প্রিয় খাবার
প্রিয় খাবার
মানব মন্ডল

গল্প - প্রিয় খাবার

মানব মন্ডল
সোমবার, ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫ জীবনবাদী, ভালোবাসা

রেস্টুরেন্টের খাবারের মানে শুধু আনন্দ পাওয়া নয়।  এর একটা বিশেষ গুণ আছে—এটা শুধু মুখে একটা ভালো স্বাদ দেয় না, স্মৃতি তৈরি করে।কোনো খাবার হয়তো মনমতো হলো না, কিন্তু সেই পরিবেশ, সেই মুহূর্তটা থেকে যায় চিরদিন হয়ে। রেস্টুরেন্টের একটা টেবিলে বসে আমরা শুধু খাবার ভাগ করে খাই না। ভাগ করি জীবনের গল্প, হাসি, আর কিছু না বলা অনুভূতি।সেই মুহূর্তগুলো হয়তো ছবিতে ধরা পড়ে না, কিন্তু মন জানে—ওই সময়টাই ছিল সেরা ছিলো।
ক্ষুধা শুধু পেটের না, হৃদয়েরও!রেস্টুরেন্টে এক প্লেট খাবার, সাথে প্রিয় মানুষের হাসি — এর চেয়ে বড় কোনো বিলাসিতা জীবনে চাই না।

আসলে খাবার তো কেবল পেট ভরানোর জিনিস নয়,এটা একটা অনুভব, একধরনের ভালোবাসা। রেস্টুরেন্ট খাবার চেয়ে আবার মায়ের হাতে রান্না করা ভুনা খিচুড়ি, প্রিয়জনের তৈরি গরম চা, বা বন্ধুবীর  সঙ্গে ভাগ করা একটা ফুচকা—সব খাবারের সাথেই থাকে যেনো একেকটা গল্প, একেকটা স্মৃতি। আর ভালো খাবার যখন মন ছুঁয়ে যায়, তখন তা প্রশংসা না করে থাকা যায় না।
কিন্তু রেস্টুরেন্ট কুকের প্রশংসা করি না, প্রশংসা করি যে বিল মেটাল তার।
আমি প্রায় প্রায়ই হারিয়ে যাই, এর কারণ রোমান্টিকতা নয়, অলসতায়। প্রবল আলস্যবোধের কারণে মাঝে মাঝে নিজেকেই নিজের খুঁজতে ইচ্ছে হয় না। হয় না তখন কিছু একটা ভালো খাবার রান্না করে খেয়ে নিয়ে থাকি। শেষ রেস্টুরেন্ট খেয়ে ছিলাম ছুটকি নিয়ে। তখন বারবার মনে পড়ছিলো একবার মাত্র তৃণা নিয়ে রেস্টুরেন্ট খেয়ে ছিলাম। সাথে অবশ্য অভ্র ছিলো।
ও পিজ্জা ওর্ডার দিয়ে ছিলো।
আমি জিজ্ঞাসা করেছিলাম পিজ্জা কি আপনার প্রিয় খাবার। ও বলেছিলো “না ওটা অভ্র প্রিয় খাবার, অবশ্য ওকে রেস্টুরেন্টের খাবার বেশি খাওয়াতে পারি না। তাই পিজ্জা ছাড়া ও তেমন খাবার ও চেনে না। তাছাড়া আপনার পকেটে যে বেশি পয়সা নেই সেটাও আমি জানি। ”
না ও খোঁচা মারে নি হয়তো এটাই এডজাস্টমেন্ট
তৃণাকে আমি বিয়ে করতে চেয়ে বলেই ও ওর জীবনের গোপন সত্যটা প্রকাশ করেছে আমার কাছে। ও যে একটা বাচ্চার মা সেটা কেউ জানে না। তাই হটকরি ভাবেই আমি ওদেরকে রেস্টুরেন্টের খাবার খাওয়াতে নিয়ে এলাম। ”
আমি কিন্তু নিজে প্রবাসে রান্নার কাজ করি। পিজ্জা আমার প্রিয় খাবার । এটা আসলে বহুমুখী এবং সুস্বাদু। ক্রিস্পি ক্রাস্ট,  টমেটো সস বিভিন্ন মসলা, চিজ দিয়ে একটি নিখুঁত খাবারের জন্য তৈরি করে। আমি ক্লাসিক পেপারোনি থেকে শুরু করে পালং শাক এবং ফেটার মতো আরও অনন্য বিকল্প পর্যন্ত বিভিন্ন টপিংস নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার চেষ্টা করি। এটি বন্ধুবান্ধব এবং পরিবারের সাথে ভাগ করে নেওয়ার জন্য দুর্দান্ত খাবার এবং প্রত্যেকের স্বাদ ভাগ করে নেওয়া যায়। এটি মধ্যরাতের  খিদে পেলে বা কোনও বিশেষ অনুষ্ঠানের জন্য খাবার হিসেবে ও, পিজ্জা কখনই হতাশ হয় না। এটি কেন অনেক লোকের ডায়েট হিসেবে প্রিয় খাবারের তালিকায় থাকে। 
জানেন আমি কোন দিন প্রেম করার সুযোগ পাই নি। আসলে গরীব ঘরের ছেলে, কেরিয়ার গোছাতে গিয়ে প্রেম করার সুযোগ হয় নি। তাই রেস্টুরেন্ট যাবার অভ্যাস টা আমারো নেই। তৃণা যেমন শেষ বয়সে মতো হঠাৎ করে পছন্দ হয়ে যাওয়া মানুষ। তেমনি পিজ্জা আমার একটা পচ্ছন্দের খাবার প্রিয় খাবার বলে দাবি করতে পারলাম না। আসলে আমি খিদে মেটানোর জন্য খাবার খাই। আসলে গরীব মানুষের বোধহয় প্রিয় খাবার বলে কিছু থাকে না।
তবে পিজ্জা মোটামুটি গরীব মানুষের খাবার।
পিজ্জার ইতিহাস  প্রাচীন হলেও, এর ইতিহাস ঘটলে দেখা যাবে এর সূচনা হয়েছিল   ফ্ল্যাটব্রেড তৈরি থেকে। আজকের পিজ্জার জন্ম হয় ইতালির নেপলস শহরে, প্রথমে শ্রমিক শ্রেণির জন্য দ্রুত ও সাশ্রয়ী খাবার হিসেবে এটি শুরু হয়। ১৬০০ সালের কথা, তাদের রাস্তার পাশে খোলা আকাশের নিচে ছোট ভ্রাম্যমান দোকানে তখন শুরু হয় সমতল রুটির উপর বিভিন্ন টপিংস দিয়ে তৈরি একপ্রকার খাবার, যা যেকোনো সময় চলার পথে তারা যাতে এটা খেতে পারতেন।

১৮৩০ সালের আগে পর্যন্ত খোলা আকাশের নিচেই বিক্রি চলতো , পিজ্জা নামক এই টপিংস দেয়া রুটির। ১৮শ বা ১৯শ শতকে নেপলসে রুটির ওপর টমেটো ও পনিরের প্রলেপ দিয়ে পিজ্জার আধুনিক রূপটি আসে।তবে ১৮৮৯ সালে ইতালির রানীকে সম্মান জানাতে “পিজ্জা মার্গারিটা” তৈরি করা হয়, যা ইতালির পতাকার রঙের সাথে মিল রেখে টমেটো, মোজারেলা ও তুলসী দিয়ে তৈরি হয়।
১৯৪৫ সালে যুদ্ধফেরত এক সৈনিক, ইরা নেভিন, গ্যাসচুল্লি চালিত পিজ্জা ওভেন উদ্ভাবন করেন যার ফলে, কাঠ-কয়লার ঝামেলায় না গিয়ে এবং স্বল্পমূল্যে পিজ্জা তৈরির পথ উন্মুক্ত হয়। বিশ্বে এর আরো খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে।
যাইহোক প্রিয় মানুষের খাবার নাম না জানা কিন্তু খুবই লজ্জার। আমি ওকে বারবার ওর প্রিয় খাবারের নাম জানতে চাইলাম। ও বললো ” আপনার দিব্যি বলছি আমার কোন প্রিয় খাবার নেই যা পাই তাই খাই। ” তারপর  জিব কেটে বললো ” সরি আপনার দিব্যি দেওয়া উচিত হয়নি।”
আমি মনে মনে খুশি হয়েছিলাম উনি আমার দিব্যি কেটেছে বলে। আরো খুশি হলাম আমাদের মধ্যে মিল খুঁজে পেয়ে। আমাদের দুজনের কোন প্রিয় খাবার নেই।

, ,,,

২৩
মন্তব্য করতে ক্লিক করুন