শিরোনাম: মায়ার পৃথিবী
গল্পকার: শংকর ব্রহ্ম
মায়ার পৃথিবী
শংকর ব্রহ্ম
নতুন বছরে, আয়নায় নিজের প্রতিবিম্ব দেখে চমকে উঠলাম আমি। এ কী চেহারা হয়েছে আমার। চোখ দু’টো কোটরে বসে গেছে। চোয়ালের হনু বেরিয়ে এসেছে। চামড়া হয়ে উঠেছে খসখসে। মৃত্যুর ছোঁয়া লেগেছে যেন। শরীরটা ক’দিন ধরেই খারাপ যাচ্ছে। তবে এতটা খারাপ হয়েছে বুঝতে পারিনি। ২০২৩ সাল তবে আর কাটবে না আমার?
মায়ার পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে হবে এবার, ভাবতেই বুকের ভিতরটা হু হু করে উঠল। মনটা খারাপ হয়ে গেল। মনমরা হয়ে পড়লাম।
কিন্তু অনামিকা ! যার সাথে গাঁটছড়া বেঁধেছিলাম কত বছর আগে। কত ঝগড়া অশান্তির পরও তেত্রিশ বছর একসঙ্গে কেটেছে আমাদের। আমার অণু পাগলী, আমি মরলে তার যে কি হবে, আমি আর ভাবতে পারি না? খুব ভালবাসে, আমায় ছাড়া আর কিছু জানে না সে। খুব কাঁদবে নিশ্চয়ই। কাঁদতে কাঁদতে হয়তো চোখ লাল করে ফুলিয়ে ফেলবে।
আর কেকা? যার সঙ্গে পরিচয় তারও কয়েক বছর আগে থেকে। আমাদের বাড়ির একটা বাড়ির পরেই থাকত। সে হয়তো কোন খবরই পাবে না। দূরে কোথায় যেন বিয়ে হয়েছে যেন তার।
অনেকদিন আগে সে আমাদের বাড়িতে একটা শিউলী গাছ লাগিয়ে ছিল। তখন তার বালিকা বয়স। এখন সে গাছ এখন অনেক বড় হয়েছে। ফুলে ফুলে ভরে যায়। সকালে গাছের নীচে যেন সাদা সাদা হীরের কুচি ছড়িয়ে থাকে।
সুগগ্ধে মেতে উঠে বাতাস, জানলা দিয়ে ছুটে আসে আমার কাছে। যদি সেই গন্ধ কেকার কাছে পৌঁছে দিতে পারতাম। পারি না, তার জন্য খুব আপসোস হয় মনে মনে।
সেই শিউলিগাছটা আজকাল যুবতী নারীর মতো হাতছানি দিয়ে কাছ ডাকে আমায়, কেউ জানে না। শুধু আমি জানি।
তার নীচে কিছুদিন আগেও গিয়ে বসেছি। এখন আর পারি না। সামর্থে কুলায় না। গাছটার দিকে তাকিয়ে থাকি অসহায়ের মতো। গাছটাও যেন করুণ ভাবে তাকিয়ে থাকে আমার দিকে।
মনেহয় পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে এবার চলে যেতে হবে আমায়। আর বইতে পারছি না এই জীবনের ভার। আসুক তবে এই অসহায় ক্লান্তির পরিসমাপ্তি। তবে যেতে যেতে আমি মনে নিয়ে যাব আমার অনামিকা আর কেকার স্মৃতি, সেটাও অজানা থাকবে সকলের কাছে। শুধু আমিই জানব।
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন