শিরোনাম: খুশির মেজাজ
গল্পকার: শংকর ব্রহ্ম
খুশির মেজাজ
শংকর ব্রহ্ম
” সকালে উঠিয়া আমি মনে মনে বলি
সারাদিন যেন আমি ভাল হয়ে চলি।”
সকালে ঘুম থেকে উঠতেই পংক্তি দুটি, মাথায় বিদ্যুৎ চমকের মতো ঝিলিক দিয়ে গেল। আমি মনে মনে ঠিক করলাম, আজ সারাদিন সকলের সঙ্গে ভাল ব্যবহার করব। কারও সাথেই কোনও রকম খারাপ আচরণ করব না। সবে চায়ে এক চুমুক দিয়েছি, এমন সময় বাড়িঅলা বাড়ি ভাড়ার জন্য এসে হাজির, অন্যদিন হলে মুখ ব্যাজার করে বলতাম, আর আসার সময় পান না। পরে আসুন। আজ আর তা করলাম না। তাকে হাসি মুখে বললাম, আসুন আসুন সন্যালদা। বসুন চা খান। ফেরার সময় ভাড়াটা নিয়ে যাবেন। কাজের মেয়ে, মালতিকে ডেকে আর এক কাপ চা করে এ ঘরে পাঠিয়ে দিতে বললাম। চা খেয়ে, খুব খু্শি মনে, ভাড়া নিয়ে উনি চলে গেলেন।
মালতি কাজ সেরে ফিরে যাবার আগে এসে বলল, দাদাবাবু, আমার মাইনেটা আজ দিলে খুব ভাল হতো, মেয়ের স্কুলে পরীক্ষার ফিস দিতে হবে কাল।
আমি জানি কথাটা মিথ্যে, তবু তাকে কিছু না বলে, তার প্রাপ্য পরিশোধ করে দিলাম। সেও খুশি মনে বিদায় নিল।
গিন্নি বাজারের থলিটা হাতে দিয়ে বলল, আজ একটু চাটনি করব, আমসত্ত্ব ও খেজুর এনো মনে করে। অন্যদিন হলে শুনে বিরক্ত হতাম। আজ হাসি মুখে বললাম, আর কিছু আনতে হলে, ভেবে দেখে বল? গিন্নি বলল, না আর কিছু লাগবে না।
বাজারে গিয়ে অন্যদিনে মাছঅলা, সব্জিঅলার সঙ্গে দরাদরি করে কিছুটা দাম কমিয়ে জিনিষ কিনি। আজ কিছুই তা করলাম না। যে যা দাম চাইল, সেই দামে জিনিষগুলো কিনে নিলাম। মাছঅলা ওজনে কিছুটা মারল দেখেও না দেখার ভান করে উপেক্ষা করলাম। কারণ, আজ কারও সাথে কোন খারাপ ব্যবহার করব না। মনটা বেশ চমৎকার আনন্দময় লাগছে।
মানুষের সাথে ভাল ব্যবহার করতে যে এতটা আনন্দ হয় তা আগে কখনও বুঝিনি। গিন্নির জন্য খেজুর ও আমসত্ত্ব কিনতেও ভুললাম না।
বাজার করে ফেবার পথে প্রায় দিনই কাশীনাথের
দোকানে এক কাপ চা খেয়ে বাড়ি ফিরি। আজও সেখানে এক কাপ চা খেতে গেলাম। চা খেয়ে তাকে দাম দেবার সময় সে বলল, দাদা আপনার কাছে পঁয়ত্রিশ টাকা পাওনা ছিল আগের। দেবেন আজ?
কি করে পঁয়ত্রিশ টাকা হল? অন্যদিন হলে হিসাব নিতাম।
আজ তাকে একশ টাকার একটা নোট দিয়ে টাকাটা কেটে নিতে বললাম। মুখটা তার খুশিতে ভরে উঠল।
মন্টুর দোকান থেকে এক প্যাকেট সিগ্রেট কিনে ,তাকে টাকা দিতে গিয়ে বললাম, তোর কিছু বাকী-টাকি আছে নাকি রে মন্টু, সিগ্রেটের দাম? মন্টু বলল, আগের এক প্যাকেটের দাম পাই দাদা। জানি কথাটা সম্পূর্ণ মিথ্যে। তবু ন্যাকা সেজে বললাম, বেশ কেটে রাখ , বলে তার হাতে একটা একশ টাকার নোট দিলাম। সে ও দেখলাম খুশি হলো খুব আমাকে ঠকাতে পেরে । মেজাজটা বেশ ফুরফুরে লাগছে আজ।
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন