গল্প শুনতে, পড়তে সবাই ভালো বাসে। কিন্তু নিত্য ঘটে যায় যে ঘটনা, তার কথা কেউ কি শুনতে চায় ? ঘরে যা নিত্য খাই, সেই খাবার লোভে ওপর লোককে কি থাকে। যা নিত্য ঘটে না, কিন্তু ঘটতে পারে, তাই হচ্ছে গল্পের উপাদান। তাই কোন গল্প লেখার আগে আমি গল্প পরি না কারোর। বরং সবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কিছুক্ষণ সময় দিই নিজেকে।
তবে মাঝে মাঝে ভাবি । প্রতিটি মানুষের জীবন এক-একটি বড় গল্প; জীবনের প্রতিটি বাঁক এক-একটি গল্পের প্লট। জীবনে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনা, উত্থান-পতন, চিন্তা-চেতনা, অজানা-কৌতুহল, চাওয়া-পাওয়া, জীবন-জীবিকা, আনন্দ-বেদনা ইত্যাদির মিলিত রুপ-ই গল্প। তাই জীবন নিয়ে গল্প লেখা অনেক সহজ কিন্তু গল্পের মত করে জীবন সাজানো কত কঠিন কাজ। তবে আমি আমার জীবন নিয়ে খুব সন্তুষ্ট। অনেকটা সময় পাই নিজেকে দেবার জন্য।
ধরুন আজ একটা প্রেমের গল্প লিখব। কি করতে হবে আমাকে বা আমাদের?? একটি প্রেম কাহিনী লিখতে, প্রথমে একটি আকর্ষক প্লট তৈরি করুন এবং প্রধান চরিত্রদের বিশ্বাসযোগ্যভাবে বর্ণনা করুন। তাদের ব্যক্তিত্ব ও সম্পর্কের বিকাশ দেখান, যাতে পাঠকদের তাদের প্রতি সহানুভূতি তৈরি হয়। গল্পের অগ্রগতি দেখানোর জন্য অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক বাধাগুলোর উপর মনোযোগ দিন এবং একটি আবেগপূর্ণ ও শক্তিশালী সমাপ্তি নিশ্চিত করুন।
ও আপনাকে বলতে ভুলেই গেছি। আমি কে আমি অফসোরে কাজ করি সাফাই কর্মী হিসেবে। আপনি জানেন কি অফসোর?? সমুদ্রের তলদেশে তেল, গ্যাস, বা অন্যান্য খনিজ সম্পদ উত্তোলনের জন্য যে অবকাঠামো ব্যবহার করা হয়, তাকেও অফশোর বলা হয়। সমুদ্রতীর হইতে দূরবর্তী;সমুদ্রতীর হইতে দূরে; সমুদ্রতীর ছাড়াইয়া;উপকূল থেকে কিছুটা দূরে সমুদ্রে মাঝখানে আমরা কাজ করি।
সাগরের মাঝখানে বাড়িঘর, কারখানা, খাবার জায়গা সব করা থাকে। তবে নিয়ম করা আছে তিন মাসের বেশি কেউ এখানে কাজ যেনো না করে। গল্প পল্ট ভাবতে বার্জে একটা নির্জন কোনে বসছি এক কাপ কফি হাতে, ভাবনার জন্য সুন্দর পরিবেশ সমুদ্র টাও চুপচাপ,নাম না জানা পাখি গুলো তখন ঘুমাতে ব্যাস্ত পাইপ লাইনে ওপর সারি বদ্ধ ছাত্রদের মত বসে। তখন দেখলাম জর্জ ফুটিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছে। আমি জর্জ কে বললাম কত করে বললাম ” দুই বছর কাজ করছিস। এবার গেলি না এখন কেঁদে কি লাভ ..”
জর্জ বললো ” আমি আমার বোনকে ডাক্তার বানাতে চাই। আমাদের দেশে চিকিৎসা ব্যবস্থা এখন ভালো না জানিস। ”
আমি বললাম” কিন্তু এখন কেঁদে কি লাভ??”
জর্জ বললো ” ওরা সত্যই আমাকে একটা টাকা দেবে না। ”
জর্জের বাড়ি ঘানা, ও 89 দিন কাজ করার পর দুই দিন জন্য আবুধাবি চলে যায়, তার ফলে ওর সাইন অফ হয় যায়। আবার দুই দিন পর সাইন ইন করে 89 দিন কাজ করে। এই ভাবে নিয়মকে ফাঁকি দিয়ে কাজ করেছ দুই বছর এই লোকেশনে। আপনি বলবেন নিয়মকে ফাঁকি দিয়ে মানে। আমাদের এখানে আমরা 12 ঘন্টা কাজ করি টানা। এখানে কোন দিন ছুটি থাকে না কথা বলার মতো মানুষ থাকে না। আমরা কাজ করি বিভিন্ন বিষাক্ত গ্যাসের মধ্যে। তাই ৯০ দিনের বেশি কাজ করার নিয়ম নেই এখানে। কারণ শরীর ও মনের বিশ্রাম প্রয়োজন হয়।
89 দিন কাজ করে দুই দিন পর ফিরে আসাকে ফিল্ড ব্রেক বলে। এটা করলে আমরা বেশি টাকা পাই। আসলে অফসোর কাজ করা কর্মীদের সাথে সাধারণ কর্মীদের অনেক পার্থক্য থাকে। এদের অনেক প্রশিক্ষন নিতে হয়। নিজের জীবন কে নিরাপদ রাখতে। হঠাৎ আগুন লাগলো, কেউ অসুস্থ হলো, কিংবা কোনো বিষাক্ত গ্যাস নির্গত হলো কি করবেন আপনি?? বাইরে থেকে কেউ সাহায্য করার নেই। আপনাকে নিজেকে বাচাতে হবে। সমুদ্র মাঝ খানে আগুন লাগলো দম কল আসবে না। মহুর্তের মধ্যে পুরে শেষ হয়ে যাবে সব কিছু, আপনি দক্ষ না হলে নিজেকে বাচাতে পারবেন না। তাই বিশেষ প্রশিক্ষন প্রাপ্ত কর্মীদের কাজে নেওয়া হয় এখানে। যারা হঠাৎ দূর্ঘটনায় হেলিকপ্টার সমুদ্র মাঝে পড়ে গেলেও নিজেকে বাচিয়ে নিয়ে সাহায্যের অপেক্ষা করতে পারে।
ফিল্ড ব্রেক নেওয়া মানে কোম্পানি গুলোকে একটা নতুন কাজের মানুষ প্রশিক্ষন দিয়ে তৈরি করতে হয় না। মানে অনেক খানি টাকা বাঁচে। তাই যে ফিল্ড ব্রেক যা, তাকে ছুটিতে থাকাকালীন মাইনেটা আর বিমান ভাড়া টা দিয়ে দেওয়া হয়।
আমাকে চুপ থাকতে দেখে ,”জর্জ বললো ওরা কি আমাকে টাকাটা দেবে না। ”
আমার হঠাৎ মনে পড়লো একটা ঘটনা। আমি তখন সৌদি আরবের কাজ যোগ দিয়েছি। রাতের গেলি বয়। মানে রান্না ঘরের সাফাই কর্মী। রাতে এক বস্তা আবর্জনা নিয়ে গিয়ে কম্পাটর মেশিন কাছে গেছি। অমনি একজন ফিলপিনি এসে আমাকে খুব বকাঝকা করলো কেন আমি একা বাইরে গেছি। আমি ভয়ে জরসর ছিলাম নিয়ম ভঙ্গ করেছি। টুলবক্স মিটিং সকালে অনেক কথা শুনতে হবে। ব্রেক ফ্টাস টেবিলেই জানিয়ে দিলাম ক্যাম্প বসকে সব ঘটনা।সব শুনে উনার চোখ বড় বড় হয়ে গেলো । তবে তিনি অভয় দিলো লোক টা কাউকে কিছু বলবে না। কারণ উনি মৃত। তারপর থেকে আমি কোন দিন রাত একা ময়লা ফেলতে বেড়াতাম না।
আমি জর্জ কে বললাম ” তুই একা এলি কেন ময়লা ফেলতে। ”
ওর চোখে জল ।
আমি বললাম ‘ তোর বডিটা পাওয়া গেছে। কিন্তু আমার বাবা মা তো বিশ্বাস করছে না আমি মৃত। আমার বডি তো পাই নি ওরা। জানিস আমার বন্ধবী ভাবছে আমি ওকে পয়সা পাঠাবো না বলে ওর মেসেজের রিপ্লাই করছি না । ”
জর্জ নির্লিপ্ত ভাব বললো ” আমার বডি নিয়ে ওরা কি করবে?? ওদের তো টাকার দরকার… “, ,,
মন্তব্য করতে ক্লিক করুন