ভার্চুয়াল ফ্রেড
ভার্চুয়াল ফ্রেড
মানব মন্ডল

গল্প - ভার্চুয়াল ফ্রেড

মানব মন্ডল
বৃহস্পতিবার, ০৯ অক্টোবর ২০২৫ জীবনবাদী, ভালোবাসা

ভার্চুয়াল’ ফ্রেড শব্দ টি আমার কাছে খুবই একটা ঋণাত্মক শব্দ। বন্ধুত্বের আন্তরিকতা থেকে বিনোদন বেশি এই সম্পর্কে। তবে করেছে ভার্চুয়াল সম্পর্ক গুলো গ্রাস করছে আমাদের জীবন আজ কাল।  আমি না নেট দুনিয়ায় পারস্পরিক ব্যবহার সংক্রান্ত একটি গবেষণাপত্র বলছে, বিশ্ব জু়ড়ে বিবাহ-বিচ্ছেদের অন্যতম কারণ হয়ে উঠছে সোশ্যাল মিডিয়া। কারণ, সঙ্গীর তুলনায় ভার্চুয়াল বন্ধুরাই বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে। যার জেরে বাড়ছে সন্দেহ। এ সবইএর জন্য সম্পর্কে জটিলতা বাড়াচ্ছে।
আমি প্রবাসী। কোন ওয়াইড কলার জব করি না। অফোসর কাজ করি। আমি এমন একটা ওর্কার কালচার কাজ করি যেখানে সবাইকে দেখেছি ভার্চুয়াল ফ্রেড বনাতে । ভার্চুয়াল জগতে ভার্চুয়াল বন্ধুত্ব আর প্রেম পড়ে , অনেকেই  ধোঁকা- প্রতারণা খেয়েছে।
তাই আমি এই ভার্চুয়াল ফ্রেড বিষয়টিকে বিশ্বাস করতাম না কোন দিনই। আসলে আমরা “ভার্চুয়াল”  (Virtual)  বলতে  কি বুঝি, যা প্রকৃত অর্থে বাস্তব নয়, কিন্তু বাস্তবের মতো অনুভূতি সৃষ্টি করে, এমন কোনো কাল্পনিক বা কৃত্রিম অবস্থাকে বোঝায়। 
আমাদের জীবনের গাড়ি ডাইভার আসলে অন্য কেউ । সাহিত্যের প্রতি প্রেমবোধ থেকে ফেসবুকের বিভিন্ন লেখনি নির্ভর গ্রুপে যুক্ত হয় ছিলাম আমি। তিরিশের কাছাকাছি নারী অনু সাথে পরিচয়। ও আমাকে এক ওয়েবসাইট লেখার আহবান জানায়। কিন্তু প্রথম কথা বার্তা কিছুই হতো না। ব্যস্ততার মাঝেও, কৌতুহল ও ভালোলাগার মাত্রা অন্য পরশ পায় ভারচুয়াল ফ্রেন্ডে হিসেবে আগমনে হয় । বয়সের পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও একসময় তারা ভালো বন্ধু হয়ে যায় । আমার প্রতি অনু ভালোলাগার কথাগুলোও  লীন হয়। একটুখানি নীলবোধের ছোঁয়া লাগে কল্পনায় ।
কল্পনায় বলছি কেন??  ও রূচীশিল মেয়ে ছিলো। ফেসবুক ওর কোন প্রফাইল ফোট ছিলো না। এমন কি ওই ওয়েব সাইটের  ও এডমিন ছিলো অথচ সেখানে সংগঠনের অনুষ্ঠানেও ওর ফোট ছিলো না।
ও বলতো সামাজিক মাধ্যমে কোন ফোট দেবে না। আর একান্ত ব্যক্তিগত ছবি না দেওয়ার তো ঘোর বিরোধী ছিলো। ওর কথাকে আমি শ্রদ্ধা এবং সমর্থন করি। অনেক তরুণ তরুণীরাই ,বিশেষ করে মেয়েরা ফেসবুকে নিজেদের সৌন্দর্য জাহির করার আগ্রহে নানান অঙ্গ ভঙ্গিমায় ছবি তুলে ফেসবুকে প্রকাশ করে। এটা খুবই অনুচিত। ছবিটি দেয়ার সময় মেয়েটি হয়ত কল্পনাও করে দেখছে না যে কত পুরুষের কাছে এই ছবি যৌন উত্তেজক হিশাবে বিবেচিত হবে, এবং তারা হয়তো ছবিটি ব্যক্তিগত সংগ্রহে রাখবে। শুধু তাই নয়, ছবিটি তারা ব্যবহার করবে বিভিন্ন পর্ণ সাইট ও পেজে। তাই ফেসবুকে ছবি আপলোড করবার সময় প্রাইভেসির দিকে মনোযোগের পাশাপাশি রুচিশীলতার পরিচয় দিন। এমন কোনও ছবি আপলোড করবেন না, যা যৌন উত্তেজক পোশাকে বা ভঙ্গিমায় তোলা।
ওর কথা সত্যি তো  যে মানুষটিকে আপনি বাস্তবে চেনেন না পর্যন্ত, তাকে কি করে অনুমতি দিচ্ছেন আপনার ব্যক্তিগত ছবি গুলো দেখবার জন্য? আপনার ছবি দেখে হয়তো অনেকেই লাইক/ কমেন্ট করছে , কিন্তু সেই ফাঁকে চুরিও হয়ে যাচ্ছে আপনার ছবি। অনেকেই হয়ত তা সেভ করে রাখছে নিজের কম্পিউটারে। আর সময় সুযোগ বুঝে তা ব্যবহার করছে ফেক আইডি ব্যবহার করতে, কিংবা বিভিন্ন পেজে নিজেদের স্বার্থ উদ্ধার করতে।
আগের দিনের পেন ফ্রেন্ড মতো ও আমার জীবন জরিয়ে গেলো।  আমার মতে ভালোবাসা একটা অভ্যাস। ও আমার অভ্যাসে পরিনত হয়ে গেছিলো। ও আমার গল্প একনিষ্ঠ পাঠক ছিলো। সাথে ছিলো সমালোচক। তার সাথে প্রাসঙ্গিক অপ্রসাঙ্গিক কথা বলতে বলতে বন্ধু হয়ে গেলো। আসলে আমার কষ্ট কথা, ভালোলাগার কথা শোনার মতো কেউ ছিলো না। কথায় বলে না, ” বুকে কথার পাহাড় , দেখা নেই শ্রোতার” । বন্ধুত্বটা এক সময় মানষিক ঘনিষ্ঠতায় পরিনত হলো।
আসলে মুখে সোস্যাল মিডিয়া বিরুদ্ধে কথা বললেও এর ফাদে পড়ে গিয়ে ছিলাম আমরাও। আসলে আজকাল বাড়িতে রোজ রান্না হওয়া কিছু পদ। কিন্তু খেতে বসার আগে তার ছবিও দেওয়া চাই সোশ্যাল মিডিয়ায়। বাড়িতে অতিথি এসেছেন। তাঁর সঙ্গে সময় কাটানো, কথা বলার আগেই তোলা চাই সেলফি। এবং যত ক্ষণ তা সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট না করা হচ্ছে, তত ক্ষণ যেন শান্তি নেই। কথা বলতে বলতে ক্রমাগত স্মার্টফোনে খুটখুট তো রয়েছেই। রেস্তোরাঁয় দু’জনে খেতে গিয়ে বা কোথাও বেড়াতে গিয়েও প্রাধান্য পায় ছবি তুলে টাইমলাইনে পোস্ট করা। আর তাতে ‘লাইক’ কম পড়লে অনেকেই ডুবে যান অবসাদে। নিজের চারপাশের মানুষগুলোর চেয়ে এ ভাবেই ভার্চুয়াল জগৎ ক্রমশ গ্রাস করছে মানুষের ব্যক্তিগত পরিসরকে। 
যাইহোক সোস্যাল মিডিয়া জন্য ওর আমার মধ্যে দূরত্ব কখনো বুঝতে পারি নি। ও মনে কাছাকাছি ছিলো। ও উত্তর বঙ্গের মেয়ে, আমি আবর সাগরের মাঝখানে পড়ে আছি পেটের দায়ে। ও পাহাড়ের গল্প বলতো । আমি বলতাম সাগরের। রূক্ষ মরুভূমি মাঝে ক্লান্ত উটের দলের ছবি পাঠালে ও পাঠাতো চা বাগান মাঝে পাহাড়দারে মতো দাড়ানোর গাছে ছবি। কোলকাতা ফিরে ন্যাশনাল লাইব্রেরি নাগকেশর গাছের ছবি পাঠলাম ও পাঠালো শান্ত সূর্য অলস ঘুম ভাঙার ছবি।

সম্পর্কে একটি স্থায়ী ঠিকানা হবার আগে ভেঙে চুরমার হয়ে গেলো সব স্বপ্ন। তবে ও এসেছিলো। আমার জীবনেও একটি স্বল্প সময়ের জন্য একটি প্রেম এসেছিল, লেখালেখি করতে গিয়ে ও বন্ধু হয়েছিলাম আমারা। কথা হতো নিয়মিত, কাল মার্কস থেকে শ্রীকৃষ্ণ, বাদ যেতো না পুনম পান্ডে।ভালো লাগা তৈরি হয়েছিলো। অথচ ওর পছন্দ ছিলো পাহাড় আমার সমুদ্র।। আমি পচ্ছন্দ ছিলো মরুভূমি, ওর পছন্দ ছিলো আকাশ। অনেক পার্থক্য ছিলো দুইজনের মধ্যে। তবু তৈরি হয়েছিলো মনের মিল।
মিষ্টি মেয়ে, বিশ্বাস করবেন না,প্রায় তিন বছর সম্পর্কে কখনো ওর মুখ দেখি নি। যখন ওর মুখ দেখলাম তখনো ওর মুখে লেগেছিলো হাঁসি। একটা পথ দূর্ঘটনায় ও মারা যায় ও। হয়তো দায়ী কিছু টা আমি। আমাকে কেউ কোন দিন এয়ার পোর্টে রিসিভ করেননি। ও আমাকে সারপ্রাইজ দিতে আসছিলো সেইদিন। কিন্তু দেখা হলোনা আমাদের।
একটা ওয়েব সাইটে আমার সম্পর্কে কিছু লেখা হবার কথা হচ্ছিল তখন। আসলে একটা পুরস্কার পাওয়ার কথা চলছিল আমার।একটা ছবি পাঠাতে বলেছিলো সংগঠকরা। আমি দেখতে ভালো না। তাই আমার একটা ভালো ছবি নির্বাচনের দায়িত্ব দিয়েছিলাম ওকে। ও এই ছবিটা নির্বাচন করেছিলো। আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম “কেন এই ছবিটা নিচ্ছো।”
ও বলেছিলো ” তোমার এই ছবিটাতে প্রকৃতির মতো সতেজতা ভরা আছে…”
সত্যি কথা প্রকৃতির সতেজতা মানে গাছ। আমার হোম টাউন কলকাতা। আগে কত গাছ ছিলো শহরময়। ছিলো সবুজ টিয়া, নীল মাছরাঙা, হলুদ কুটুম পাখি। এখন তো কালো কাক দেখা যায় না। এমনকি বাড়ি ঘুলঘুলিতে চড়ুই পাখির বাসাও চোখে পড়ে না। তাই আপনি আমি চড়ুইভাতি করতে ছুটে যাই গ্রাম গঞ্জে। গাছহীন শহরটা গরম হচ্ছে প্রতিনিয়ত।সপ্তাহের ছুটিদিনে গ্রাম গঞ্জে ঘুরলেন ঠিক আছে। গরম হাত থেকে রক্ষা পেতে ঘর ঠান্ডা রাখতে এসি লাগিয়ে রেহাই পেতে পারবেন তো ??
আপনি জানেন এবছর তাপপ্রবাহে নাজেহাল ইউরোপ! স্পেনে পারদ ছাড়াল ৪৬ ডিগ্রি, ফ্রান্সে বন্ধ ১৯০০ স্কুল, ইটালির ১৭ শহরে সতর্কতা জারি ইউরোপীয় ইউনিয়নের কোপারনিকাস ক্লাইমেট চেঞ্জ সার্ভিস ও বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার মতে, বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা বৃদ্ধির গড়ের দ্বিগুণ গতিতে গরম বাড়ছে ইউরোপে। এই রকম ভাবে তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে মহাদেশটির লক্ষ লক্ষ মানুষ ঝুঁকির মুখে পড়ছেন।ফলে সভ্যতার অগ্রগতি শেষ কথা নয়। প্রকৃতিকে রক্ষা করুন।সতেজ রাখতে জীবনকে।ওর স্মৃতি আমি বাচিয়ে রাখতে প্রতি বছর গাছ পুতি। রক্ষানবেক্ষন করার কিছু টাকা পয়সা খরচ করি কিন্তু স্লেফি তুলে পোস্ট করি না । কারণ লাইক কমেন্ট ধার ধারি না, ঐ লাইক কমেন্ট থেকেই বন্ধু শুরু হয়। আমি ভার্চুয়াল পৃথিবীর বাসিন্দা হতে চাই না। আর চাইনা কাউকে ভার্চুয়াল ফ্রেড করতে।

পরে পড়বো
৪২
মন্তব্য করতে ক্লিক করুন