আলপনা
আলপনা
মানব মন্ডল

গল্প - আলপনা

মানব মন্ডল
শুক্রবার, ১০ অক্টোবর ২০২৫ অন্যান, জীবনবাদী

#আলপনা
সহজ কথায় আলপনা,আলিম্পন্ হল সাধারণত একটি বা দুটি রঙের সহজ বিমূর্ত (abstract) রেখাচিত্র ,কারুকার্য লেপন করে করা ; বাড়ির চৌকাঠে, আঙিনায়, বিয়ের পিঁড়িতে, হিন্দু পূজা মণ্ডপে ইত্যাদি জায়গায় । তবে সাদা আলপনা খুব চল বেশি। এটি মূলত ক্ষণস্থায়ী লোকশিল্প। সমাজজীবনে প্রচলিত নানাবিধ অনুষ্ঠান ও গৃহসজ্জার জন্য আলপনা অঙ্কন করা হয়।
আলিম্পান’ শব্দটি ৎএকটি সংস্কৃত শব্দ থেকে উদ্ভূত, এর অর্থ ‘কোট করা’ বা ‘প্লাস্টার’ করা। কেউ কেউ দাবি করেন।শব্দটির মূলটি অনার্য হতে পারে, যা ‘আইলপোনা’ থেকে উদ্ভূত – ‘আইল’ বা বাঁধ তৈরির শিল্প, বাড়ি, পাড়া বা গ্রামকে নিরাপদ এবং সমৃদ্ধ রাখতে বিশ্বাস করা হয়।
সকল বাঙালি বাড়িতে উৎসবের আগের দিন আলপনা অঙ্কন করা হয়। এটি এমনই এক ঐতিহ্যবাহী বাঙালি চিত্রশিল্প, যা বহু শতাব্দী ধরে প্রজন্মের মধ্য দিয়ে চলে আসছে!

আলপনা হলো বাংলার একটি প্রাচীন ঐতিহ্য, আঙুলে আঁকা জ্যামিতিক বা মুক্ত হাতের মোটিফের এই শ্রমসাধ্য নকশাগুলি, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন নামে পরিচিত। বাংলা ও আসামে এটি আলপনা নামে পরিচিত, বিহারের একে অরিপানা, ওড়িশায় জিন্নুতি, মহারাষ্ট্রে রঙ্গোলি, মণিপুরে পাখাম্বা, তামিলনাড়ুতে কোলাম এবং আলমোড়া ও নৈনিতালে আপনা বলা হয়।

আলপনা চালের আটা ব্যবহার করে আঁকা হয়। এর উদ্দেশ্য এটি ভূতযজ্ঞ । মানে পিঁপড়া এবং অন্যান্য পোকামাকড়ের মতো ক্ষুদ্র প্রাণীদের জন্য চালের আটার নৈবেদ্য দেওয়া। আবার, চালের গুড়ো গ্রীষ্মকালে বসন্ত প্রতিরোধের জন্য ব্যবহৃত হয় আজও চালের গুড়ো প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসাবে ভারতের বিভিন্ন অংশে শিশুদের মুখে প্রয়োগ করা হয়।

তবে শিল্পটি বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া পথে, কারণ বাজারে এসে গেছে আলপনার স্টিকার। কিন্তু আল্পনার ইতিহাস অনেক প্রাচীন এবং সম্ভবত কৃষিভিত্তিক সমাজে এর উৎপত্তি, যেখানে এটি সমৃদ্ধি ও পবিত্রতার প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হতো। আলপনার উৎপত্তি সম্ভবত কৃষিভিত্তিক সমাজে, যেখানে এটি উর্বরতা ও সমৃদ্ধির প্রতীক হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
আলপনা লক্ষ করবেন।পদ্মফুল, ধানের গুচ্ছ, সূর্য, মই, লক্ষ্মীর পদচিহ্ন, শ্রীকৃষ্ণের শিশু পদচিহ্ন, মাছ, পান, শঙ্খলতা ইত্যাদি বিভিন্ন সাধারণ ও বিমূর্ত নকশা থাকে।
আজকের যুগের Abstract Art’-এর গোড়ার কথা তখনই রচিত হয়ে গিয়েছিল সবার অগোচরে পল্লীগ্রামের মাটিতে।
অবনী ঠাকুরের কথায়

“আলপনার ছবি শেখাও যেমন শেখানোও তেমনি সহজ, কেননা সহজে যা মনে আসে হাতে আসে চোখে পড়ে তাই হলো আলপনা।”

গ্রাম বাংলার ব্রত আলপনার সহজ পাঠ। সেখানে একদিকে যেমন ছিল শঙ্খলতা, কলমিলতা ও ষষ্ঠী ঠাকরুণের আলপনার মতো বিরল সৌন্দর্যের উদাহরণ, আছে। যার মধ্যে সহজ রেখায় গভীর মনন ও দক্ষতার প্রকাশ ঘটেছে, তেমনি অন্যদিকে ছিল দুঃখিনী সেইসব মায়েদের ও মেয়েদের আলপনা, যে আলপনায় তাদের আশা, আকাঙ্খা ও মনোস্কামনার ছবি রেখার সারল্যে ধরা পড়েছে। তবে আলপনায় নিখুঁত দক্ষতা নেই, নেই সচেতন শিল্পবোধসঞ্জাত নির্মাণ।

তাই চাল পিষে পেস্ট তৈরি করে এই সময়সাপেক্ষ নকশাগুলি অঙ্কন করার কাজটি অত্যন্ত আবেগপূর্ণ; কেবলমাত্র একটি নস্টালজিক স্মৃতি হিসাবে নয়, বরং একটি উল্লেখযোগ্য সামাজিক অবদান হিসেবেই সংরক্ষণ করা প্রয়োজন।

পরে পড়বো
৮০
মন্তব্য করতে ক্লিক করুন