শ্রী কুমার বাবুর আমন্ত্রণ এবার কাজে আসলো। শ্রীকুমার বাবুর গড়িয়া হাটের বাড়িতে বহুবার গেছি, বাংলা স্টিট পত্রিকার জন্য লেখা আনতে। লেখা মান খুব নিম্নমানের। তবুও প্রতিবার লেখার জন্য হাজার টাকার একটা করে চেক দিয়ে আসতে হতো। মাসে চার বার লেখা বের হতো অথচ সারা মাস ধরে ঐ ধরনের লেখা গুলোকে পুনর্লিখন করে। পত্রিকা কে সাজিয়ে গুছিয়ে, বাজারে বিক্রি যোগ্য করে আমি মাইন পেতাম চার হাজার টাকা।
বারবার আমি সহ সম্পাদক হিসেবে সম্পাদক মহাশয় বলেছিলাম, নবাগত বহু সাহিত্যিক বন্ধু আছে ওনার থেকে ভালো লেখে তাদের লেখা ছাপানো হোক। তখন উনি বলতেন, শ্রী কুমার বাবুর লেখা ছাপানোর জন্য নাকি বাংলা স্টিট পত্রিকা প্রকাশ করা শুরু হয়েছে উনি নাকি এমন প্রভাব শালী ব্যাক্তি।
হু ওনার ধারাবাহিক উপন্যাস পড়তে পড়তে দেখতাম, তিনি কখনো কিশোর কুমার কোলে খেলা করেছেন, কখনো আবার সস্তিকার সাথে ডিনার পকরতে রেস্টুরেন্ট গেছেন। মোটামুটি ভাবে তিনি পেশাদার অভিনতা এমন একটা পরিচিতি পেয়েছিলাম লেখাতে কিন্তু উনার অভিনয় দেখার সুযোগ হলো না কোন দিন। কিন্তু স্টুডিও পাড়ায় যেই দিন দেখা হলো সেইদিন ওনার দেশের বাড়িতে দূর্গা পূজায় আমন্ত্রণ পেলাম। একটা বিখ্যাত ভুতের সিনামা তৈরি জন্য ওনার দেশের বাড়িটা ভাড়া নেওয়া হয় ছিলো। তার পেমেন্ট নিতে এসেছিলেন উনি, ঐ সময়ে জানতে পারলাম ওনার বাড়িতে দূর্গা পূজা হয়। আর বোনেদী বাড়ির পূজা নিয়ে একটা উপন্যাস লিখিত চাইছিলাম সেটা জেনেই উনি আমন্ত্রণ দিলো আমাকে। তবে উনি বললেন উনার কিন্তু জমিদার নয় জোরদার।
আবুধাবি থেকে ফিরে এসেছি এবার কাউকে জানাই নি । সপ্তমী রাতে দেশে ফিরে সিধে ওনার বাড়িতে । অষ্টমী নমমী গেলো। দশমী দুপুরে খাবার টেবিলে হঠাৎই দেখা নমিতার সাথে। আমার সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে যাচ্ছিলো শ্রীকুমার বাবু। নমিতা বললো ” দাদা তোমার বন্ধু আমাকে অচেনার ভান করলেও, ও আমার পূর্ব পরিচিত। আমার সাথে এমএ পড়েছে। আমি সেই সময় ওকে হিংসা করতাম। পড়াশোনায় ভালো ছেলে কিন্তু বড় অহংকারী। আমার মতো সুন্দরী মেয়েদের পাত্তা দিতো। একদিন সবার সামনে বলেছিলো। সৌন্দর্য স্থায়ীত্ব ক্ষণ স্হায়ী, যোগ্যতা অর্জন করুন সেটা চিরকাল থাকবে। এমএ তে আমি ওর থেকে অনেক বেশি নম্বর পেয়েছিলাম। কম নম্বর পেয়েছিলো ও। তাই অনেক আওয়াজ মেরেছিলাম। ও কিছু না বলে চলে গেয়েছিলো। বলতে পারিস হারিয়ে গিয়েছিল। ওর প্রেমিকা স্রেষ্টা আমাকে জানায় ওকে বলা উচিত হয় নি কথা গেলো কারণ ও পরীক্ষা দিতে মুম্বাই থেকে এসেছিল, ও নাকি একটা হোটেলে কাজ করছিলো। স্রেস্টা টিকিট কেটে দিয়ে ছিলো বলে ও পরীক্ষা বসতে পেরেছিলো। ওকে হারিয়ে আমি মজা পাই নি তাই। তবে ক্ষমা চাওয়ার সুযোগ হয়নি। কোথায় হারিয়ে গেছিলো কে জানে। ”
আমি বললাম ” আমি হারিয়ে যাই নি নিজেকে খুজতে ব্যাস্ত ছিলাম। তবে স্রেষ্টা আমার প্রেমিক নয়। বন্ধু। ”
নমিতা বললো ” থাক ও সব কথা। তোর সাথে নীলাঞ্জনা ডিভোর্স হয়েছে স্রেষ্টা জন্য সেটা আমি ভালো করেই জানি, স্রেষ্টা, মধু সবাই আমরা ভালো বন্ধু। ”
শ্রী কুমার বাবু বলেন ” আপনি বড় ছুপা রুস্তম মশাই, সবাই তো জনে আপনি অবিবাহিত। ”
আমি কথা ঘোরানো জন্য বললাম ” শ্রী কুমার বাবু ঢাকের শব্দটা কেমন যেনো বদলে গেছে। দশমী মা চলে যাবে। তাই ঢাকের শব্দটি ও করুণ হয়ে গেছে।”
শ্রী কুমার বাবু ” আমার স্ত্রী জুই বেচে থাকলে বোধনে আরো মজা হতো। আমাদের পারিবারিক পূজাকে বারোয়ারি পূজা করেছে ও। ও জানেতো আমাকে ভুল বুঝে।,,”
ওনাকে থামিয়ে দিয়ে নমিতা ধমক দিয়ে উঠলো
” দাদা কোথায় কি কথা বলতে হয় তুমি এখনো জানলে না। সৌদামিনী ডাকছে গেছে অনেকক্ষণ নীচে চলো আগে।
নীলকণ্ঠ এসে খবর দিলো,
নবমী শেষে দশমী এলো,
এবার কৈলাশে ফেরার সময় হলো,
একথা শুনে মায়ের চোখে জল এলো।
সকাল থেকে বৃষ্টি শুরু আকাশের মুখ ভার,
মা চলে যাবেন তাই মন খারাপ আমাদের সবার।
কতো টাকা খরচ করে মাটির প্রতিমা বানিয়ে আবার সেটাকে কয়েক দিন পর জলে ভাসিয়ে দেয় কেন মানুষ ?
সনাতন ধর্মের বৃহত্তর একটা পূজা হচ্ছে দূর্গা পূজা। সনাতন ধর্ম বিশ্বাস করে, “মানুষের দেহ পাঁচটি উপাদান দিয়ে তৈরি” যথাঃ আকাশ, বায়ু, অগ্নি, জল ও মাটি। তাই মৃত্যুর পর এই দেহ আগুনে দাহ করা হয় অথবা মাটি দেওয়া হয়। যে উপাদান দিয়ে এই দেহ তৈরি, মৃত্যুর পর আবার সেই একই উপাদানে মিশে যায়।
ঈশ্বর সর্বত্রই বিরাজিত। প্রতিটি বস্তু, প্রতিটি প্রাণীর মধ্যই তিনি আছেন। তবে, পঞ্চ উপাদানে গড়া এই মানব দেহের প্রতীকী হিসেবেই আমরা পূজার সময় প্রতিমা তৈরি করি মাটি দিয়ে। পরবর্তীতে সেই মাটির প্রতিমায় প্রাণ প্রতিষ্ঠা করে তাকে ঈশ্বর জ্ঞানে পূজা করি। এই প্রতিমা পূজার সর্বশেষ ধাপ হচ্ছে বিসর্জন। জলের মাধ্যমেই যেন মাটির প্রতিমা পুনরায় প্রকৃতিতে মিশে যায়, সেই জন্যই আমরা গ জলে প্রতিমা বিসর্জন দেই।
আমাদের হৃদয়ে যে নিরাকার ঈশ্বর রয়েছে, উপসনার নিমিত্তে মাটির প্রতিমা তৈরি করে তাকে “সাকার রূপ” দেওয়া হয়। পূজা শেষে পুনরায় সেই “সাকার রূপ” কে বিসর্জন দিয়ে নিরাকার ঈশ্বরকে হৃদয়ে স্থান দেওয়া হয়। সেই কারণেই দুর্গা পূজার সময় যখন প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয় তখন মায়ের প্রতি আমাদের প্রার্থনা থাকে, “মা, তুমি আবার এসো আমাদের মাঝে। এই একটি বছর তুমি থাকবে আমাদের হৃদয়ে । আবার, বছর পরে তোমার প্রতিমা গড়ে আমরা সাড়ম্বরে তোমার পূজা করবো।
যে জন্ম নিয়েছে, তার মৃত্যু অনিবার্য। এটাই প্রকৃতির শাশ্বত নিয়ম। ঠিক তেমনি যাকে আবাহন করা হয়, তার বিসর্জনও অনিবার্য। বিসর্জনের মাধ্যমেই “পুনরায় আগমনের” আশা সঞ্চারিত হয়। এই সকল কারনেই আমরা প্রতি বছর হৃদয়স্থ ঈশ্বরের মাটির প্রতিমা গড়ে তাকে বাহ্যিক ভাবে পূজা করি এবং পূজা শেষে বিসর্জনের মাধ্যমে তাকে আবার হৃদয়ে স্থানান্তরিত করি। এটিই প্রতিমা পূজা ও প্রতিমা বিসর্জনের মূল তাৎপর্য।
বিসর্জন হয়ে যেতে এই সাত মহলা বিশাল বাড়িটায় শশ্মানের নিস্তেজ নীরব হয়ে গেলো। লেগেজ গোছাছি এমন সময় শ্রী কুমার বাবু ফোন “আমার শোবার ঘরে আসুন একটু। আপনা পান্ডুলিপিটা আমার নাম বই প্রকাশ করা জন্য প্রকাশক আপনাকে যা দিয়েছে দিয়েছে। আমার তরফ থেকে একটা উপহার আছে আসুন সেটা নিতে।
ওনার শোবার ঘরের দরজা খোলায় ছিলো তবুও
অনুমতি নিয়ে প্রবেশ করে আমি অপ্রত্যাশিত একটি মুহুর্তে সম্মুখীন হলাম। সৌদামিনীর ও শ্রী কুমার বাবু যৌন ক্রীড়া রত। সৌদামিনী আমাকে দেখে একটু বিব্রত হয়ে গেলো। শ্রী কুমার বাবু সৌদামিনীকে বললো” আরে কাপড় জরাছিস কেন, লেখক বাবুকেও তোর যৌবনের স্বাদ নিতে দে। ওকে খুশি কর। দীপাবলি তোকে একটা সোনার চেন দেবো। ”
আমি বললাম ‘ শ্রী কুমার বাবু নারী দেহের প্রতি আমার অতো লোভ নেই তাছাড়া, একটি মেয়ের শরীর পিজা কিংবা চা নয় যে ভাগ করে খাবো। ভালোবাসা হীন সম্পর্কে আমি আগ্রহী নই। ”
কথাটা বলেই আমি বেড়িয়ে এলাম ঘর থেকে তড়িৎ গতিতে। কিন্তু উপলব্ধি করলাম কেউ আমাকে অনুসরণ করছে। পিছনে ফিরতেই দেখলাম নমিতা। আমি জিজ্ঞাসা করলাম “কিছু বলবেন”
নমিতা বললো ” ধন্যবাদ, তুই বদলাস নি বিদেশে গিয়েও ভালো লাগলো। শুয়ে পর কাল এক সাথে কলকাতা ফিরবো। তখন কথা বলব। আপনি বলাটা ছাড়া কাল থেকে আমিও তোকে তুই না বলে তুমি বললো। ঠিক আছে। এখন শুভ রাত্রি। ”
রাত্রি ভোর হতে বেশি বাকি ছিলো না। আমার উঠতে একটু দেরি হয়ে গেলো। বাইরে অনেক লোকের চাপা কথা বার্তা ঘুম ভাঙলো। ছাদ থেকে ভির দেখেলাম পুকুরের কাছে। ভীর দেখে কৌতুহলী হয়ে পুকুর কাছে গিয়ে আমি বাক্যহীন হয়ে পড়লাম। মৃত সৌদামিনী ভাসছে দেবী কাঠামোর সাথে।
ছুটে এলাম অন্তর মহলে। নমিতা চাপ গলায় বললো। ” এইবার তোমাকে আমি ছাড়াবো না। সৌদামিনী তোমাকে ভালোবেসে ছিলো। বৌমুনি তোমার আর মৌ এর সম্পর্ক কথা জেনে আত্মহত্যা করেছিলো। আমি ভেবেছিলাম তুমি বদলে গেছো। সৌদামিনী সাথে তুমি কি করেছো আমি জানি। আমি যদি বোন হয়ে তোমার বিরুদ্ধে যেতে পারি রাহুল নিশ্চিত সাক্ষী দেবে তোমার বিরুদ্ধে। দশমীতে শুধু দেবী বিসর্জন হয় না, রাবনে নিধন ও হয়।”
মন্তব্য করতে ক্লিক করুন