২২ দিন পর আতসির ডাক পড়েছে এন রায়ের অফিসে।আতসি সাধারণত সাজগোজে খুব একটা অভ্যস্ত নয়।কিন্তু আজ বের হবার সময় মা বললেন একটু ভালো করে গুছিয়ে বেরুতে।আতসি মায়ের অনুরোধেই সেজেগুজে বেরিয়েছে।সামান্য সাজেই আতসিকে দেখতে বেশ লাগছে।এবং আতসি একটু অবাক হলো যখন এন রায় বললেন- বাহ তুমি তো খুব সুন্দর!
আতসি কিছুই না বলে শুধু ‘থ্যাংকস’ বলে মাথা নিচু করে ছিলো।আজ আতসিকে সত্যি সত্যিই কাজ দেয়া হবে।আতসি ছাত্রী হিসেবে খুব মেধাবী। সে সিএসই স্নাতক শেষ করেছে।বরাবরই তার পরীক্ষার ফলাফল ভালো। সেই বালিকাবেলা থেকেই তার বিষয়ে প্রয়োজনীয় সব তথ্যই এন রায়ের কাছে দেয়া হয়েছে। এন রায় যেমনটি চেয়েছিলেন আতসি আসলেই তেমন একজন।আজ আতসির খিদে নেই।কিন্তু আজ এন রায় আতসিকে বেশ কয়েকবার খেতে অনুরোধ করেছেন-
আরে তুমি তো কিছুই খাচ্ছো না।এইটা একটু নাও।
আতসি এইটা নেবার পর এন রায় আবার বলছেন- অইটা একটু নাও।এইভাবে প্রায় সব আইটেম আতসিকে চেখে দেখতে হলো।প্রতিটি খাবারই খুব সুস্বাদু। তবে পেটে খিদে থাকলে আরো বেশি সুস্বাদু লাগতো।
এন রায় লক্ষ্য করলেন আতসি কথা বলার সময় কেমন অন্যমনস্ক হয়ে যাচ্ছে।আতসি কি ওর বাচ্চাটা নিয়ে চিন্তিত!আতসিকে বলা হয়েছে তাকে এই ফার্মে কী কাজ দেয়া হবে তা যেনো কেউ কখনো জানতে না পারে। জানতে পারলে তার বাচ্চাটাকে নাই করে দেয়া হবে।আতসি যদি কাউকে কিছু না বলে তাহলে তো চিন্তার কিছু নেই।তবু,তবুও আতিসি চিন্তিত কেনো!আতসির চিন্তা চিন্তা চেহারা এন রায়কে চিন্তিত করে দিচ্ছে।চিন্তা ঝেড়ে ফেলবার জন্য এন রায় ঘট ঘট করে এক গ্লাস রঙিন জল গলাধঃকরণ করে বললেন- আতসি, তোমাকে একটা কথা বলি।
জ্বি নিশ্চয়ই, স্যার।
-তোমাকে আমার পছন্দ হয়েছে কেনো জানো? মানে কাজের জন্য কেনো পছন্দ হয়েছে সেটাই বলতে চাইছি।
জ্বি আমি বুঝতে পেরেছি,স্যার।আপনি বলুন।
-পছন্দ হয়েছে কারণ তুমি খুব সাদামাটাভাবে থাকো। মানে তুমি সাজোটাজো কম যদিও আজ তুমি সেজে এসেছো।এবং আমি প্রথম দিনই বুঝতে পেরেছি তুমি সাজগোজ পছন্দ করো না।
এন রায় এসব বলছেন আতসির অন্যমনস্কতা দূর করার জন্য কিন্তু মিস্টার এন রায় ব্যর্থ।আতসি এখনো অন্যমনষ্ক।
অন্যমনষ্কতা নিয়েই আতসি বললো- একটা কথা জিজ্ঞেস করবো?
নিশ্চয়ই।
-আমি যদি সাজগোজ করা রকমের মেয়ে হতাম তাহলে কি আমি কাজটা পেতাম না?
পেতে।সাজগোজের সংগে কাজের কোনো সম্পর্ক নেই।তোমার সিম্পল লুকিংয়ের জন্য আমার তোমাকে পছন্দ হয়েছে।আর কাজের জন্য পছন্দ হয়েছে তোমার মেধাবী ফলাফল আর দুই একটা বিষয় যা তোমাকে জানানোর নিয়ম নেই।
-আমি কি আজ কাজের বিষয়ে কোনো আইডিয়া পেতে পারি?
পারো তো বটেই।কিন্তু…
আতসি যেনো বা আঁতকে উঠে-কিন্তু কী?
এন রায় আতসির মনের অবস্থা বুঝতে পেতে বলেন- তুমি কি ভয় পাচ্ছো?
-জ্বি কিছুটা পাচ্ছি।
ভয়ের কিছু নেই।কিন্তুটা হলো আমরা তোমাকে আপাতত একটা প্রজেক্ট দেবো।এই প্রজেক্টটি শেষ হলে আমাদের এখানে তোমার কাজও শেষ হয়ে যাবে।তবে তোমাকে আমরা ভবিষ্যতে প্রয়োজন হলে আবার ডাকবো।
-কিন্তু স্যার,আমার যে একটা নিয়মিত কাজ দরকার।
আমাদের এখানে নিয়মিত কাজের কোনো ব্যবস্থা নেই।এখানে অধিকাংশ লোকই অনিয়মিত।এমনকি আমি নিজেও জানি না যে আমিও নিয়মিত কিনা।তবে একটা সুবিধা হলো তোমাকে যা পে করা হবে তা তোমার ধারনার বাইরে।সেই টাকা দিয়ে তুমি দীর্ঘ সময় অনায়াসে ভালোভাবে চালিয়ে নিতে পারবে।আপাতত এর বেশি কিছু বলতে পারছি না।এখন প্রশ্ন হলো- তুমি কি আমাদের শর্তে রাজি?
আতসি এক মুহূর্তও না ভেবে বললো – জ্বি স্যার,আমি রাজি।
আতসির চোখ খুশিতে চকচক করছে।এন রায় সেই চকচকে চোখের দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে ভাবছে- এই মেয়ে যদি জানতো তাকে দিয়ে কী মর্মান্তিক কাজ করিয়ে নেয়া হবে তাহলে তার চোখ কি এরকম চকচক হতো!এন রায় মনে মনে উচ্চারণ করলো ‘চক চক করলেই সোনা হয় না’ আর হো হো করে হেসে উঠলো।আতসি সেই হাসির দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো কিন্তু এন রায়ের এই অদ্ভুত অকারণ হাসির কোনো মানে খুঁজে পেলো না।সব হাসির হয়তো মানে হয় না।আর সেই কারণেই এন রায় নিজেই তার অদ্ভুত হাসির কোনো মানে খুঁজে পেলো না।মানে খুঁজে না পেয়ে এন রায় পুনরায় হেসে উঠলো- হো হো হো।যেনো একটা মজার খেলা।আতসি অপ্রস্তুত হয়ে ‘স্যার আমি তাহলে আসি’ বলে কক্ষ থেকে বেরিয়ে গেলো।এন রায় তখনো হেসেই চলেছে- হো হো হো।
মন্তব্য করতে ক্লিক করুন