রান্না নিয়ে প্রথম গল্প পাই আমরা। মহাভারতে বর্ণিত আছে যে, পাণ্ডবরা যখন অজ্ঞাতবাসে ছিলেন, তখন ভীম পাচক হিসাবে বিরাট রাজার রান্নাঘরে কাজ করতেন, কারণ তিনি ছিলেন শক্তিশালী এবং তার প্রচুর খাবারের প্রয়োজন ছিল। এই গল্পে ভীমের রান্নার প্রতি ভালোবাসা এবং তার ক্ষমতা উভয়ই প্রকাশিত হয়েছে। আর তার রান্না করা একটি পদ এখনো খুব জনপ্রিয়।
আসলে খাবারের সাথে যে একটি দেশের কত ইতিহাস, কত সংস্কৃতি, কত গল্পগাথা জড়িয়ে যায়, তা বলা যায় না।
প্রাচীন খাবার আভিয়াল (Avial) এটি এক উৎকৃষ্ট উদাহরণ হ’ল। ভীম নাকি এই আভিয়াল তৈরি করেছিলেন। ভারতবর্ষের এক কথায়, সবাই জানেন আভিয়াল একটি অতি প্রাচীন দক্ষিণ ভারতীয় খাবার। ‘আভিয়াল সাধারণত কেরালা আর তামিলনাড়ুতে অতি পরিচিত একটি সম্পূর্ণ নিরামিষ পদ । কেরালা বাসী এই মালোয়ালিদের যে বিশেষ ভোজন, যার নাম শাধ্যা (Sadhya) সেখানে এটি সর্বাগ্রে পরিবেশিত হয়। তামিলদের Chaappaadu তেও এটি অভিন্ন একটি পদ।
পুরাতন পুথি ঘাটলে দেখা যাবে।পশ্চিমঘাট পর্বতমালার ঋষিদের বর্ণনা অনুসারে মোট তেরো রকমের সব্জী, সাথে কারিপাতা আর নারকেল দেওয়া আভিয়াল হ’ল সর্বোৎকৃষ্ট।কিন্তু এই রান্নাটির সাথে ভিমের নাম জড়িত আছে। মোট তিনটি ঘটনায় মধ্যম পাণ্ডব বৃকোদরের ভীমের নাম জড়িয়ে রয়েছে এই পদ রান্নার।
প্রথম গল্পটি হ’ল, পাণ্ডবদের অজ্ঞাতবাসের সময় পাণ্ডবরা যখন বিরাট রাজ্যে পৌঁছলেন তখন সকলে ঠিক করে নিলেন নিজের পছন্দ অনুযায়ী ছদ্মবেশ। ভীম ভাবলেন, রাজামশাইয়ের রান্নাঘরে থাকলে তার খাবারের অভাব হবে না। তাই তিনি ‘বল্লভ’ নাম নিয়ে বিরাট রাজার রঁসুইয়ার দায়িত্ব নেন। পেটুকপনার তাগিদে রাজাকে বোকা বানিয়ে রাজপাকশালায় কাজ তো জুটিয়ে ফেললেন, এদিকে তিনি তো রান্নাই করতে জানেন না। রাজামশাই নতুন শেফের রান্না খেতে চাইলেন। মহা বিপদ, ভীমসেন মনে মনে বললেন, “যা থাকে কপালে, ছেঁড়া কাঁথা বগলে”, তিনি অনেক রকম সবজি কেটে ইয়াব্বড় হাঁড়িতে সেদ্ধ করলেন আর তার ওপরে নারকেল কুরিয়ে ছড়িয়ে দিলেন। শত হলেও ভোজনপ্রিয় মানুষ তো, রান্নার স্বাদ বোঝেন, তাই মনে হয় একটু দই, চালবাটা, কারিপাতা এই সবও মিশিয়েছিলেন৷ একটাই আজকের অভিয়াল। সে রান্না খেয়ে তো রাজামশাই হেব্বি খুশি।
আর আরেকটি ঘটনা ঐ বিরাট রাজা হেসেলেই ঘটে ছিলো, হঠাৎ তলব কড়ায় কাচা ঘুম ভেঙে আসা ভীম যা খুশি একটা রান্না করতে গিয়ে আভিয়াল তৈরি করে।
অন্য ঘটনা ছোট ভিমকে মেরে ফেলার চেষ্টা করেছিলেন শকুনি দুর্যোধন রা। এবং তার শ্রাদ্ধ ব্যাবস্থা ও করা হয়। কিন্তু তিনি ফিরে আসায় সব কিছু বাতিল হয়ে যায়। কিন্তু পেটুক ভীম খাওয়া বাতিল করাটায় রাজী না হয়ে। নিজে এই পদটি রান্না করে।
সাধারণত আভিয়ালে শুধুমাত্র খাস্তা সবজি ব্যবহার করা হয়। আভিয়ালে সাধারণত ব্যবহৃত সবজি হল ওলকচু, রান্নার কলা, চালকুমড়া, গাজর, মটরশুটি, বেগুন, শসা, সজনে ডাঁটা, চিচিঙ্গা এবং শীম ইত্যাদি, আভিয়ালে কলিকট অঞ্চলে করলা ও ব্যবহার করা হয়। কোল্লাম অঞ্চলের আভিয়ালের বিভিন্ন প্রকারের মধ্যে টমেটোরও একটি প্রকরণ রয়েছে। কিছু লোক দই বাদ দিতে বা কাঁচা আম বা তেঁতুলের পাল্প দিয়ে প্রতিস্থাপন করতে পছন্দ করেন অনেকে। এই ব্যঞ্জনটি ঝোল যুক্ত তৈরি করা যেতে পারে বা কিছুটা গোটা রেখে পার্শ্ব পদ হিসেবে তৈরি করা যেতে পারে। এটি সাধারণত ভাতের সাথে খাওয়া হয়। “আভিয়াল” শব্দটি ‘সিদ্ধ’ বা ‘জলেতে রান্না করা’ বোঝাতেও ব্যবহৃত হয়।

মন্তব্য করতে ক্লিক করুন