ছেলেটির গায়ে একটি সবুজ টি-শার্ট আর ব্ল্যাক জিন্স।সে হেঁটে যাচ্ছিলো এয়ারপোর্টের শেষ প্রান্তে হ্যাঙ্গারের দেয়ালের বাইরের রাস্তা ধরে পশ্চিম দিকে।গন্তব্য: কমরেড মান্তুর বাড়ি।আর কয়েকগজ পরেই যখন সে ডানদিকের গলিতে মোড় নিয়েছে ঠিক সেই মুহূর্তে কেউ একজন তার ডান হাত ধরেই বললো – আপনি কি মান্তুর কাছে যাচ্ছেন?
ছেলেটি বললো – জ্বি।
প্রশ্নকারী ‘ভেরি গুড’ বলেই ছেলেটিকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিলো।একটি সাদা মাইক্রোর দরোজা সম্ভবত আগে থেকেই খোলা ছিলো।প্রশ্নকারীর ধাক্কায় ছেলেটি সোজা গিয়ে পড়লো মাইক্রোর সিটের সামনের কনজাস্টেড ফাঁকা জায়গাটিতে।গাড়ির ভেতর থেকে দুইজন, ছেলেটি কিছু বুঝে উঠবার আগেই,ছেলেটিকে গাড়ির ভেতরে টেনে তুলে সিটে বসিয়ে দিলো।পুরো ঘটনাটা ঘটতে সময় লাগলো মাত্র পৌনে এক মিনিট।
দরোজা বন্ধ হবার পর চকিতেই কালো কাপড় দিয়ে ছেলেটির চোখ বেঁধে দেয়া হলো।গাড়ি ছুটে চলেছে সাঁইসাঁই করে।ছেলেটি কিছুই বুঝতে পারছেনা।এরা কারা কোথা থেকে এলো।কেনো তাকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে।এদের উদ্দেশ্যই বা কি!ঘটনার আকস্মিকতায় তার মুখ দিয়ে কোনো কথা বেরুচ্ছে না।কী বলা বা করা উচিৎ – সেটাও তার মাথায় আসছে না।প্রশ্নকারী লোকটি যিনি জানতে চেয়েছিলো যে সে কোথায় যাচ্ছে,পুনরায় প্রশ্ন করে – তোমার কি ভয় লাগছে?
ছেলেটি ভয়ে ভয়ে বলে -জ্বি।
জ্বি বলতেও ছেলেটির গলা শুকিয়ে আসছিলো যেনো ‘জ্বি’-এর মতো ছোট্ট একটি শব্দ উচ্চারণ করার চেয়ে অসম্ভব কাজ অন্য কিছু নয়।
ভয়ের কিছু নেই।তোমাকে নিয়ে যাচ্ছি, কিছু জিজ্ঞাসাবাদ করেই ছেড়ে দিবো।
এরপর নেমে আসে শ্মশানের নির্জনতা ।কেউই কিছুই বলছে না।গাড়িতে কয়জন আছে তাও বুঝা যাচ্ছে না।এক সময় গাড়িটি কোথাও এসে থেমে গেলো।ছেলেটিকে গাড়ি থেকে হাত শক্ত করে ধরে নামানো হলো।ছেলেটির দুই হাত তখন পিছমোড়া করে বাঁধা।তাকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে সিঁড়ি ভেঙে ভেঙে।মনে হচ্ছে সিঁড়ি সম্ভবত নরক পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছাবে।ছেলেটিকে অতো বেশি উপর পর্যন্ত যেতে হলো না।দোতলার একটি ঘরে ঢুকিয়ে একটি চেয়ারে বসানো হলো।বসার সংগে সংগেই চেয়ারের সংগে তার হাত আর পা লক করে দেয়া হলো অটো-সিস্টেমে।চেয়ারটা তারপর ঘুরতে লাগলো বেশ দ্রুত।কয়েক রাউন্ড ঘুরার পরই ছেলেটি বমি করে ঘর ভাসিয়ে দিলো।সেদিনের মতো অই পর্যন্তই।পরের দিন চোখ বাঁধা অবস্থাতেই তাকে দোতলা থেকে নিচে নামানো হলো।আধা মিনিট হাঁটার পরেই দরোজা খুলবার আওয়াজ টের পাওয়া গেলো।দরোজার ভেতর দিয়ে প্রবেশ করতেই নাকে দুর্গন্ধ এলো।সম্ভবত এটা টয়লেটের মতো কিছু হবে।সেই দুর্গন্ধময় জায়গার- যা হয়তো বা একটি টয়লেট- ভেতর দিয়েই তাকে একটি কক্ষে এনে চোখ খুলে দেয়া হলো।চোখ খুলবার পর কিছুক্ষণ সে কিছুই দেখতে পেলো না।সবকিছু অন্ধকার মনে হলো।ধীরে ধীরে সে দেখতে পেলো- ৬ বাই ৪ ফিটের একটি ছোট কক্ষ।আড়াই ফিট একটি দেয়ালের ওপাশে ছোট্ট একটা টয়লেট।রুমের ভেতর আলো খুব কম।একটা এগজোস্ট ফ্যান খুব শব্দ করে ঘুরছে।একটি দরোজা।দরোজাটিতে কয়েদখানার মতো কয়েকটি শিকল।দরোজাটির পরে একটি কাঠের দরোজা।আশেপাশেও এরকম আরো কক্ষ আছে বলে মনে হচ্ছে।মাঝে মাঝে ভয়ংকর আর্তনাদ ভেসে আসে।প্রায়শ বিকট আওয়াজে মিউজিক বেজে উঠে আর তারপরই মানুষের তীব্র আর্তনাদ।আর এগজোস্ট ফ্যানের ঘরঘর ঘরঘর – একটানা কর্কশ তান্ডব।৬ বাই ৪ কক্ষটিতে ছেলেটি সারারাত একটি সেকেন্ডও ঘুমাতে পারলো না।পরের দিন তাকে আবার নিয়ে আসা হলো দোতলার সেই চেয়ারঅলা কক্ষটিতে।পুনরায় চেয়ার ঘুরছে।ছেলেটির মাথার ভেতরটাও ঘুরতে শুরু করেছে।ছেলেটিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে- বাংলা ভাষা এবং অন্য একটি ভাষায়ও কিন্তু ছেলেটির সেই অন্য ভাষাটি জানা নেই।এমনকি যে সকল প্রশ্ন তাকে করা হচ্ছে সেসবের আগামাথাও সে বুঝতে পারছে না।সে বুঝতে পারছে না যে সে আদৌ বেঁচে আছে নাকি তার মৃত্যু হয়ে গেছে এবং সে এখন ভোগ করছে সাক্ষাৎ নরক যন্ত্রণা ।তার মনে হলো জিজ্ঞাসাবাদের উত্তরে,কেউ যেনো তাকে বলে দিচ্ছে- তুমি বলো যে তুমি আসলে তোমার ব্যক্তিগত নয়,বরং তুমি খুঁজে চলেছো তাদেরকেই যারা তোমার দেশের শত্রু যারা দেশের মানুষের জন্য চিরদিন হুমকি হয়ে দাঁড়িয়ে আছে পাহাড়ের মতো অনড় আর অবিচল।ছেলেটি যেনো এক অলৌকিক আর ঐতিহাসিক ইশারায় শরীরের সমস্ত শক্তি জড়ো করে বললো- উই আর লুকিং ফর শত্রুস।জিজ্ঞাসাবাদকারী চেয়ারের রেগুলেটর বাড়িয়ে দিলো।ছেলেটি বমি করার আগেই অচেতন হয়ে পড়লো।তার ঠোঁট বেয়ে গড়িয় পড়লো লালামিশ্রিত হলুদ তরল।
দ্য কিলার আউটসাইডার – ৪০


০
০
সেভ বা রিয়েক্ট করার জন্য লগইন করে নিন!
৯৪
মন্তব্য করতে ক্লিক করুন