কাজী নজরুল ইসলাম

বিরাট-প্রাণ, কবি, দরদি-
প্রিন্সিপাল শ্রীযুক্ত সুরেন্দ্রনাথ মৈত্র
শ্রীচরণারবিন্দেষু

দেখিয়াছি হিমালয়, করিনি প্রণাম,
দেবতা দেখিনি, দেখিয়াছি স্বর্গধাম।…
সেদিন প্রথম যবে দেখিনু তোমারে,
হে বিরাট, মহাপ্রাণ, কেন বারেবারে
মনে হলো এতদিনে দেখিনু দেবতা!
চোখ পুরে এল জল, বুক পুরে কথা।
ঠেকিল ললাটে কর আপনি বিস্ময়ে,
নব লোকে দেখা যেন নব পরিচয়ে।

কোথা যেন দেখেছি কবে কোন লোকে,
সে স্মৃতি দেখিনু তব অশ্রুসিক্ত চোখে।
চলিতে চলিতে পথে দূর পথচারী
আসিলাম তব দ্বারে, বাহু আগুসারি
তুমি নিলে বক্ষে টানি, কহ নাই কথা,
কহিতে বুঝেছিলে ভিখারির ব্যথা।
মুছায়ে পথের ধূলি অফুরান স্নেহে-
নিন্দা-গ্লানি-কলঙ্কের কাঁটা-ক্ষত দেহে
বুলাইলে ব্যথা-হরা স্নিগ্ধ শান্ত কর,
দেখিনু দেবতা আছে আজো ধরা ‘পর!

নূতন করিয়া ভালোবাসিনু মানবে,
যাহারা দিয়াছে ব্যথা তাহাদেরি স্তবে
ভরিয়া উঠিল বুক, গাহি নব গান!
ভুলি নাই, হে উদার, তব সেই দান!
উড়ে এসেছিনু ভগ্নপক্ষ চক্রবাক
তব শুভ্র বালুচরে, আবার নির্বাক
উড়িয়া গিয়াছি কবে, আজো তার স্মৃতি
হয়তো জাগিবে মনে শুনি মোর গীতি!
শায়ক বিঁধিয়া বুকে উড়িয়া বেড়াই
চর হতে আন্-চরে, সেই গান গাই!…

ভালোবেসেছিলে মোরে, মোর কণ্ঠে গান,
সে গান তোমারি পায়ে তাই দিনু দান!

৩০
মন্তব্য করতে ক্লিক করুন