জীবনে প্রচুর কিছু না পেলেও যেটুকু পেয়েছে তাতেই সন্তুষ্ট অভি। তবে ক্যেরিয়ারটা গোছাতে একটু বেশি দেড়ি হয়ে গেছে । আজকাল বাড়িতে বিয়ের কথা নিয়ে ভাবছে , ওর বাড়ির লোকজন খুব বেশি। ওর ভাই এর বিয়েটা দেখাশোনা করেই হয়েছে। কিন্তু ওর জন্য ওর মা বাবা তেমন ভাবে পাত্রীর সন্ধান করেননি। প্রথম জীবনটা আসলে ও বাউন্ডুলে ছিলো।ওর অর্থনৈতিক অবস্থাটা একটু শক্তপক্ত হয়েছে, বিদেশে চাকরি করে সাথে চলে গেছে সময়ও।
আর ছুটিতে ও কোন দিনই বেশি দিন বাড়িতে থাকে নি।
তাই কোনো মেয়ের সাথে কোন সম্পর্ক আছে কিনা কিছুই বুঝতে পারিনি বাড়ির লোকজন ।
কিন্তু সবাই ধরে নিয়েছিল সম্পর্ক আছেই কারো না কারো সাথে। কারণ কলেজ জীবনে ওর অনেক মেয়ে বন্ধু ছিল। শেষ মেষ আজ খেতে বসতেই বাবা বললো-“দিয়ার বাড়ির নম্বারটা দে না একটু কথা বলবো।”
খুব সাধারণ ভাবেই অভি বললো “আজ দেখা হবে কি বলতে হবে বলে দেবো। ”
রূপা বললো ” দাদা সব কথা তো তুমি বলবে এরকম হতে পারে না, বাবা মা তোমাদের বিয়ের কথা বলবে।”
অভি হেঁচকি ওঠলো , ওর মাথায় আকাশ ভেঙে পরলো- ” তোমরা কি পাগল হয়ে গেছো? ও আমার ভালো বন্ধু”
রূপা বললো – ” ভালো বন্ধুই তো ভালো জীবন সঙ্গী হয় । তুমি বিয়ে করবে না কেন?”
বাবা বললো – ” আমাদের কি শান্তি তে মরতেও দিবি না তুই। বিয়ের কথা বললে পালিয়ে যাস কেন? তোর যে কোন বান্ধবীকে বিয়ে কর আমাদের তো কোনো আপত্তি নেই। তবে বিয়ে কর।”
অভি খাওয়া শেষ ‘ ও” ওঠে চলে যেতেই পারতো প্রতিদিনের মতো ।কিন্তু আজ কি মনে হলো চুপ করে বসলো তার পর বললো- ” আজকাল এই সোস্যাল মিডিয়া জন্য ছেলে মেয়েদের বন্ধুত্ব টা খুব সস্তা হয়ে গেছে। তোমাদের যুগে একটা মেয়ে সাথে কথা বলতে পাঁচ বছর লেগে যেতো। এখন পাঁচ মিনিট ও লাগেনা। চেনা হোক অচেনা প্রফাইল চেক করে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট দাও , একসেপ্ট করলেই কথা বার্তা শুরু।প্রশয়, ঘনিষ্ঠতা সবই হয়। কারণ সম্পর্ক গড়তে যেমন সময় লাগে না। ভাঙতেও সময় লাগে না। ব্লক করে দিলেই হলো। বিয়ে ডিভোর্স সব যেনো ড্রাইভিং লাইসেন্স এর মতো হয়ে গেছে স্বাক্ষর কর অ্যাপ্লিকেসান করো সার্টিফিকেট পেয়ে গেলেই হয়ে গেলো।”
লম্বা চওড়া ভাষণ শুনে সবাই চুপ করে গেলো। ও ঘরে থেকে বেড়াবার আগে আজ আয়নায় মুখ দেখলো হঠাৎই। ওর জুলপির কাছে কানের পাশে কয়েকটি চুল বেশ সাদা হয়ে গেছে। ওর বাড়ি থেকে বেড়িয়ে কিছুটা গেলেই মঠ । মঠের সন্যাসি গুলো সবাই নেড়া। ওদের বয়স ঠিক বোঝা যায় না। অভি মনে মনে ভাবলো নেড়া হবার এটাই এডভানটেজ বয়েস বোঝা যায় না।
কফি হাউজে ধোঁকার আগে একটা টুপি কিনলো । চৈতালি আসলো । অভি কফির সাথে স্যান্ডুইচ ওডার দিচ্ছিল। ও দিতে দিলো না। চৈতালি ওর পাশের বাড়ির মেয়ে তবু ওরা দেখা করে গোপনে । কিন্তু তাবলে প্রেম নয়। Lici এজেন্ট চৈতালি ঐ একটা দুটো পলিসি করে অভি ওর কাছ থেকে। ঐ টার্গেট পূরণ করতে। ফিক্সট ডিপোজিটের মতো। ফলে রিনুয়াল প্রিমিয়াম এর অজুহাতে যে দেখা তেমন নয়। তবু দেখা করে ওরা । আজ ঘুরিয়ে ফিরিয়ে “ও” জিজ্ঞেস করে ফেললো চৈতালি কে কবে বিয়ে করবে । চৈতালি জানালো দুই বছর পর। অভির মনে পরে গেলো ওর দুটো চুল পেকে গেছে। তবু চেস্টা করেও সরাসরি বলতে পারলো না। “তুমি কি আমায় বিয়ে করবে? “ও ওদের সম্পর্ক টা নিয়ে কিছু ই বুঝতে পারেন। আজও বিল এসেছিল ৬৯ টাকা অভি টিপস হিসেবে পুরোটাই দিয়ে দিচ্ছিলো । ওর চোখ পাকানো দেখে প্রথমে কুড়ি দিতে গিয়েও পরে, দশ টাকা দিতে বাধ্য হলো। অন্তত চৈতালি ওকে বেহিসাবি হতে দেয় না।শাসনে রাখে এটা কে ও ভালোবাসা বলে ধরে নিতে পারে না। কারণ একবার ও চৈতালি কে ভ্যালেনটাইনস ডে তে দেখা করতে চাওয়ায় বলে দিয়েছিলো ” ভুলে যেও না তুমি আমার কাকার বন্ধু।”
ও স্কুটির চাবি খুলতে যাচ্ছে চৈতালি বললো- ” নতুন স্কুটি কিনে একবার ও তো চড়তে বললে নাতো”
অভি বললো- ” তোর সময় আছে কিনা জানিনা। তাই বলি নি। ”
চৈতালি বললো- ” তোমার সাথে সময় কাটাতে আমার ভালো লাগে। তাই আমি তোমার সাথে দেখা করতে এলে হাতে সময় নিয়ে ই আসি”
অভির মনে মনে লাড্ডু ফুটিল কিন্তু আফশোস হলো বাইক কিনলো না কেন। ওর মনে যা আসে চৈতালি কে তা ও বলে দেয়। যদিও জানে না কেন এটা করে।
অভি বললো- ” জানিস আমার বুলেট কেনার ইচ্ছা ই ছিলো, তেলের যা দাম, তাই ব্যাটারির গাড়ি কিনালাম। ”
ও বললো- ” ভালো করছো। তোমাকে আমি বলেছিলাম আমার বুলেট পছন্দ, বলে কি বলছো তোমার বুলেট কেনার ইচ্ছা ছিলো! কাকিমার ভাই জানো বুলেট কিনেছেন আমাকে অনেক বার ঘুরতে যেতে বলছে আমি যায়নি। অ প্রয়োজনে খরচ করাটা আমার পছন্দ নয়। তাছাড়া যেকোনো মেয়ে স্কুটিতে বসতে চাইবে। বাইকে বসলে তোমারা তে বারবার ব্রেক মেরো কেন সব মেয়েদের সেটা জানা আছে।”
অভি বললো- “সেটা অন্য প্রসঙ্গ। কিন্তু এ পিছনের সিটে তুই প্রথম বসলি। মা অনেক দিন কালিঘাট মন্দিরে নিয়ে যেতে বলছে কাল নিয়ে যাবো।”
ও বললো ” সেটা জানি ছাদ থেকে সেই দিন দেখলাম বনি তোমাকে বলল বাসস্ট্যান্ড ছেড়ে দিতে । তুমি দিলে না। অথচ কিছুক্ষন পরেই দেখলাম তোমার পিছনে বাপ্পা দা বসে কোথাও যাচ্ছে। তবে তোমার মাকে কালি ঘাট নিয়ে গেলে আমার আপত্তি থাকতো না বোধহয়।”
সময় আজ বড়ো তাড়াতাড়ি দৌড়ে চলে গেল। যাইহোক পাড়াতে জানাজানি হয়ে যেতে পারে তাই। ওকে মঠের পিছনে ছেড়ে দিলো ও কে। মঠের জানালা দিয়ে দেখলো একটা সন্যাসি ধ্যানে বসে আছে। ঠোঁটে একটা মিষ্টি হাসির রেখা। অভি বুঝতে পারে না এই মঠ বাসিন্দা রা অতো শান্তি তে থাকে কি করে। লোকজন বলে ধর্ম একটা ব্যবসা। কিন্তু এদের তো কোনো ভক্ত নেই। দান পাত্র নেই কিভাবে চলে এটা।
আজ সোমবার সকাল। রবিবার গুলোতে কাগজ নেওয়া হচ্ছে বোধহয় আজ কাল ঐ পাত্রীর বিজ্ঞাপন এর জন্য। খুব অস্বস্তিতে পড়েছে আজ অভি। অভিও আজ একটু। বিয়ের ব্যপারে চিন্তিত। কারণ ও দেখলো ওর বুকের কয়েকটি চুল ও পেকে গেছে। ছোট বেলা থেকেই কোন প্রশ্ন ওর মনকে ব্যকুল করলে ও মঠের মহারাজ এর কাছে চলে যায়। আজও তাই করলো। রঙহীন এক পোশাক পরে কাটিয়ে দেওয়া মানুষ গুলো জীবন টা যেনো চিন্তা শূন্য রঙীন।।
মহারাজ বললো ” দেখ টেবিলের ওর একটা বই আছে নিয়ে আয়তো। ” বছর দশক আগে ওর ছাপানো একটা কবিতার বই। নিজের লেখা বই দেখে ওর মনটা খুশিতে ভরে উঠল। মহারাজ বললো” বইএর নাম রেখেছিস আদর, ছবিটাও তোর আঁকা, ফুলের ওপর প্রজাপতি। প্রজাপতি তো তোর প্রিয়, শুঁয়োপোকা কেমন লাগে”
অভি বললো- ” কাঁটা গুলো কে সবচেয়ে বাজে লাগে।”
মহারাজ বললেন” শুঁয়োপোকা থেকে প্রজাপতি হবার সময় হঠাৎ ই ও নিজেকে একা করে ফেলে। গুটি কর সারা জগত থেকে আলাদা করে নেয়। ঐ সময় ও নিজেকে জানে। সাধণা হলো নিজেকে জানা। প্রজাপতির সাথে ফুলের বন্ধুত্ব হয় কেন জানিস। ফুল কারণে অকারণে হাসে। ওর এই নিঃসার্থ হাসিই হয়তো প্রজাপতি কে আকর্ষণ করে। মৌ মাছিরা মধু সঞ্চয় করে রাখে। যদিও সেটা ওরা পরে দখল করতে পারে কিনা জানিনা। তবে প্রজাপতি ওসব করে না। আমাদের মতো নিশ্চিত ভেসে বেড়ায় আকাশে। একা হয়েও আমরা সুখী কারণ আমরা নিজেদের জানতে চেষ্টা করছি।”
অভি কথা গুলো কতোটা বুঝতে পরলো জানিনা। তবে প্রজাপতি হবার ওর বড়ো সাধ। চঞ্চল অথচ ছন্দ আছে ওর জীবনে। কিন্তু কোনো ব্যস্ততা নেই প্রজাপতির।
এখন পর্যন্ত গল্পটি পড়া হয়েছে ৫৮৭ বার
যদি গল্পটি সম্পর্কে কোন অভিযোগ থাকে, রিপোর্ট করুন
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন