নতুন চাকরি তবু মজা পাচ্ছি কাজটায়।নাইট ডিউটি আমার , সুদীপদা তাড়াতাড়ি আসার কথা বললো কেন জানি না। ওর কথা ফেলতে পারি না। একে ডাক্তার, তার ওপর প্রভাবশালী নেতা।শেষ বয়সে আমার চাকরি করে দিয়েছে। ও আমার কাছে ভগবানের মতো।
ঘরে ঢুকে দেখি ঘরে কিছু লোক জনের ভিড় মেঝেতে ফেলে রাখা হয়েছে আবর্জনা মতো পাঁচটা লাশ পড়ে। এখন অভ্যাস হয়ে গেছে লাস টাস দেখার। কিন্তু আজকের ভয়াবহ লাশগুলো একটু ।আমার পায়ের একদম কাছে চোখ-মুখ সম্পূর্ণ থেঁতলানো। চোখের মধ্যে নয়টা কাঁটাওয়ালা একটা লোহার দন্ড ঢুকিয়ে লোকটাকে মেরে ফেলা হয়েছে। চোখ থেকে জমাট বাঁধা রক্তের বিন্দু টপটপ করে পড়ছে। আমি দেখলাম ডাক্তার বাবু সাথে আসা ছেলেগুলোর মুখে এক ধরনের আতঙ্ক মুখে ফুটে উঠেছে ।
লাশ কাটা ঘরে দাঁড়িয়ে আছে ওরা। সেই আতঙ্ক যতটা না মৃত, বীভৎস্য মানুষগুলোকে দেখে, তার চেয়ে অনেক বেশি আতঙ্ক বোধহয় । ওদের স্যার একটু পর এসেই পড়া ধরা শুরু করবেন সেই ভয়ে। ওদের স্যার আসার পরে পড়া ধরার পর্ব শেষ করে আমাকে আর পোষ্টমর্টেম শুরু করতে বললেন। একটা একটা করে মানুষের পেট চিরে নাড়িভুড়ি উলটে-পালটে দেখতে হলো আমাদের।মাথার খুলি ফাটিয়ে মগজ বের করা হচ্ছে। প্রচন্ড গন্ধ। গন্ধে সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা দায়। ছাত্র নাক চেপে ধরে মানুষ কাটাকুটি দেখছি। ডাক্তার মাঝে মাঝে মজার কোন কথা বলছেন মৃত মানুষটির মারা যাওয়ার কারণ নিয়ে। সেই হাসির কথা শুনে ছাত্রগুলো চাপা স্বরে হেসে ফেলছে।
আমি হাসতে পারি না কারণ আমি ডোম ওদের থেকে নিচু তলায় কাজ করি। ওরাও জোরে হাসা যাচ্ছেনা-কারণ এটা লাশ কাটা ঘর! মৃত মানুষদের সম্মান করতে হয়। ছাত্র গুলো ডাক্তার বাবু কথা গুলো শোনার চেয়ে মানুষ কাটাকুটির ছবি তুলতে ব্যস্ত। হয়তো সোসিয়াল মিডিয়া দিয়ে বাহবা কুরিয়ে নেবে । নয়তো ভিডিও করে বাড়িতে গিয়ে হরর মুভি হিসাবে দেখ বে। দেখতে দেখতে মানুষের স্বভাবজাত পাশবিক রক্তমাখা উল্লাসে মেতে উঠে।
ছাত্র গুলো বেড়াতে যাবে।একটা মৃত মেয়েকে পোষ্টমর্টেম করার জন্য নিয়ে আসা হল।গলার কাছে কালশিটে দাগ বেচারি । জিহবা বের হয়ে আছে।পোষ্টমর্টেম করার আগেই বোঝা গেলো আত্মহত্যা করে মারা গেছে। ।আমার চেয়ে অনেক ছোট বয়সী একটা মেয়ে। এতো তাড়াতাড়ি হার মেনে নিলো।আমার মনে হয় মেয়েটাকে দেখে একটু মন খারাপ হল। খুব সুন্দর দেখতে। কেউ কেউ দীর্ঘ ফেলে দুই একটা মন্তব্য করলো। একজনের মন্তব্য করে বসলো”আরে সুইসাইড করছে ক্যান বুঝস না? নিশ্চয়-ই কারো সাথে লটর-পটর ছিল”!
কথা শুনে মনটা খারাপ হয়ে গেলো কতটা যন্ত্রনা পেয়ে পেয়ে তিলে তিলে একটা মেয়েটা নিজেকে নিঃশেষ করেছে তা ভাবার অবকাশ আমাদের-জীবিত মানুষদের নাই।
কিন্তু লাশ হওয়ার আগে মেয়েটা মা ছিলো,বাবা ছিলো , ছোট্ট পোশাক পরে বেড়ালে নিষেধ করা প্রেমিক ছিলো।হয়তো তার মৃত্যুর আগে সে অন্য কারোর স্বামী হয়ে গিয়েছিলো।মেয়েটি চোখটা প্যাঁচার চোখের মতো সুন্দর। হয়তো ও চোখে স্বপ্ন অনেক স্বপ্ন ছিলো।তার ঘরে একটা প্রিয় জানলার কোন ছিলো।হয়তো সকালে শালিক দের মুড়ি দিতো।অপঘাতে মৃত্যু!পাখিরা এসে দেখবে ফাঁকা জানলা।যে বাস এ করে অফিস যেতো তারা জানবেও না তাদের এক সহযাত্রী হটাৎ পালিয়ে গেছে। ও যে রাস্তায় হাঁটতে যেতো, সেই রাস্তায় ওকে না দেখতে পেয়ে হয়তো দীর্ঘশ্বাস ফেলবে ওর প্রাক্তন প্রেমিক ও।মা শূন্য বুকে কাঁদবে,বাবা কি করবে বুঝে উঠতে পারবে না। ওকে হুট করে নিজেকে শেষ করে দিয়েছে। মানে ওর কোনও বন্ধু ছিলো না।তাই সবাই “ইস কি ভালো ছিলো “ এই টুকুই বলবে।
মেয়েটা সাজতে ভালোবাসে। জামার সাথে মেচ করে আইলাইনার দিয়েছে। মানে হয়তো ওর না receive করা কিছু পার্সেল আসবে হয়তো
তাতে সাধের কিছু সাজের জিনিস, আসবে আজ বিকেলে।
হঠাৎ ফোন করলো,সুদীপদা। ওরা আসবে ঘন্টা খানেক মধ্যে। কিডনি, চোখে আর কি সব খুলে নেবে মেয়েটা দেহ থেকে।লাশটার ওপর কোনো দাবিদার নেই। বনেদী ঘরের মেয়ে মডেলিং করতো। হঠাৎ করেই আত্মহত্যা করেছে।
আমাকে নীলাঞ্জনা ছেড়ে দিয়েছে ও এখন মডেল হয়েছে। আমার মডেল টডেল ওপর খুব রাগ । কিন্তু মেয়েটা খুব মিষ্টি দেখতে। ওরা আধ ঘন্টা পরে আসবে। আমি এই সুযোগে চেখে দেখিনা ওর শরীরটা।
ভাগিস ওর শরীরটা চেখে দেখলাম। নয়তো বুঝতে পারতাম না ওর মৃত্যুর কারণটা। ও কারো কাছে শরীর বিক্রি করেনি যে। কুমারীর রক্তের স্বাদ পেলো আজ আমার পৌরুষত্ব। লাশ বলে ওর উপায় ছিলো না আমাকে বাধা দেবার।
মন্তব্য করতে ক্লিক করুন