শিরোনাম: পরিবর্তন
গল্পকার: আব্দুর রহমান আনসারী
কানে গুঁজে রাখা ‘আধপোড়া’ বিড়িটা আবারও ধরায় সোলেমান। সোলমান সেখ—-বিনপুরের ভাগচাষী। ‘তে-ভাগা’র দাবীতে সব ভাগচাষী, ক্ষেতমজুরদের একজোট করতে মরীয়া সে। খেতে পায়না। আধপেটা খেয়ে না খেয়ে চলে তার সাধনা। সোলেমানের কথা, শ্রেনী-বিপ্লব, শ্রেনী-শত্রু, মূল্যষতত্ত্ব সব কঠিন লাগে। চাষীরা ভালোমত বোঝেনা। বুঝতেও চায়না। তবে ফসলের তিন ভাগের এক ভাগ পেলে লাভবান হবে বোঝে। তাই তারা সোলেমানের সাথে। ——-নবতীপর বৃদ্ধ-চাষী আরসাদের চোখে সেদিনের ছবিটা আজও জ্বল জ্বল করে। তে-ভাগার দাবীতে কাছারী বাড়ী ঘেরাও। একতার সমবেত দাবীতে টালমাটাল কাছারী বাড়ী। পুলিশের ব্যা পক মার। সোলেমানকে পুলিশের বুটের লাথি মারা। তারপর পুলিশের জিপে করে তুলে নিয়ে যাওয়া। বুক কাঁপানো শিহরনের কাহিনী। রক্তে প্রতিবাদের-প্রতিরোধের নেশা জাগায়। দিন-কাল বদলেছে। সময়ের সাথে বদলেছে মানুষের জীবন। তে-ভাগার স্বপ্ন পূরন হয়নি আজও।
সোলেমান সেখ আজও আসে বিনপুরে। আগের মতই। পোড়া বিড়ি ছেড়ে বিদেশী সিগারেট ধরায়। দু’ হাতের দশ আঙ্গুলে শোভিত বর্ণময় দামী আংটি। গলায় সোনার হার। সামনে পিছনে পুলিশের গাড়ী নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। আজ সে সরকারের দাপুটে মন্ত্রী। চাষীদের বোঝায়, চাষে কিছু নাই। শিল্প চায়। শিল্পের জন্যদ চাষের জমি দিতে হবে। চাষীরা তার কথা শোনে, বিশ্বাস করেনা।
চাষীরা এককাট্টা। জমি তারা দেবেনা। সারা বিনপুর জুড়ে চাষের জমি রক্ষা কমিটি হয়েছে। হঠাৎ একদিন সোলেমানের নেতৃত্বে বিশাল পুলিশ বাহিনী ঘিরে ফেলল সারা বিনপুর। বেপরোয়া গুলি চলল। আরসাদের বুকের রক্তে ভিজে গেল মাটি। মা-বোনদের সম্ভ্রম নষ্ট হল। পঙ্গু হ’ল কত তার ইয়াত্তা নেই। গলায়-বুকে-পেটে বুলেটের ক্ষত নিয়ে বেঁচে রইল কেউ কেউ।
সোলেমানের ঠোঁটে হাসির ঝিলিক! অনুতাপ নেই! ভাগচাষী সোলেমান আগাপাশতলা পাল্টেছে নিজেকে। আজ তার নাম-ডাক খুউব। আজ আর সে খেতে না পাওয়া ভাগচাষী সোলেমান সেখ নয়।আজ সে “শেখ মুহাম্মাদ সুলাইমান হুসাইন।” হাজার লোক যাকে সেলাম ঠোকে।
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন