শিরোনাম: টাকার গাছ
গল্পকার: শংকর ব্রহ্ম
টাকার গাছ
শংকর ব্রহ্ম
সেদিন ছিল বুদ্ধ পূর্ণিমা। মাঝরাতে ঘুম ভেঙে দেখি,বাইরে থৈ থৈ জ্যাোৎস্না। জানলার বাইরে দাঁড়িয়ে এক পরী। আমার দিকে তাকিয়ে মিটমিট করে হাসছে। তার চুলের রঙ নীল, চোখ দুটি মায়াবী নীল। ডানার রঙ নীল। আমি তাকাতেই, সে আমাকে হাতের ইশারায় কাছে ডাকলো। আমি জানলায় গিয়ে দাঁড়াতেই, সে কাছে এগিয়ে এলো আমার।
বলল, চলো যাবে আমার সাথে।
আমি বলরাম, কোথায়?
-আমাদের দেশে
– কি আছে সেখানে?
– গেলেই দেখতে পাবে সব
– কি করে যাব আমি, আমার তো তোমার মতোন ডানা নেই
– আমি আমার ডানায় বসিয়ে নিয়ে যাব
– বেশ যাব
আমি রাজী হয়ে গেলাম তার কথায়। তার ডানায় চড়ে গেলাম তাদের দেশে।
সেখানে সব পরীরা আমায় দেখতে এলো, যেমন আমরা চিড়িয়াখানায় জন্তু জানোয়ার দেখতে যাই, তেমন। আমায় নিয়ে তা’রা অনেক হাসি মস্করা করলো। পরে তা’রা আমাকে নিয়ে গেল তাদের রানীর কাছে। রানী আমাকে কাছে পেয়ে, গা হাত পা আলতো করে ছুঁয়ে, পরে টিপে-টিপে দেখলো।
তারপর একটা সোনার পাত্রে সোমরস পান করতে দিলো আমাকে । সেটা পান করার পর আমি ভুলে গেলাম যে আমি মানুষ। শরীরটা কেমন হাল্কা ফুরফুরে লাগছিল। মনে এলে বসন্তের জোয়ার।
পরীরা আমাকে ঘিরে নাচতে শুরু করলো। রানী হাততালি তাদের উৎসাহ দিতে লাগল। আমিও তাদের সঙ্গে নাচতে শুরু করলাম। ব্রেক ডান্স, ডিসকো ডান্স, বল ডান্স, ভাংড়া ডান্স। আরও কত রকম নাচ নেচে যে তাদের দেখালাম সে কথা বলার নয়। তারা সকলে মুগ্ধ হয়ে আমার নাচ দেখতে লাগল।
শেষে সকলেই একবাক্য স্বীকার করল যে, তা’রা কখনও তাদের জীননে এ’রকম নাচ দেখেনি। রানী খুশি হয়ে, আমাকে নিয়ে গিয়ে তার ‘রানী প্রাসাদ’ ঘুরিয়ে দেখালো। সে এক স্বর্গরাজ্য যেন।
সবকিছুই সোনার। হীরে মানিক দিয়ে মোড়ানো থামগুলো। তা’তে লতিয় উঠেছে কতগুলো লতানো গাছ। দেখতে অনেকটা মানিপ্লান্টের মতো। রানী তার থেকে একটা লতানো গাছ তুলে নিয়ে আমাকে উপহার দিলেন। তারপর নীলপরীকে ডেকে বললেন, আমাকে আমার দেশে ফিরিয়ে দিয়ে আসার জন্য।
নীলপরী তার নির্দেশ মতো আমাকে দেশে ফিরিয়ে দিয়ে গেল। সেই গাছটা আমি সঙ্গে করে নিয়ে এসেছিলাম। সেই গাছটায় এখন প্রতিদিন দু’টো করে পাতা গজায়। আর বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেই পাতাগুলো আশ্চর্যভাবে পাঁচশ টাকার নোটে রূপান্তরিত হয়ে যায়।
আমি সেগুলো নিয়ে গিয়ে, আমার দৈনন্দিন হাট-বাজার সারি। এখন আর আমার কোন অভাব নেই, দিব্যি সুখে আছি। খাইদাই, সারাদিন বগল বাজাই। কখনও ইচ্ছে হলে আবার এখানে সেখানে ঘুরে বেড়াই।
সারাদিন আমার জন্য প্রয়োজনীয় যা খরচাপাতি হয়, বাকী টাকাটা পরদিন অনাথ, দীন-দরিদ্রদের দান করে দিই। তা’তে হৃদয়ে অদ্ভুত এক আনন্দ অনু্ভব করি। শান্তি পাই মনে। আমি খুব গরীব হলে কি হবে, মনটা আমার মোটেই গরীব নয়। চালচলনও বোহেমিয়ান।
ইতিমধ্যে খবর পেয়ে গাছটা চুরি করতে কয়েকজন এসেছিল আমার বাড়িতে, কিন্তু গাছটা ছোঁয়ার সঙ্গে সঙ্গে এমন বিদ্যুৎ-শক খেয়েছে, যে তারা আর এ’মুখো হযনি ভয়ে।
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন