সুখী হবার একটা অন্য উপায় আমি জেনে নিয়েছি ।নিজের কথা ভাবা ছেড়ে দিয়ে অন্য কথা ভাবা শুরু করলেই , সব ব্যক্তিগত দুঃখগুলো উবে যাবে কাপুরের মতো। শোভাবাজারের ওখানে একটা ngo তে নাম লিখিয়ে ফেলেছিলাম । কিছু বছর আগেই থেকেই মানুষের ভালো করা কথা ভাবণাটা আমার নেশার মতো আষ্টেপিষ্টে জরিয়ে নিয়েছিলো। তাছাড়া নিজেকে পরিচিতদের মধ্যে নিজেকে সমাজসেবী হিসেবে পরিচয় দিতে ও তো ভালো লাগে। আসলে নিজের কাজের প্রশংসা কথা শুনতে কার না ভালো লাগে।তাছাড়া বিয়ে থা করা হলো না , তাই সময় কাটাতে ও তো হবে।
ফুটপাতে মেয়েটা রান্না করে ছিলো । উস্কো খুস্কো চুলো ছেলেটা দেখলাম পাঁচিলের দেওয়ালে একটা প্রজাপতি ছবি আঁকছে লাল ইটের টুকরো দিয়ে। হাঁফ নেংটা বাচ্চা টা জিঙ্গাসা করলো ” এটা তুই কি করছিস রে নতুন বাবা?”
ছেলেটা একগাল হেসে বলল” আমি যে বাবু দের বাড়ি তে কাজ করি, সে বাড়ির শোবার ঘরে দেওয়ালে ছবি আঁকা থাকে এরকম। তাই আঁকলাম আরকি। প্রজাপতি নাকি খুব শুভ।”
মেয়েটা খ্যাঁকিয়ে ওঠলো ” মরণ কাজ কর্ম নেই, যত সব ঢং।” বললে চোখ ঘড়াতেই চোখ পড়লো, আমার ওপর। ও কাপড় চোপড় টা একটু ঠিক করে বলল” ngo বাবু আজো কি পটকা কিছু করছে ?”
আমি বললাম ” হূ পড়তে আসেছে না , শেফালী বেগমেএর ডেরার দালালি করছে।”
ও বললো” শুশুরে বাচ্চা আসুক দেখবো ওকে। হাড় মাস জ্বালালো। ঝেঁটিয়ে বিদায় করবো আজ।বাবু আরো কিছু বলবে নাকি গো আমায়?”
ওর চাহুনিটা শিকারে পশুদের মতো জ্বল জ্বল করছে, গলায় একটা নেশারু আহ্বান।
আমি তাড়াতাড়ি বেড়িয়ে এলাম। আমার লোলুপ দৃষ্টি ওর ওপর ছিলো, ধরা পড়ে গেছি। কাল ধরা পেড়ে গেলাম কলমির কাছে। ওই টুকু বাচ্চা মেয়ে , বয়সে বেড়াতে ই একটু ডাগর ডাগর হয়েছে। বলল “এভাবে জড়িয়েন না আমাকে, আমি ছোট নেই আর আমার অস্বস্তি হয়।” এখানে সব বাচ্চা কে আমি একটু আধটু চটকাই আদর করে। কিন্তু ওরটা একটু আলাদা ছিলো। সেইটা ও বুঝতে পারল। লজ্জায় মাথা কাটা যাচ্ছিলো আমার ।বুড়া বয়সে কি ভিমরতি হলো আমার কে জানে।
এ গলিতে কোন ছেলে ঢুকলে সব মেয়ে গুলো ডাকা ডাকি শুরু করে শাহরুখ খান, সালমান খান বলে। দূর ভাগ্য আমাকে কেউ ডাকে না। সবাই আমাকে সন্মান করে এখানে। এই জায়গায় নাম আজ সারা বিশ্বে কম বেশি বদনাম। কিন্তু এই জায়গাটি একসময় বেশ পবিত্র ছিলো।সোনা উল্লাস গাজী নামে এক পীর বাবার দেরা ছিলো এটা সেখান থেকে ই এই অঞ্চলের নাম সোনার গাছি। তবে আজ আমার শেষ আসা হবে তা জানতাম না।
জাহাজ কাজ করায় যে অর্থ উপার্জন করেছিলাম তা দিয়ে গ্রামে পিতৃপুরুষের সম্পতি শুধু মাত্র উদ্ধার করনি। বরংচ অনেক গুন বাড়িয়ে তুলেছি। তাই গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গদের মধ্যে আমি পরি আজকাল এ গ্রামে । ফলে কমলিকে এখানে এসতে কোন অসুবিধা হলো না। সংসারে সব কাজ কর্ম করে সবার জনপ্রিয় হয়ে গেছিলো ও। বছর পাঁচেক কোন অসুবিধায় পড়তে হয়নি। লোকজন মজা করে বলে , বাড়ির কাজের মেয়ে না ও এবাড়ির গিন্নি মা। কখন আমিও ভুলে গিয়েছিলাম ও নিষিদ্ধ পল্লী মেয়ে।
ও আমাকে বলেছিল , “আমার বিট্টু দাদা বাবু কিন্তু গতিক ভালো ঠেকছে না।কু নজর আছে গো আমাদের প্রতি।”
আমি ওর কথা বিশ্বাস করবো কি করে ,বিট্টু আমার ভাইপো । নামী হোস্টেলে রেখে আমি ওকে পড়িয়েছি। সে কিনা বাড়ির ঝিয়েদের সঙ্গে অভদ্রতা করবে! হাওয়া বদলের জন্য ঘুরতে যাওয়া টা আমার কাল হয়ে গেলো। বাড়িতে থাকে ওকে বেড় করে দেওয়া হলো। ওতো কোনো স্বতীর মেয়ে নয় ও ব্যেশ্যার মেয়ে তাই ওর উপর কেউ আক্রমন করতে পারে না। ওই প্রলুব্ধ করেছে বাড়ির ছেলেকে। কোনো এক সদস্যার ভাষা ” বুড়ো টাকে ছেড়ে কচির ছেলেটার মাথাটা খাবে এবার।”
যুক্তি আর আবেগের লড়াই হরে গিয়ে আমি হাজির আবার সেই অন্ধকার গলিতেই ওর খোজে। দরজা খুলে ই দেখলাম রূপালী র জলছবি বসে আছে খাটের উপর। ঠোঁটটা রঙিন করলেও চোখ ভরা রয়েছে জলে। আমাকে দেখে বেড়ে জলের গতি। ও আমাকে জড়িয়ে ধরলো। ও বলল -” ngo বাবু রোজ রোজ নিজেকে বিক্রি করতে পরবো না। আমি একটু একটু করে। তোমার তো অনেক টাকা তুমি কি কিনে নিতে পারো আমার বাদ বাকি দিন রাত্রি গুলো? কিংবা শুধু রাত গুলোই?”
এখন পর্যন্ত গল্পটি পড়া হয়েছে ৪৩২ বার
যদি গল্পটি সম্পর্কে কোন অভিযোগ থাকে, রিপোর্ট করুন
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন