দৃশ্যদগ্ধজন
দৃশ্যদগ্ধজন
যুবক অনার্য

গল্প - দৃশ্যদগ্ধজন

যুবক অনার্য
বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৫ রহস্য, স্বাধীনতা – মুক্তিযুদ্ধ

একদা আমি মরে গিয়েছিলাম তবে মরে যাওয়ার আগে আমি বেঁচে ছিলাম কিনা সে বিষয়টিও সন্দেহের উর্ধ্বে নয়।বেঁচে থাকার জন্য কিছু শর্ত থাকে- প্রচলিত মানুষেরা সম্ভবত এরকমই ভেবে থাকবেন কিন্তু আমার কাছে মনে হয় – বেঁচে থাকবার জন্য অক্সিজেন নিতে পারা, মানে শ্বাস প্রশ্বাসের বিষয়টাই প্রধান বা একমাত্র শর্ত।কিন্তু আমি তো এমন একজন অবিনাশ – আদম শুমারিতেও যার নাম গ্রন্থিত নয়,তাই আমার কথা গ্রহণযোগ্য হবার প্রশ্নই আসছে না।অই তো শুনুন, বোলছে লোকেরা -বেচেঁ থাকতে হলে লাগবে অন্ন বস্ত্র বাসস্থান।লোকেরা বোলছে -বেঁচে থাকতে হলে রিলিফ সরিয়ে ফেলতে হবে, করোনার ভুয়া রিপোর্ট বানিয়ে হাতিয়ে নিতে হবে কোটি কোটি টাকা।বোলছে লোকেরা – লাগবে ব্যালটবাক্সহীন রাজনীতি,লাগবে- মাটি মদ মাংস,আর এভাবে কতো কিছু আর‍ও কতো কতো কিছু।এসব শুনে আপনাদের কেমনটা মনে হলো বুঝতে পারবো না আমি তবে আমার মস্তিষ্কের ডান পাশ আর হৃদয়ের বাম পাশে করে উঠলো ঝিমঝিম টিম টিম।কারণ এরকম কোনোরকমের রকমফেরেই আমি বিশ্বাসী নই-বেঁচে থেকে ভোগবাদী গান টান গেয়ে টেয়ে হাওয়ায় উড়িয়ে দিতে একটা জীবন। আমি চাই- সবুজ সাজানো বাগান সোনালি ফসল রূপোলি মাছ মানুষের তরে এক মানুষীর ভালোবাসাবাসি। বেলা শেষে প্রেয়সীকে রিনিঝিনি অনুভবে বলে দেয়া – দ্যাখো, এই তো কি সুন্দর বেঁচে থাকা যেখানে অন্য কিছুরই প্রয়োজন নেই, প্রয়োজন শুধু ভালোবাসাবাসি।আমি ঠিক এরকমই ভাবি -ভেবে ভেবে ফুরিয়ে দিয়েছি দিন।

একদিন মুশফিক ভাইয়ার সংগে দেখা -বাডডার যে গলিতে একদা আমাদের কেটে যেতো কতো কতো রাত আর কতো দিন।আমি তাঁকে সর্বোসাম্প্রতিক সেই বেচেঁ থাকা নিয়েই বলতে চাইছিলাম।ভাইয়া,সিগ্রেটের শেষ টান শেষ করে জুতো দিয়ে জলন্ত তুলোটা ডলে দিয়ে বোললেন – হ্যাঁরে, অবিনাশ, তুই যেভাবে যাপন করতে চাইছিস জীবন তারই নাম – কবিতা, তারই নাম নূর হোসেনের চেতনা নিয়ে বেঁচে থাকা।

আমার চোখে জল এসে গেলো।কোনোরকম সামলে নিয়ে বলি- কিন্তু কই সেভাবে হলো নাতো থাকা!মুশফিক ভাই যিনি সমুখে তাকালেই দেখতে পান দৃশ্যের বাইরে অন্য এক গোপন দৃশ্যের বালিয়াড়ি, বোল্লেন:হ্যাপিদা’ র গানটা আছে না- “যেখানে নদী এসে থেমে গেছে। “যেদিন আমরা আবিষ্কার করে নেবো নদীর থেমে যাবার জায়গাটি,ঠিক সেদিনই তুমুল বর্ষণ হবে – তুই আর আমি বৃষ্টিতে ভিজে গিয়ে হেঁটে যেতে যেতে বুঝে নেবো – এই তো জীবন যে-জীবন একবার হেরে গিয়ে হারে নাতো আর।

মুশফিক ভাইয়ার অগোচরে জল মুছে আমি বোল্লাম -একটা ব্যানসন লাইট ধরিয়ে দাও। জীবনে অন্তত একবার ধোঁয়ার মতো উড়াতে চাই দন্ডিত জীবনের কয়েদী মরণ!

ভাইয়া কেবল আমার দিকে অবাক দৃষ্টিতে
তাকিয়ে রইলেন।সেই মুশফিক ভাই যিনি সমুখে তাকিয়ে দেখতে পান আড়াল করা দৃশ্যের আজন্ম অবয়ব।

৮৪
মন্তব্য করতে ক্লিক করুন