যুবক অনার্য

গল্প - দ্য কিলার আউটসাইডার – ২৮

যুবক অনার্য
শনিবার, ১২ এপ্রিল ২০২৫ রহস্য

রহিমা বেগম বসে আছেন ২২ তলা বিল্ডিং-এর আন্ডারগ্রাউন্ডে।রহিমা মহামান্য অধীশ্বরের সংগে দেখা করতে চান।মহামান্যই তাকে ডেকে পাঠিয়েছেন।কিন্তু মিস্টার মাদারবোর্ড বললো- স্যারের সাথে দেখা করবার কোনো নিয়ম নেই।স্বয়ং মাদারবোর্ডও নাকি স্যারকে কখনো দেখেননি। রহিমা একটু বিব্রত বোধ করলেন।সরাসরি দেখা করা ও কথা বলার সিস্টেম না থাকলে তো ভায়া হয়ে কাজ করতে হবে।রহিমা ভায়া হয়ে কাজ করার বিষয়টিতেই বিব্রতবোধ করছেন।
মাদারবোর্ড বিষয়টি বুঝতে পেরে বললো- এ যাবৎ কিন্তু আপনি ভায়া হয়েই কাজ করেছেন এবং সফলও হয়েছেন, তাইনা?
রহিমা শুকনো মুখে সায় দিলো- জ্বি।

রহিমার মনে একটা প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে- স্যারের সাথে সরাসরি দেখা ও কথা বলার নিয়ম নেই তাহলে এখানকার লোকজন কাজ করে কোন পদ্ধতিতে!
রহিমা একটু সাহস সঞ্চয় করে মাদারবোর্ডকে প্রশ্নটা করেই ফেললো।মাদারবোর্ড কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলো রহিমা বেগমের দিকে।রহিমা বেগম পুনরায় বিব্রত বোধ করলেন।এক গ্লাস পানি খেলেন।রহিমা লক্ষ্য করলেন মাদারবোর্ড লোকটার চোখ দারুণ তীক্ষ্ণ। চোখে মনির তুলনায় সাদা অংশ বড়ো বা বেশি জায়গাজুড়ে।
রহিমা বেগম মাদারবোর্ডের সেই তীক্ষ্ণ চোখের দিকে সংকোচ নিয়ে তাকিয়ে উত্তরের অপেক্ষা করছেন।
মাদারবোর্ড একটা সুইচ প্রেস করলেন।একটা মেয়ে এসে দাঁড়ালো।মেয়েটা বিশেষ রকমের ইউনিফর্ম পরা।ইউনিফর্ম মেয়েটার স্মার্টনেস যেনো বাড়িয়ে দিয়েছে।
মাদারবোর্ড বললো -একটা ফরম দাও।
মেয়েটা চলে গিয়ে একটা ফরম নিয়ে আবার কক্ষে প্রবেশ করলো।রহিমা বেগমের সামনে ফরম আর একটা কলম রাখলো।রহিমা বেগম দেখলেন ফরম বলতে যা বলা হচ্ছে তা একটা সাদা কাগজ।উপরে ডানদিকে একটা সংখ্যা- G91132।আর কোথাও কিছুই মুদ্রিত নেই।
জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে রহিমা বেগম মাদারবোর্ডের দিকে তাকালো।
মাদারবোর্ড বললো- আপনি এই ফরমে “আমি মহামান্য স্যারের ছায়া সম্পর্কে বিনীতভাবে জানতে চাই।” লিখে দিন।
রহিমা বেগমের খুব রাগ হলো।এসব নাটকের মানে কী!
রহিমা ফরম পূরণ করে দিলেন।পূরণ করে দেখলো মেয়েটি নেই।কখন যে চলে গেছে রহিমা বুঝতেই পারে নি।মাদারবোর্ড ফরমটি নিয়ে চলে গেলো।যাবার আগে ‘আপনি কাইন্ডলি কিছুক্ষণ অপেক্ষা করুন আমি আসছি’ বলে বৃহৎ একটি এলইডি মনিটরের সুইচ অন করে দিয়ে চলে গেলো।

রহিমা বেগম লক্ষ্য করলেন এই কক্ষটিতে একটি বড়ো টেবিল দুইটি চেয়ার যার একটিতে রহিমা বেগম বসে আছেন আর অপোজিটে আরেকটি চেয়ার যেখানে একটু আগে মাদারবোর্ড বসে ছিলো।আর দেয়ালে দুইটি মনিটর।এই কক্ষের দেয়ালগুলো কি দিয়ে তৈরী- ইট পাথর স্টিল লৌহ কাঠ প্রসেসর উড নাকি প্লাই উড নাকি অন্যকিছু দিয়ে তৈরী – রহিমা বেগম কিছুই আঁচ করতে পারলেন না।পুরো কক্ষটাই একটা ল্যাবরেটরির মতো।টেবিল চেয়ার সবই স্বয়ংক্রিয়।সুইচ প্রেস করলেই চেয়ার টেবিল স্থান পরিবর্তন করতে পারে, যেদিকে ডিরেকশন দেয়া হবে সেদিকেই যাবে।রহিমা বেগমের সন্দেহ হলো- এই কক্ষটাও এমনকি পুরা ২২ তলা বিল্ডিংটাই হয়তো এরকম স্বয়ংক্রিয়। সুইচ টিপলে হয়তো বিল্ডিংটাই স্থানান্তরিত হয়ে যাবে।বলা যায় না আকাশেও উড়াল দিতে পারে!রহিমার খুব রাগ হচ্ছে- ধ্যাৎ এসব সে কীসব আজগুবি ভাবনা ভাবছে!এই বিল্ডিং লোহা না তুলা দিয়ে তৈরী তাতে তার কি আসে যায়!যত্তসব।

রহিমা বেগম মনিটরের দিকে তাকালেন।মনিটরে ভেসে ওঠেছে : একটা লোক দাঁড়িয়ে আছে।লোকটির অপোজিটে একটা রোবট।রোবট আর লোকটি কথা বলছে।মুখ নড়ছে কিন্তু সাউন্ড দেয়া হয় নি তাই কি বলছে বুঝার উপায় নাই।রোবট আর লোকটা কথা বলছে যে জায়গায়, সমগ্র জায়গাজুড়ে হালকা অন্ধকার।পেছনে পাহাড় না জঙ্গল বুঝা যাচ্ছে না।তবে মনে হচ্ছে যেখানে কথা বলছে সেটা একটি বিশাল মাঠ।মাঠে কোনো গাছপালা নেই।একটা বালুর মাঠের মতো,অনেকটা নদীতে নতুন চর উঠলে যেমন হয়।রহিমার মনে হলো এটা কোনো হরর মুভি।মুভি না অন্য কিছু- কিছুই তো যায় আসে না।গোল্লায় যাক।

রহিমা আরেক গ্লাস পানি খেলো।আর একটু পরেই নিজের অজান্তেই সে ঘুমের মধ্যে তলিয়ে গেলো।ঘুমন্ত অবস্থাতেই কেউ এসে রহিমা বেগমের চেয়ারের পেছনের দিকে একটা সুইচ প্রেস করলো,ওখানে যে একটা সুইচ আছে বুঝার কোনো উপায় নেই।রহিমা বেগমের চেয়ারটি নেমে গেলো ২২ ফিট নিচে।সুরঙের মতো প্যাসেজ দিয়ে চেয়ারটি চলে এলো গো-গ্রাউন্ডে।গো-গ্রাউন্ডের যে কক্ষে রহিমা বেগমকে নিয়ে আসা হলো সেই কক্ষটি কিছুক্ষণ আগে রহিমা বেগম যে-কক্ষে বসে ছিলো অবিকল সেই রকম।দুইটা চেয়ার একটা টেবিল দুইটা মনিটর।

রহিমা বেগমের ঘুম ভাঙলো।সে দেখলো তার সামনে বসে আছে মাদারবোর্ড লোকটি।
রহিমা বুঝতে পেরেছে যে তিনি ঘুমিয়ে পড়েছিলেন।
বুঝতে পেরে বললো- সরি, আমার একটু ঝিমুনি চলে এসেছিলো।
মাদারবোর্ড বললো- ইট’স ওকে।নো প্রব্লেম।
রহিমা বললো- থ্যাংক ইউ
মাদারবোর্ড বললো- ওয়েলকাম।

ইতোমধ্যে একটি মেয়ে এসে টেবিলে খাবার রেখে গেছে।মাদারবোর্ড রহিমাকে বিনীত ভঙিমায় খেতে অনুরোধ করলো। খাবারের দিকে ইশারা করে মাদারবোর্ড বললো- প্লিজ নিন।

রহিমার কিছুই খেতে ইচ্ছে করছিলো না।তবু মনের বিরুদ্ধে সে সাদা একটা আইটেম তুলে নিলো।সে প্রশ্ন করতে চেয়েছিলো আইটেমটার নাম কী কিন্তু চেপে গেলো।
রহিমা বললো- আপনি নিচ্ছেন না কেনো!

থ্যাংকস’ বলে মাদারবোর্ডও সাদা আইটেমটাই নিলো।
নেয়ার উদ্দেশ্য হলো রহিমা বেগম যেনো কোনো সন্দেহ না করে।রহিমা বেগম হয়তো ভাবতে পারেন তাকে যে-আইটেম গুলি খেতে দেয়া হয়েছে সেগুলোতে যদি কোনো ভেজাল থাকে! কিন্তু রহিমা বেগম আসলে খাবার নিয়ে সন্দেহ টন্দেহ কিছু করে নি।

রহিমা মহামান্য স্যারের বিষয়টি মাদারবোর্ডকে স্মরণ করিয়ে দেবার উদ্দেশে বললো – আপনি একটা ফরম ফিলাপ করতে বলেছিলেন।
মাদারবোর্ড বললো- জ্বি।আপনি স্যারের ছায়া নিয়ে জানতে চেয়েছিলেন।
রহিমা বেগম মনে মনে বললো-এইসব ছায়া টায়া ভড়ং-এর কোনো মানে হয় না।কিন্তু মাদারবোর্ডকে বললো – জ্বি।
মাদারবোর্ড রহিমার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে বললো – কিছুক্ষণ আগে মনিটরে একটা ভিডিও ক্লিপ দেয়া হয়েছিলো।দেখেছেন নিশ্চয়ই।
-জ্বি দেখেছি।
গুড।অইটাই হলো স্যার মানে স্যারের ছায়া মানে স্যারের সংগে কথোপকথন।
রহিমা বেগমের চেহারায় ‘কিছুই বুঝি নি’- রকমের একটা ভঙিমা ফুটে উঠলো।
মাদারবোর্ড বললো- স্যারের সংগে ওরকম পদ্ধতিতেই কনটাক্ট করতে হয়।মানে স্যারের কথাগুলি স্যার রোবটের মাধ্যমে বলেন।
রহিমার মনে পুনরায় প্রশ্ন জাগলো : কেউ না কেউ তো নিশ্চয়ই সরাসরি স্যারের সংগে ডিল করেন।সেই কেউটা কে।
কিন্তু রহিমা প্রশ্নটা করে না।করে লাভ নেই, উত্তর পাওয়া যাবে না অধিকন্তু মাদারবোর্ড নিশ্চয়ই বিরক্ত হবে।
রহিমা আরেকটি আইটেমের দিকে হাত বাড়াতেই মাদারবোর্ডও অই একই আইটেমের দিকে হাত বাড়ালো।রহিমার হাতের আঙুলের সংগে মাদারবোর্ডের
হাতের আঙুল একটু টাচ লেগে গেলো।রহিমা মাদারবোর্ডের দিকে তাকিয়ে স্পষ্ট দেখতে পেলো মাদারবোর্ডের ঠোঁটে মৃদু হাসি কিন্তু চোখ স্থির;সেই স্থির চোখের দিকে একটু খেয়াল করলেই বুঝা যায় মাদারবোর্ডের চোখের সাদা অংশের তুলনায় মনি বড়ো বা বেশি জায়গা জুড়ে।তাহলে এই লোকটা কে।আগের মাদারবোর্ড আর এই লোকটার চেহারাতো হুবহু এক শুধু চোখের অই মনি আর সাদা অংশটি আলাদা।তাহলে এখানে মহামান্য স্যার একাধিক লোকের চেহারা সার্জারি করে একই রকমের বানিয়ে রেখেছেন!
খাবার পর্ব শেষ করে মাদারবোর্ড মনিটরের সুইচ অন করলেন।তাকে একটি ভিডিও ক্লিপ দেখানো হলো।ক্লিপের মধ্যে যা বুঝানো হয়েছে তা বুঝতে রহিমার মোটেই সমস্যা হলো না।ক্লিপে রহিমার সংগে স্যারের ডিড আর পরবর্তী সময়কে কীভাবে সাজাবে সেই বিষয়ে প্রচ্ছন্ন ইংগিত আছে।
মাদারবোর্ড বেল বাজালো।একটি মেয়ে এসে দাঁড়ালো।এই মেয়েটি অন্য একটি মেয়ে।এর কোনো ইউনিফর্ম নেই।মেয়েটি কি রহিমা বেগমকে নিয়ে যেতে এসেছে!
মেয়েটি কক্ষে প্রবেশের পর মাদারবোর্ড চলে গেলো। যাওয়ার আগে রহিমার সংগে হ্যান্ডশেকের জন্য হাত বাড়ালো।রহিমা হ্যান্ডশেক করার সময় মাদারবোর্ডের চোখের দিকে তাকিয়ে পুনরায় নিশ্চিত হলো এই লোক সেই লোক নয়।মাদারবোর্ড কক্ষ থেকে অদৃশ্য হবার পর পরই রহিমার মনে হলো তার শ্বাস কষ্ট হচ্ছে।রহিমা চেয়ারের মধ্যেই অচেতন হয়ে পড়লো।

৮২
মন্তব্য করতে ক্লিক করুন