললে কিছুই বলা হবে না। অপূর্ব সুন্দরী সে। পদ্মকলি চোখ, উন্নত ললাট, ধারালো নাসিকা, মরালী গ্রীবা, সুগঠিত বুক, ভারী পশ্চাদ্দেশ, রাজহংসী চলন। একবার দেখলে তার প্রেমে পড়বে না, এমন পুরুষ মানুষ বিরল, তা আঠারো থেকে আটষট্টি পর্যন্ত, যে কোন বয়সের কেউ, যার এখনও কোন রকম কামনা বাসনা অন্তরে বজায় আছে।
আমিও প্রিয়া-প্রেমে পাগল। প্রিয়ার রূপ সমুদ্রে হাবুডু্বু খাচ্ছি। তার জন্য সব কিছুই করতে পারি আমি, এমন কী খুন পর্যন্ত!
প্রিয়ার কোন অপরাধ আমার কাছে অপরাধ বলে মনে হয় না।
প্রিয়ার সব গুন আছে। দুর্বলতার মধ্যে একটি। সে বেশিদিন একজন কাউকে ভালবেসে থাকতে
পারে না। কিছুদিন পর পরই নতুন প্রেমে পড়ে।
আমি তা নিয়ে কিছু মনে করি না, কারণ প্রিয়ার স্বভাব আমার জানা।
প্রিয়া কারও প্রেমে পড়লে, একটু গম্ভীর হয়ে যায়। আজ ওর মুখখানা গম্ভীর দেখে ভাবলাম, হঠাৎ প্রিয়া আবার কার প্রেমে পড়ল?
আমি জানতে চাইলাম,” প্রিয়া এবার কে সে?”
লজ্জার ভান করে, প্রিয়া বলল, ও তোমাকে বলা হয়নি, সে একজন কবি।”
আমি ভাবলাম, এ তো সামান্য ব্যাপার।
নাওয়া খাওয়া ভুলে, আমি নিয়মিত কবিতা চর্চা শুরু করলাম। কিছুদিনের মধ্যেই কবি হিসাবে
আমার নাম ডাক হল। কয়েকটি পুরুস্কারও জুটে গেল, তদারকী করে। তা দেখে প্রিয়া অবাক হয়ে বলল, তুমি এত বড় কবি!
সে আমার বুকে মাথা রেখে বলল, তুমি তার চেয়েও অনেক বড় কবি, আমি তোমারই।
জয়ের আনন্দে আমি তাকে সজোরে বুকে চেপে ধরলাম।
কিছুদিন সুখেই কাটল আমার।
এরপর আবার একদিন তার গম্ভীর মুখ দেখে ভাবলাম, প্রিয়া আবার কার প্রেমে পড়ল? আমার রাগ হল না, দুঃখ হল না মোটে।
আমি জানি প্রিয়ার স্বভাব এমনই। বললাম, প্রেয়সী এবার কে সে?
প্রিয়া গর্ব করে বলল, সে একজন শিল্পী।
সেদিন থেকে, আমি একজন বড় শিল্পীর কাছে, নিয়মিত যাতায়াত শুরু করলাম। শিল্প চর্চা নিয়ে মেতে রইলাম। অনেক টাকা খরচ করে, রঙ তুলি কাগজ কিনলাম। নাওয়া খাওয়া ভুলে শিল্প চর্চা শুরু করলাম।
তারপর একদিন একাডেমিতে প্রদর্শনী করে, মেডেল পেয়ে, প্রিয়াকে দেখাতে গেলাম।
প্রিয়া দেখে, আমার গলা জড়িয়ে ধরে বলল, আর ভুল হবে না আমার। তুমিই আমার সব। আমি খুশি হয়ে মেডেলটি তার হাতে তুলে দিলাম। প্রিয়া একগাল হেসে মেডেলটি নিল। বলল, তুমি ছাড়া আর কাউকে কোনদিন ভালবাসব না আমি।
– মনে থাকবে?
আমি প্রিয়ার কপালে একটা চুমু দিলাম।
– হুমমমম্
এরপরও দফায় দফায় আমাকে হতে হয়েছে, গায়ক, নায়ক, ঘোষক আরও অনেক কিছু।
এরপরও প্রিয়া আবার প্রেমে পড়ল কার যেন, মনে সুখ নেই, সব সময় মন মরা হয়ে থাকে। তা লক্ষ্য করে আমি তাকে বললাম, এবার কে সখি?
প্রিয়ার চোখ ছলছল করে উঠল, যেন মেঘ ভেঙে বৃষ্টি নামবে এখনই। প্রিয়ার কষ্ট আমাকে অস্থির করে তুলল। প্রিয়ার গলা জড়িয়ে ধরে বললাম, এবার কে সে রূপসী?
প্রিয়ার চোখে ব্যথার ভার। সে আমার বুকে মাথা রেখে বলল, সে একজন খুনি।
– ওহ্, এই কথা। খুনি?
হাসতে হাসতে আমি প্রিয়ার গলা সজোরে টিপে ধরলাম।
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন