অনুচ্চারিত সুদর্শনা
অনুচ্চারিত সুদর্শনা
যুবক অনার্য

গল্প - অনুচ্চারিত সুদর্শনা

যুবক অনার্য
বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৫ বিরহ, ভালোবাসা

ছেলেটির পরনে ফেড জিন্স টি শার্ট পায়ে কেডস।আজ সুদর্শনার সংগে দেখা হবে শেষবারের মতো।
ঘটনা তেমন কিছুই না।প্রেম চলছিলো স্বাভাবিক গতিতেই।ছেলেটি কবিতা লিখে বেশ ভালো নামধাম কামিয়েছে।এই সময়ে কবিতা লিখে নাম ধাম হয়ে যাওয়া প্রায় অসম্ভব ঘটনা।আরও দুই একজনও আছেন যাদের নাম ওর সংগে
একসংগে উচ্চারিত হয়।এর মধ্যে একজন তো রীতিমতো ম্যাজিস্ট্রেট। চাট্টিখানি কথা নয়।ক্যারিয়ারে সফল হয়েও একজন মানুষ কবি হয়ে উঠলেন -ব্যপার টা যেনো ঠিক স্বাভাবিক নয়!
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে- অস্বাভাবিক ই বা কেনো! ছেলেটি ভেবে দেখেনি।শুধু বার বার প্রশ্নটিই জেগে উঠেছে মনের কুঠুরিতে।
সম্প্রতি একটি চ্যনেল থেকে ছেলেটির সাক্ষাৎকার নেয়া হয়েছিলো।একটি প্রশ্ন ছিলো এরকম- আপনার কবিতায় নারীচরিত্রে শুধু একটি নামই পাওয়া যায়- সুদর্শনা।আমাদের প্রশ্ন হলো: সুদর্শনা কি বাস্তবের কেউ নাকি কাল্পনিক?
এরকম একটি প্রশ্নের জন্য ছেলেটি প্রস্তুত ছিলো না।।অপ্রস্তুত অবস্থায় মুখ ফস্কে বেরিয়ে এলো- কাল্পনিক।
ছেলেটি কেনো সুদর্শনাকে বাস্তবের না বোলে কাল্পনিক বোল্লো- এ নিয়ে মেয়েটি ভয়ংকর রেগে গেলো এবং বোলেও দিলো- ” তোমার সংগে আমার আর চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়”।
কী আর করা- অনেক করেও বোঝানো গেলো না আর সরি টরির তো বেইল-ই নেই।আসলে এতো সিলি একটা ব্যপারে যে মেয়েটি এতো রেগে যাবে -এটা ছেলেটি ভাবতেই পারে নি।
আজ দেখা হবে “ফিংগার”-এ।এই রেস্টুরেন্টেই দেখা হয়েছিলো প্রথমবার।শেষবারটাও এখানেই হতে চলেছে।এটা কি কাকতালীয় কিছু! হতে পারে।তাতে কিছু যায় আসে না।
ছেলেটি আগেই পৌঁছে গেলো।সুদর্শনা এলো পাঁচ মিনিট পর।সুদর্শনা পড়েছে নীল শাড়ি নীল টিপ নীল চুড়ি নীল স্লিপার – মানে সেজে এসেছে নীল পরি হয়ে।কোনো কিছু উচ্চারণ না করেই মুখোমুখি বসে পড়লো।কিছু বোলছে না।অগত্যা ছেলাটি বোল্লো – কী অর্ডার দেবো?
সুদর্শনা: কিছু না।
: কী যে বোলো! অর্ডার তো দিতেই হবে।
: তোমার যা ইচ্ছে দাও।
ছেলেটি ওয়েটারকে ডেকে অর্ডার দিয়ে দিলো।
সুদর্শনা বোল্লো: আমার একটু তাড়া আছে।তাড়াতাড়ি করো।
:কি করবো! আমরা তো কিছু করতে আসি নি।
সুদর্শনা একটু অপ্রস্তুত হয়ে গেলো।আসলেই তো তারা কিছু করতে আসা বোলতে যা বোঝায়, তেমন কিছু তো করতে আসে নি।
বোল্লো:ওকে।তাড়াতাড়ি করতে হবে না।দেরি করো।
ছেলেটি হো হো করে হেসে উঠলো!
সুদর্শনা অবাক।এমন একটি মুহুর্তেও মানুষ হাসতে পারে! আসলে ছেলে বোলেই হয়তো পারে।
এর মধ্যে খাবার চলে এলো।
ছেলেটি:শুরু করো।প্লিজ।
সুদর্শনা: তুমি করো।
: ওকে।করছি।- কিন্তু করছি বোলেও করলো না।
সুদর্শনাও শুরু করছে না।ছেলেটি মোবাইল বের করলো।
সুদর্শনা :কী ব্যপার,খাচ্ছো না যে! খাবেনা,?
ছেলেটি : হ্যাঁ, নিশ্চয়ই। তুমি শুরু করনা,প্লিজ।অনিচ্ছা সত্বেও অগত্যা সুদর্শনা শুরু করলো।
ছেলেটি মোবাইলে মাইল্ড ভলিউমে গান ছেড়ে দিলো।রবীন্দ্রনাথের – ” যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে…”। যখন এই কলিতে আসলো- ” তারার পানে চেয়ে চেয়ে গো,নাইবা আমায় ডাকলে”।সুদর্শনার চোখ দিয়ে টপটপ করে জল পড়ছে।ছেলেটি টিস্যু দিয়ে জল মুছে দিলো।
বোল্লো: এই মেয়ে এসব হচ্ছে কী! বিদায় বেলায় কান্না কেনো! তুমি ই তো সিদ্ধান্ত নিয়েছো,তাহলে কাঁদছো কেনো!take an easy.
সুদর্শনা ছেলেটির হাত ধরে বোল্লো: আমি তোমাকে ছাড়া পারবো না অবিনাশ।তুমি আমাকে ছেড়ে যেও না,প্লিজ।
অবিনাশ মনে মনে ভাবলো: কী ব্যপার,রবি বাবুর গান শুনেই সব চেঞ্জ! ভদ্রলোক তো তাহলে যাদু জানেন! অবিনাশের এক হাজার কথায় যা হয় নি,রবীন্দ্রনাথের কয়েক লাইনে তা হয়ে গেলো! আশ্চর্য তো! কী বোলবে অবিনাশ বুঝতে পারছে না।সুদর্শনা তখোনও হাতটা ধরে আছে ।অবিনাশ হাতটা ধরে সরিয়ে দিয়ে বোল্লো:ঠিক আছে, যাবো না।কোত্থাও যাবো না।যেখানেই যাই তোমাকে নিয়েই যাবো।নরকে গেকেও তোমাকে নিয়েই যাবো,যাবে?
সুদর্শনা এইবার হেসে দিলো।বোল্লো- যাবো।তারপর বোল্লো: “তোমায় হৃদ মাঝারে রাখবো, ছেড়ে দেবো না”।
অবিনাশ:” তোমায় বক্ষ মাঝে রাখবো ছেড়ে দেবো না”।
সেদিনের মতো মিটমাট হয়ে দু’জনেই বাসায় ফিরে গেলো।
কিন্তু অবিনাশের ঘোর কাটছে না।তার সারাদিন মাথায় একটা কথাই ঘুরছে- কী আছে রবীন্দ্রনাথের গানে!
রাত ৩ টার সময় অবিনাশের মনে হলো: সম্ভবত মানুষেরা যা বোলতে চায় কিন্তু বোলতে পারে না কোনোদিন, হয়তো পারবেও না,সেই না বোলতে পারা কথাগুলিই রবীন্দ্রনাথ বোলে গেছেন।নমষ্কার গুরু।কিন্তু এই উত্তরে অবিনাশের মন ভরলো না।অবিনাশ যা বিশ্বাস করে না আজ তাই বিশ্বাস করলো: রবির গানে অপার্থিব কিছু একটা আছে যা মানুষকে তুমুল এক ঘোরের মধ্যে ফেলে দেয়, যেমন : আজ ফেলে দিয়েছিলো সুদর্শনাকে আর এখন অবিনাশকে।কিন্তু এই অপার্থিবতা কি কথায় নাকি সুরে! আসলে মনে হয় দুটোতেই।অবিনাশ মনে মনে বোল্লো: “রবীন্দ্রনাথ, তোমার না-লেখা গানটিও একটি অতিপ্রাকৃত গান”।

৬৫
মন্তব্য করতে ক্লিক করুন