মানব মন্ডল

গল্প - জোঁক

লেখক: মানব মন্ডল
প্রকাশ - রবিবার, ০৭ জানুয়ারি ২০২৪ ধরণ: জীবনবাদী

বিয়ের প্রথম প্রথম যখন তুমি শাড়ির পরতে যেতে তখন কুচি দিয়ে দেওয়ার নাম করে নাভি, পেট ছুঁয়ে নিতাম, আর তুমি আমাকে  “শয়তান  ” বলতে । আমার খুব ভালো লাগতো শুনতে। কোন দিন বলিনি তবে আজ বলছি, তুমি কাজল পরলে, তোমাকে লক্ষী ঠাকুর, লক্ষী ঠাকুর লাগতো। যেনো, প্রতি মাসে যাতে তোমার পিরিয়ড না হয়, তার না হয় তার জন্য প্রার্থনা করতাম। তুমি ভাবছো আদর করতে পারবো না তাই! নাগো তুমি কোমরে পিঠে ব্যাথায় কষ্ট পেতে, কিরকম কিরকম অসস্তিতে কাটাতে দিনগুলো তাই। তুমি বলবে “আদিখ্যেতা, অতো যদি ভালোবাসো, তবে তনুর boyfriendএর birthday তে pizza party করেছিলাম বলে ঝগড়া করেছিলে কেন???  ” যেনো তো আমার এগুলো ভালো লাগে না, pizza টা আসলে কি? রোমান সৈনিকরা যখন যুদ্ধ যেতো, আচার মাখিয়ে রুটি পাঠানো হতো, সেটাই pizzal অতো পয়সা খরচ করার মানে হয় ঐ pizza পিছনে। আর তুমি জানতে, ওই টাকাটা, তোমাকে আলাদা করে রাখতে বলেছিলাম। অফিসে থেকে, তপনদাকে advance না দিলে, আমি ওকে টাকা টা দিতাম। কারন ওর ছেলের কলেজে ভর্তির জন্য টাকা টা জরুরি ছিলো। তাছাড়া আমি নরপুর থেকে সেই দিন ফিরেছিলাম। তুমি তো ভালো পায়খানা, আর ভালো ঘর নেই বলে পালিয়ে এলে ওখান থেকে। ওখানের সুন্দর নদীটাকেতুমি দেখেছিলে। নদীতে ভেসে যাওয়া মরা পুড়ানো কাঠের দখল নিয়ে মারপিট করা ছেলেমেয়েদের দেখেছিলে। আমি ওদের সঙ্গে কথা বলে দেখেছি ওটা ওদের খেলা নয়। ওরা ওদের মায়েদের জন্য জ্বালানি সংগ্রহ করে ওভাবে। তাই পরে দিন বাপনকে কাজে নিয়েছিলাম। না, না, ওর বয়স কম বলে ওকে হাঁফ মুজুরী দিতে পারিনি আমি। কারন ওতো বরংচ বড়োদের থেকে বেশী কাজ করেছে। যানো ওর জন্মটা একটা ট্রাজেডি, ওর মা দরিদ্র বামুন ঘরের মেয়ে। ইটভাটায় কাজ করতে গিয়ে রফিকুল সাথে ওর প্রেম। ও যখন পেটে এলো, তখন বিয়ে র জন্য চাপ দিতে, রফিকুল পরিবার বলল ওকে ইসলাম কুবুল করতে হবে, ওর রাজিও হলো। গরীব মানুষের আবার কোন ধৰ্ম আছে নাকি?? কিন্তু সেই রাত্রিতে ওরা গ্রাম ছেড়ে পালাল। আমি জেনো, বাপনের থেকে অনেক কিছু জানতে পেরেছি। ১০০ দিনের কাজের যে job card দেওয়া হয় জেনো তার জন্য, ওদের ১০০০টাকা দেওয়া হয়। দিনে ১৬০টাকা করে পাবার কথা কাজ করলে ১০০ দিন কাজ ওরা করতেও চায়। কিন্তু নেতারা ১০০ দিন কাজ করেছে বলে কাগজে সই করায়, আর দিনে ১০টাকা করে দেয়। ১০ টাকায় তো ও সিঙ্গারা ওরা খেতে পারে না বলল।
আমি বললাম ” তোকে সিঙ্গারা মুড়ি খাবার পয়সা দেবো, দক্ষিণ এর ডাঙাটা সাফ করে দিবি?? ”
ও আল্লাদে আটখানা বললো,” এখুনি করছি”
আমি বললাম, “বিকাল বেলায় ওখানে যাস না, জোঁক আছে শুনেছি। আর আজ আমি বাড়ি যাবো বেশি পয়সা দিতে পারবো না,,,”
ও বললো ” তুমি কোন দিন দেখেছো?ওরা তোমার থেকে বেশী পয়সা ঝারবে বলে, ওরকম বলে। ২০ টাকা দিলেই হবে আমায়। আজ হাঁট অনেক দিন মাছ খাইনি একটু শুঁটকি মাছ কিনে আনবো। বর্ষাকাল তো অনেক দেড়ি না! তাছাড়া সবাই তো আমাকে কম পয়সাই দেয়।বলে বাচ্চাদের দিয়ে কাজ করালে জেল খাটতে হবে।।।। তুমি তো পুরো পয়সাই দিলে আজ। তোমাকে জন্য freeতে করতে পারি কাজ টা,,,”
আমি বললাম ” আমি কোন দিন জোঁক দেখি নি জানিস । ঠিক আছে ২০টাকাই দেবো। তোকে” পাগল ছেলে “ও ‘।যেনো আমাকে দেখাবে বলে কচুপাতাতে মুরে দুটো তিনটে জ্যান্ত জোঁক ধরে এনেছে। হঠাৎ চোখ পড়লো ওর পায়ে একটা জোঁক ঝুলছে। আমি বলতে বলো ” ছেড়ে দেও যতোটা রক্ত শুষে নিতে পারে নিতে দাও, কিছু হবেনা আমার”
দশটা টাকা বেশি দিতে খুব মন চাইছিল। কিন্তু তোমারা তো আমার পাইপয়সার নেবে। দশ টাকা বেশি দিলে দয়ারসাগর টাগর বলে কথা শোনাবে। কাল সকালে অফিস যেতে হবে । খিদের জ্বালা বড় জ্বালা ধর্মঘট তুলে নিয়েছে , লেবার ইউনিয়ন। কম পয়সায় ওভার টাইম ছাড়াই কাজে যোগ দেবে সবাই।তাই দাঁড়িটা কাটতে হবে আজ। দাড়িটা অনেক বড়ো হয়েছে। আয়ানায় নিজের মুখ দেখে চমকে উঠলাম। দাড়ি জায়গায় কিলবিল করছে কিছু জোঁক।
,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,

এখন পর্যন্ত লেখাটি পড়া হয়েছে ৫৫ বার
যদি লেখাটি সম্পর্কে কোন অভিযোগ থাকে, রিপোর্ট করুন
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন