হাসান জামান

কবিতা - স্নেহময়ী মা

লেখক: হাসান জামান

রাজশাহী স্টেশন থেকে
বাংলাবান্ধা এক্সপ্রেস রাতের ট্রেন ছাড়তেই
মনের মধ্যে ভেসে উঠলো স্নেহময়ী মায়ের মুখ
বুকের ভেতর হু হু করে উঠলো ছেড়ে আসা গ্রাম।
মনে পড়লো সবুজ ঘাসের অন্তরালে
ঢেকে থাকা মায়ের কবর।
বর্ষার কাদা জলে সিক্ত শৈশবের স্মৃতি।
নিজ গৃহে পরবাসী ছিলেন আমার স্নেহময়ী মা।
যাঁর কাজল চোখে স্নেহের অসীম সাগরে
কৈশোরে কেটেছি সাঁতার।
বৈশাখী ঝড় কিংবা আকস্মিক দুঃখের প্লাবন
নেমে এলে এ ভাঙ্গা সংসারে
শক্ত হাতে খালি পায়ে মা খাদিজার মতন
দাঁতে দাঁত চেপে অন্ধকারে হেঁটেছেন দুর্গম পথ হৃদয়ে নতুন প্রেম ঢেলে
সাহস ও ধৈর্যের বাতি জ্বেলে তিনি দেখিয়েছেন আমাদের মঞ্জিল কত দূরে!
কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে আজো দরজার পাশে,
ডানা ভাঙ্গা কামরাঙ্গা গাছ, ওপাশে সবুজ ডুমুর
এ বর্ষায় ফুটবে কি ফুল আসবে কি পাখি
নাচবে কি কাঠবিড়ালি পেয়ারার ডালে?
সিম লাউ সবজী বাগানে মাচানতলায় উড়বে কি রঙিন প্রজাপতি লাল নীল ফড়িংয়ের ঝাঁক
আমার মায়ের জন্য কাঁদবে কি কেউ
অশান্ত শ্রাবণের বৃষ্টি ঝরা রাতে কেউ না কাঁদুক
না কাঁদুক কোন প্রিয়জন
আমার প্রেয়সী গ্রামে তুমুল বৃষ্টি নামে হয়তো বা ওরা
এই বরষায় প্রিয় মাকে করছে বিনম্র স্মরণ।
উল্লাসে হু হু করে কাঁদে বাড়ি ঘর সুখ দুখ আঙিনা উঠোন।
হুইসেল বাজিয়ে ট্রেন নিমিষেই ছেড়ে যায় স্টেশন
ছুটে চলে পরবর্তী অচেনা স্টেশনে অথবা জংশনে
বাতাসের তীব্রতা বাড়ে ট্রেনের জানালা দিয়ে
ঢুকে পড়ে শ্রাবণের ধারা আমার কাতর হৃদয়ে
বিচ্ছেদে তাঁর বিনিদ্র রাত চেয়ে থাকি অন্ধকারে আকাশের দিকে বিষন্ন মনে।
আমিও একদিন ট্রেন ছেড়ে ফিরে যাবো গ্রামে
শুয়ে থাকবো পাশাপাশি কিংবা হাটবো দুজনে।।

৩-৭-২৩ দিনাজপুর।

১০৭
মন্তব্য করতে ক্লিক করুন