মল্লিকা সেনগুপ্ত

কবিতা - ফ্রয়েডকে খোলা চিঠি

মল্লিকা সেনগুপ্ত

পুরুষের দেহে এক বাড়তি প্রত্যঙ্গ

দিয়েছে শাশ্বত শক্তি, পৃথিবীর মালিকানা তাকে

ফ্রয়েডবাবুর মতে ওটি নেই বলে নারী হীনমন্য থাকে

পায়ের তলায় থেকে ঈর্ষা করে পৌরুষের প্রতি

প্রকৃতি সদয় নয়

পুরুষ সদয় নয়

সন্তান সদয় নয়

মেয়েদের প্রতি শুধু ফ্রয়েড সদয়!

এই দয়া কে চেয়েছে! চিত্রাঙ্গদা! জোন অব্ আর্ক!

সিমোন দ্য বোভোয়া না শ্যামল দ্রৌপদী!

“পেনিস-এনভি” বলে একটি শব্দ

পৃথিবীতে এনেছেন ফ্রয়েড সাহেব

ওই যে বাড়তি শুধু পুরুষের থাকে

ওই নাকি মেয়েদের কমতি বানায়

তাই তারা শিশুকালে টলমল করে

বালিকা বয়সে তাই শিবলিঙ্গ আকন্দে সাজায়

খেলাঘর ভরে ওঠে পুতুলে ও বাসনকোসনে

কারণ সে নাকি তার মায়ের প্রতিভূ|

অন্যদিকে রোহিতের জন্য থাকে শৌর্যপ্রস্তুতি

জংলাসবুজ উর্দি মার্কিন সেনারা তার ঘরে

ছোটায় মেশিনগান, ট্রা রা রা রা শব্দে সুগঠিত

হয়ে ওঠে পুরুষের আক্রমণ

শাণিত নখরে যদি গাল চিরে দেয়

দিদিমারা খুশি হয় বাড়তি বীরত্বে|

ওই যে বাড়তিটুকু শরীরের, ওই ছাড়পত্র

ওই তাকে পৃথিবীর মালিক বানাবে

রোহিত মালিক হবে কোন পৃথিবীর?

যেখানে রোহিতা তার সহকারী! অধম লিঙ্গ!

ছুটন্ত ঘোড়ার পিঠে খোলা তলোয়ার

বিশ্ববিজয়ে যাবে সম্রাট রোহিত

আর তাকে যুদ্ধ সাজ পরাবে তার মা বোন বউ

এই শুধু চেয়েছেন আপনি ফ্রয়েড!

উল্টোদিক থেকে যদি ঘোটকীর পিঠে কোনও নারী যোদ্ধা আসে

সে কী অস্ত্র ফেলে দেবে ভীষ্মের মতন….

“নারীর বিরুদ্ধে আমি অস্ত্র ধরবো না”

অর্থাৎ নারীকে আমি দেব না অস্ত্রের অধিকার….

এই লিঙ্গরাজনীতি আদি পুরুষের

ফ্রয়েড আপনি নিজে বাড়তির দলে বলে ধরেই নিলেন

মেয়েরা কমতি, তাই পুরুষের প্রতি তারা ঈর্ষাকাতর!

আমার শৈশবে কোনও লিঙ্গঈর্ষা কখনও ছিল না

আত্মপরিচয়ে আমি সম্পূর্ণ ছিলাম

আজও আমি দ্বিধাহীন সম্পূর্ণ মানুষী

তৃতীয় বিশ্বের এক স্পর্শকাতর কালো মেয়ে

আজ থেকে আপনার বিরুদ্ধে দাঁড়াবে

কে অধম কে উত্তম বাড়তি কে কমতি কোনটা….

এই কূট তর্কের মিমাংসা করবার ভার

আপনাকে কে দিয়েছে ফ্রয়েড সাহেব!

পরে পড়বো
৭৫
মন্তব্য করতে ক্লিক করুন