দ্য কিলার আউটসাইডার – শেষ পর্ব
দ্য কিলার আউটসাইডার – শেষ পর্ব
যুবক অনার্য

গল্প - দ্য কিলার আউটসাইডার – শেষ পর্ব

যুবক অনার্য
বুধবার, ২১ মে ২০২৫ রহস্য

রাজু এখন একটু খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে আর সামান্য কুঁজো হয়ে হাঁটে।হাঁটতে হাঁটতে, উকুন হলে যেভাবে মানুষ মাথা চুলকায় ঠিক সেভাবে মাঝে মাঝে অকারণে মাথা চুলকায়।তার মাথায়ও মনে হয় কিছুটা গন্ডগোল হয়ে থাকতে পারে।মাঝে মধ্যে কিছু কিছু বিষয় সে মনে করতে পারে না।তবে এই মুহুর্তে তার মনে পড়ছে: সেদিন কমরেড মান্তুর বাড়ি যাবার পথে তাকে কারা যেনো অপহরণ করে নিয়ে গিয়ে গুম করে রেখেছিলো কোথাও এক অজ্ঞাত অন্ধকার কুঠুরিতে যেখানে বেঁচে থাকা মৃত্যুর চেয়েও যন্ত্রণাদায়ক।যেখানে দিন নাকি রাত- বুঝার কোনো উপায় নেই।যেখানে একটি এগজোস্ট ফ্যান সারাক্ষণ ঘরঘর করে চলতেই থাকে।যেখানে অনেক অনেক মানুষের তীব্র আর বেদনাময় আর্তনাদ।যেখানে….

সেইসব স্মৃতি মনে পড়লে মান্তুর মস্তিষ্কে এখনো তীব্র যন্ত্রণা হয়।চিৎকার করে কিছু একটা বলতে ইচ্ছে করে।কিন্তু কী বলবে- মান্তু বুঝতে পারে না।

মান্তুর মনে পড়ে- সুধীনদা তাকে একটি অনারারি ডক্টরেট ডিগ্রি দিয়েছিলো যা ছিলো একটি নকল সার্টিফিকেট। অই কাগজে ৪ টি বানান ভুল ছিলো।সংগে একটা ক্রেস্ট দিয়েছিলো যা কিনা বানানো হয়েছিলো ঢাকার নীলক্ষেত এলাকার কোনো দোকান থেকে।এক সময় রাজু জেনে গিয়েছিল যে সুধীনদা আসলে অন্য একটি দেশের সহযোগিতায় বাংলাদেশের প্রিন্ট মিডিয়ার কর্তৃত্ব নিতে চেয়েছিলো আর এজন্য তার দরকার ছিলো অই দেশের হয়ে এদেশের শীর্ষ একটি দৈনিকের কর্তৃত্ব নেয়া,যে দৈনিকটি বস্তুত বাংলাদেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে কাজ করে চলেছে।শিল্প-সাহিত্যের লোক হয়ে দাদা কীভাবে এতো জঘন্য হতে পারেন- রাজুর মাথায় ঠিক ধরে না।রাজুর মনে আজ প্রশ্ন জাগে- যে-ধীরেনদাকে সে এতো ভালোবাসতো,ধীরেনদাকে সে কতোভাবেই না সাহায্য করেছিলো,এমনকি ধীরেনদার পঞ্চম বই প্রকাশের পুরো টাকাটা রাজুই দিয়েছিলো প্রকাশককে;সেই ধীরেনদাই রাজুকে নিয়ে গিয়েছিলো সুধীনদার মতো একজন নিচ প্রকৃতির আর ভয়ংকর দেশদ্রোহী মানুষের কাছে!রাজু ভেবে পায় না- মানুষ মানুষের ভালোবাসার এরকম নিষ্ঠুর প্রতিদান দিতে পারে কীভাবে!

রাজু সুধীনদার কাছ থেকে সরে এসেছিলো।বাধ্য হয়ে রাজুকে ফোন নাম্বার চেঞ্জ করতে হয়েছিলো।দিনকাল কেটে যাচ্ছিলো ঢাকা টু কুমিল্লা, কুমিল্লা টু ঢাকা আর লেখালেখি নিয়ে।এর মধ্যেই একদিন কমরেড মান্তুর বাসার কাছাকাছি একটি জায়গা থেকে রাজুকে অপহরণ করা হলো।রাজুর এক বন্ধু দেবব্রত চাকী চাকুরি করতো একটি বিশেষ বাহিনীতে।প্রায় ৪ মাস পর গুমঘর থেকে রাজু ফিরে আসতে পেরেছিলো বন্ধু দেবব্রত চাকীর সহযোগিতায়।চাকীর সাহায্য ছাড়া গুমঘর থেকে রাজুর ফিরে আসা হয়তো কখনোই সম্ভব হতো না।

কী অপরাধ ছিলো রাজুর?এটাই কি ছিলো অপরাধ তার যে, সে তার লেখায় জ্বাজ্জল্যমান এক সত্যকে প্রকাশ করে দিয়েছিলো?সে প্রকাশ করে দিয়েছিলো- বিদেশি একটি শক্তি দেশি শক্তিকে ব্যবহার করে পরিচালনা করছে তার প্রিয়তম মাতৃভূমি।

যে-বইটি লিখবার জন্য লেখক রাজু আহমেদকে প্রায় ৪ মাস থাকতে হয়েছিলো গুমঘরে সেটি ছিলো একটি উপন্যাসের বই।বইটির নাম – ‘দ্য কিলার আউটসাইডার’।

১৩২
মন্তব্য করতে ক্লিক করুন