দ্য কিলার আউটসাইডার – ২১
দ্য কিলার আউটসাইডার – ২১
যুবক অনার্য

গল্প - দ্য কিলার আউটসাইডার – ২১

যুবক অনার্য
শুক্রবার, ১৪ মার্চ ২০২৫ রহস্য

জরির মোবাইল নাম্বার এক সময় দীর্ঘ সময় ধরে রাজুর মনে ছিলো।কিন্তু এখন আর মনে নেই।বিয়ের পর জরি আর কোনো দিন রাজুকে ফোন করে নি।ফোন না করাই স্বাভাবিক। রাজুও প্রত্যাশা করে না যে জরি তাকে ফোন দিবে।তবে মাঝে মাঝে জরিকে রাজুর তীব্র ভাবে মনে পড়ে।তখন রাজুর কেমন যেনো একটা অনুভূতি হয়।জরির বিষয়ে রাজুর মনে কি কোনো অপরাধবোধ কাজ করা উচিৎ? রাজু নিজেকে প্রশ্ন করে।জরি রাজুকে একদিন ফোনে I love you বলেছিলো।রাজু তার উত্তরে কিছুই বলে নি।কিন্তু কথা হতো প্রায় প্রতিদিন।জরি কি ধরে নিয়েছিলো যে যেহেতু কথা হয় সেইহেতু রাজুও তাকে ভালোবাসে।আসলে রাজু তখন অই সময়গুলোতে বুঝতে পারে নি যে জরির জন্য তার মনেও একটা অনুভূতি ছিলো আর সেই অনুভুতিটাকেই প্রেম বলে অভিহিত করা যায়।অনেকদিন পরে রাজু টের পেয়েছিলো যে জরির সংগে রাজুর যে সম্পর্ক – পরম্পরা – সেই সম্পর্কটা ছিলো প্রেমের।কিন্তু রাজু বুঝে নি।আর বুঝে নি বলেই জরিকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রাখে নি।আর ঠিক সেই কারণেই জরির প্রেম হয়ে যায় অন্য একজনের সংগে। কিন্তু রাজু তো বুঝতো জরি তাকে ভালোবাসে কারণ জরি তো মুখ ফুটেই বলেছিলো- আই লাভ ইউ,তাহলে রাজু কেনো সেদিন জরিকে জড়িয়ে নেয় নি জীবনের অথই জলে?
তবে কি রাজুর কাছে কোনোই মূল্য ছিলো না জরির প্রেমানুভুতির?এসব কথা ভেবে রাজু কোনো মীমাংসিত অবস্থানে পৌঁছুতে পারে না।
এখন এই মধ্যযামে রাজুর মনে পড়ছে কতো কতো মধ্যরাত রাতের পর রাত জরির সংগে কেটে গেছে এসএমএস খেলে।আহা কী স্বর্গীয় সেই দিনগুলি।”সোনালি সোনালি চিল শিশির শিকার করে নিয়ে গেছে তারে।” অথবা এরকম-“তারে আর ডাকিয়ো না কাছে”।
না, জরিকে কাছে ডাকার কোনো প্রসংগ নেই।তবে জরি চলে যাবার পর আর কারো প্রতিই রাজুর প্রেমট্রেম রকমের কোনো ফিলিং হয় নি।এখন দিনকাল কেটে যাচ্ছে যেনো বা ঘটনাবিহীন।

তবে এর মধ্যে একটা ঘটনা ঘটে গিয়েছিলো।সুর্মি নামে একটি মেয়ে রাজুর লেখা পড়ে রাজুকে প্রায়ই নক করে আসছিলো।মেয়েটি টিনেজার।মেয়েটির সংগে রাজুর বেশ সখ্য হয়ে গেছে। রাজু সুর্মিকে ‘তুমি’ থেকে ‘তুই’ সম্বোধনে নিয়ে এসেছে।

গতরাতে সুর্মিকে রাজু স্বপ্নের মধ্যে দেখতে পেলো।স্বপ্নের ঘোর এখনো মাথায় গেঁথে আছে।ফোন করে সুর্মিকে রাজুর বলতে ইচ্ছে হচ্ছে:
সুর্মি, তোকে গতকাল স্বপ্নে দেখলাম।
সুর্মি বলবে- কী দেখলেন?

কী দেখেছে সেটা সুর্মিকে বলা যাবে না।মিথ্যে করে বানিয়ে বলতে হবে:
দেখলাম- তুই আমি মুখোমুখি বসে।তুই পরে আছিস একটি নীল শাড়ি।তুই খুব হাসছিলি।তোকে মেঘমালার মতো শুভ্র মনে হচ্ছিলো।হঠাৎ তোর মোবাইল বেজে উঠলো।চৌধুরী অবিনাশ নামে কেউ একজন ফোন করেছে।আমি বললাম- অবিনাশ কে?
চিনি না।
-তাহলে ফোন করেছে কেনো!
প্রায়ই ফোন করে।
-মানে কি?
মানে তো উনি জানেন।
-বাজে বকছিস।

তুই হো হো করে হেসে উঠলি।সেই হাসির অর্থ খুঁজতে হলে একটা জীবন কেটে যাবে তবু খোঁজা শেষ হবে না।

কিন্তু স্বপ্নে আসলে রাজু এসব কিছুই দেখেনি।
রাজু দেখেছে: সুর্মি পরে আছে সাদা জর্জেট শাড়ি।
ওর চাঁদ দু’টি ফুটে আছে গন্ধরাজের মতো, ঠিকরে বেরুচ্ছে সৌরভ।রাজু সেই চাঁদের ঘ্রাণ নিতে চাইলো আর অনন্তকাল ধরে অপেক্ষমান রইলো সেই চাঁদের মাঝখানে হারিয়ে যেতে কিন্তু অনন্তকাল আর শেষ হলো না-

এসব কি সুর্মিকে বলা যায়!ভাববে- ছিঃ রাজু ভাইয়াটা খুব বাজে।

রাজু সুর্মিকে ফোন না করে মেসেঞ্জারে টেক্সট করে: কিরে, ভুলে গেছিস?

২ সপ্তাহ কেটে যায় সুর্মি তবু টেক্সট সিন করে না।
১৫ তম দিনে রাজু সুর্মিকে ফোন করে কিন্তু ফোন রিসিভ হয় না।ঘটনা কী!রাজু অপেক্ষা করে।সুর্মি নিশ্চয়ই ব্যাক করবে।না, সুর্মি কল ব্যাক করে না।ঘটনা কী!রাজু আবার ফোন করে।নো রেস্পন্স নো কল ব্যাক।রাজুর দিনগুলি সব রাত হয়ে যায় আর রাতগুলি গভীর অন্ধকার।সুর্মিকে সেই স্বপ্নের কথা আর বলা হয় না।রাতের বেলা নিজের অজান্তেই সুর্মি সুর্মি বোলে চিৎকার করে।সুর্মিকে কি রাজু ভালোবাসে!সুর্মি কি ভালোবাসে রাজুকে!না রাজু সুর্মিকে ভালোবাসে না।সুর্মিও রাজুকে বাসে না ভালো। তাহলে এই যে চিৎকার করে সুর্মি সুর্মি বলা – এর মানে তাহলে কী? এর মানে কি ভালোবাসা নয়!রাজু আসলেই জানেনা এসবের মানে কি।মানে খুঁজতেও ভালোলাগছে না,কিন্তু সুর্মির সংগে তো যোগাযোগ হওয়া দরকার।আচ্ছা সুর্মির কি স্বপ্নের অই চৌধুরী অবিনাশ ছোকরাটার সংগে বিয়ে হয়ে গেলো নাকি!হলে তো anyhow খবর পাওয়া যেতো।এমনও অবশ্য হতে পারে- বিয়ে হয়ে গেছে খবর এখনো এসে পৌঁছে নি,খবর জ্যামে আটকে আছে।

হ্যাঁ,খবর আটকেই ছিলো, সুর্মির বিয়ে টিয়ে হয় নি।চাকুরির ইন্টারভিউ ছিলো। এই ক’দিন সিরিয়াসলি পড়াশুনা করেছে।

সুর্মি নিজে থেকেই ফোন দিলো- কেমন আছেন?
ভালো নেই।
-কেনো?
সেটা কি বোলে বোঝাতে হবে?
– জ্বি জনাব।
কেনো?
-কেনো তা জানি না তবে বোলেই বুঝাতে হবে।
তাহলে বুঝার কোনো দরকার নেই।
-রাগ করলেন?
হ্যাঁ।
-রাগ ভাঙাতে হবে?
হুম।
-আমি রাগ টাগ ভাঙাতে পারি না।
তাহলে ভাঙবে না।
-না ভাঙুক।
তাতে তো তোর কিছুই যায় আসে না, তাইনা?
-হ্যাঁ, নিশ্চয়ই তাই।
তাহলে রেখে দে।
-আপনি কি সত্যিই রাগ করেছেন?
না, মিথ্যে মিথ্যে করেছি।
-আমি তো চেয়েছিলাম সত্যি সত্যিই রাগ করাতে।
হেরে গেলি।
-মানে?
এই যে যা চেয়েছিলি তা হলো না।
-মানুষ যা চায় সব সময় কি তা হয়?
না, হয় না।
-তাহলে মাঝে মাঝে তো হেরে যেতেই হবে, তাইনা?
হ্যাঁ, তাই।
-তবে?
কিছু না।
-কিছুই না কিচ্ছু না?
“তোমাকেই শুধু তোমাকেই”।
-বুঝিনি।
এটা একটা কবিতার লাইন।
-কোন কবিতা?
“তোমাকে”।শুনবি?
-শোনা যায়।
খুব একটা ইচ্ছে না থাকলে শুনার দরকার নেই।
-আহা বড্ড ত্যানা পেচ্চাচ্ছেন।
ওকে। শুনাচ্ছি: “ভালো লাগে না কিচ্ছু ভালো লাগেনা/আমাকেও না?/তোমাকেই শুধু তোমাকেই।”
-ভালোই।
ভালো মন্দ শুনতে চাই নি।
-আবারও ত্যানা পেচাচ্ছেন?
ত্যানা পেচানোই ছিলো।
রাখছি।

সুর্মি ফোনটা রেখে দিলো।

সেই স্বপ্নের ঘোর রাজুর এখনো কাটেনি।এখনো রাজু গন্ধরাজের মাতাল মাতল সৌরভ পায়।
এখনো সুর্মির ৩৬ চাঁদের মাঝখানে অনন্তকাল হারিয়ে যেতে চায় কিন্তু অনন্তকাল শেষ হয় না।

তারপর একদিন আশ্বিনের দিনে একদিন আশ্বিনের রাতে যখব পৃথিবীতে জোৎস্না সবেচেয়ে গাঢ়,সুর্মির ফোন।ওর মনটা কী কারণে খুব ফুরফুরে চনমনে।কথা বলতে বলতে সুর্মি কোথায় কোন গহনে হারিয়ে যাচ্ছিলো এবং ক্রমাগত হারিয়ে যেতেই চাইছিলো।সুর্মি আর রাজুর কথোপকথন সীমা লঙ্ঘন করে যাচ্ছিলো যদিও সীমা বলে কিছু নেই, তাই সীমা লঙ্ঘন কথাটাও বাতুলতা।

রাজু সাহস করে সেদিনের সেই স্বপ্নের কথা সুর্মিকে হুবহু বর্ণনা করে দেয়।যদিও মনে মনে রাজু ভয় পাচ্ছিলা- সুর্মি না তাকে আবার নক আউট করে দেয়!
কিন্তু সুর্মি পরিবর্তে রাজুকে যেনো কিছুটা প্রশ্রয়ই দিয়ে যায়।রাজুও “বসতে দিলে খেতে চায় খেতে দিলে শুতে চায়” পদ্ধতিতে এগিয়ে যায়।এক সময় রাজু সত্যি সত্যিই সুর্মির ৩৬ ইঞ্চির ঘ্রাণ নিতে নিতে ৩৬ ইঞ্চির খুব মধ্যে ডুবে যায় হারিয়ে যায় হারাতেই থাকে।সুর্মিও রাজুকে হারিয়ে যেতে বলে খুব বেশি ডুবে যেতে বলে।
তারপর আহা তারপর একদিন আশ্বিনের দিনে একদিন আশ্বিনের রাতে যখন পৃথিবীতে জোৎস্না সবচেয়ে গাঢ়, সুর্মির বিয়ে হয়ে গেলো কোনো এক চৌধুরী অবিনাশের সংগে।যদিও রাজু কখনো প্রেম নিবেদন করে নি সুর্মিকে, সুর্মিও রাজুকে;তবু ওর বিয়েতে কেমন একটা ধাক্কা লাগে রাজুর।
সুর্মিও কি সেরকম?- নাকি চৌধুরী অবিনাশকে নিয়ে সে অবলীলায় ডুবে যায় আশ্বিনের দিনে আশ্বিনের রাতে!অবিনাশও হারিয়ে যায় ৩৬ ইঞ্চি চাঁদের গহীনে?
হ্যাঁ,হারিয়েই তো যাবে।চৌধুরী ছোকরা যে ওর হাসবেন্ড। ওর প্রতিটি অস্থিমজ্জা নিংড়ে নেবার সে একমাত্র অধিকর্তা।
যাক না ওরা গভীর করে ডুবে যাক প্রতিটিক্ষণ- রাজুর তাতে কি!রাজু আর সুর্মিও তো কতো রাত কতো দিন কতো বিষন্ন দুপুর ডুবে গিয়েছিলো দু’জনে দু’জনার অস্থিমজ্জার ভিতর।কিন্তু অইভাবে ডুব সাঁতারের পরও প্রেম নিবেদন করে নি রাজু সুর্মিকে, সুর্মি রাজুকে,পরষ্পর পরষ্পরকে।
তাহলে অইসব ডুবে যাবার মানে কী দাঁড়ায় আর ব্যাখ্যাই বা কী?
ব্যাখ্যা কি এরকম যে প্রেম মানেই শরীর নয়। যদি তাই হতো তাহলেতো সুর্মি আর রাজুর মধ্যে প্রেম হয়েই গিয়েছিলো।শরীরে শরীর মিশে গিয়েও প্রেম হয় না,আবার অনন্তকাল না দেখে না ছুঁয়েই প্রেম হতে পারে।কিন্তু না দেখে না ছুঁয়ে- এসবও রাজুর কাছে কেমন আঁতলামো মাতলামো আর বিচ্ছিরি লাগছে।

বিতর্ক আর ডিসকোর্সের তবু কি শেষ আছে? মুখ ফুটে বললেই কি প্রেম? সব কিছু কি মুখে বলতে হয়? বুঝে নিতে হয়।
হায়! কি বুঝে নিয়েছিলো রাজু?সুর্মিই বা কী বুঝেছিলো?
তবে কি তারা বুঝে নিয়েছিলো তাদের সেই প্রেম ছিলো শরীরী প্রেম!
আবারও সেই বিতর্ক সেই ডিসকোর্স। শরীর ছাড়া কি প্রেম হয়? প্লেটোনিক বা পেত্রার্কান প্রেম বোলে কি আদৌ কিছু হয়!হোক চাই না হোক-
সুর্মির ৩৬ ইঞ্চির গহীনে হারিয়ে যাওয়া রাজুর কাছে প্রেমের চেয়েও গভীর আর মহৎ কিছু মনে হয়েছিলো।সেই মাহাত্ম্যের নাম রাজুর জানা নেই কিন্তু তা ছিলো মহৎ তা ছিলো প্রেমের চেয়ে বেশি কিছু কিংবা মহৎ কোনো প্রেম।৩৬ ইঞ্চির মধ্যে যদি রাজু না হারিয়ে যেতো তখন সেই না-হারানোকেও কি প্রেম বলা যেতো?না হারিয়েই কি প্রেম হতে পারে?নিশ্চয়ই হতেই পারে।কিন্তু রাজু হারিয়ে গিয়েছিলো।হারিয়ে যাওয়া কখনো প্রেমের প্রতিবন্ধকতা নয়।হারিয়ে যাওয়া মানে অপ্রেম নয়।হোক প্রেম কিংবা অপ্রেম।৩৬ ইঞ্চির মধ্যে হারিয়ে যাওয়া পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম শিল্প।আর সেই শিল্প সৃষ্টির পেছনে যারা কুশিলব তারাও কি শ্রেষ্ঠ শিল্পী নয়!

রাজুর কাছে মনে হয়- সুর্মির ৩৬ ইঞ্চির চেয়ে শ্রেষ্ঠ শিল্প পৃথিবীর আর কিছু নয় অন্য কিছুই নয়।

১০০
মন্তব্য করতে ক্লিক করুন