আমাকে হারাতে দিলে খুন হয়ে যাবে তোমার নিজস্ব সভ্যতা

এম মনজুরুল ইসলাম এম মনজুরুল ইসলাম

The desire of a lover's mind as a sign of
love is vividly expressed in
the poem.


'যদি কেউ আসে',
সেদিন তার চোখের আইরিসে আঙুল রেখে দ্ব্যর্থকস্বরে
বলব 'ভালোবাসি',
তার জন্য স্বীকৃত কাজ শেষে বিলুপ্ত মসলিনের
রঙখসা সুতোর ওপর টুকে রাখব
'ভালোবাসি', 'ভালোবাসি'...

নো ম্যানস ল্যান্ডের পদতলে
বসে দেখব তার ভালোবাসার মলাটবদ্ধ ডাকটিকেট, তার পোশাকে লেগে থাকা
পারফিউমের সুগন্ধে মৃতের মতো সটান
পড়ে থাকব শহরের
শেষ ধ্বংসস্তূপে...

একদিন আমার সব হবে!

সেদিন আমি হাত বাড়িয়ে তার মনকে ছোঁয়ার
জন্য করিডরে দাঁড়িয়ে
থাকব, বয়োবৃদ্ধ নাগরিকের
মতো নিজেকে বিভক্ত
করে
আভিধানিকভাবে
অনুবাদ করব....

'যদি কেউ আসে',
সেদিন লিলেন চেক-শার্টের বাতিল বোতামে ঝুলে রাখব বয়সভিত্তিক শাশ্বত প্রেম,
সন্ধ্যার ঠোঁটে এঁকে দেব শাদাটে রঙের
নিরুদ্বেগ পেইন্টিং। যেদিকে
শহরের গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে
থাকবে অর্ধেক
অন্ধকার- ওপেন অ্যাঙ্গেল গ্লুকোমা চোখে
সেদিকেই খুঁজব তার ভালোবাসার
সুষম পদচিহ্ন....

সিগারেটের নিকোটিনে মিশে গিয়ে শুনব সেদিনকার শহরে ইন-প্রগ্রেসিভ টেম্পারেচার জিরো
পয়েন্ট ফাইভ সেন্টিগ্রেডের
ওভারকাস্ট ওয়েদার
নিউজ....

তবু আমার এমন লাগে কেন?

কেন মনে হয় সংক্ষিপ্ত শব্দেও ধসে যাবে তার শহরের পুরোনো
ওয়েদার স্টেশন ও
পোস্টবক্স?

যেতে যেতে কেন মনে হয়- এখনই বোধ হয়
বুকের ভূগোল বৃত্তে খুঁজে পাব তার
ভালোবাসার উদ্ধত
পদাবলি...

'কেউ যদি আসে',
তার জন্য সেদিন চুলে শ্যাম্পু করে শাওয়ার নেব,
অ্যাডিডাস ব্র্যান্ডের পারফিউম
বডিতে স্প্রে করে টি-শার্ট
গায়ে দাঁড়িয়ে
থাকব সংসদ ভবনের
ক্রিসেন্ট লেকে। তাকে
'ভালোবাসি' শব্দটির পুস্তকবদ্ধ চলমান সংকট বোঝানোর জন্য শিখা চিরন্তনে
জ্বালিয়ে দেব পূর্ব-পুরুষদের
জরিপকৃত সিএস
পর্চা.....

এমনকি, তার 'প্রিয়তম' হওয়ার জন্য হাই-লিকারের রঙ-চায়ে চুমুক দিয়ে সংযত যুবকের
মতো নতমুখে তাকিয়ে
থাকব। তাকে
তাফসির করতে করতে সহস্র বছর
ধরে হাঁটতে থাকব
শহরের পরিত্যক্ত
গলিপথে....

প্রতিদিন নিঃসঙ্গ হব!
তার জন্য নয়া-পল্টন মোড়ে যাব। ওসমানী উদ্যানে
সংরক্ষিত বিবি মরিয়ম কামানের সামনে
নিবৃত বুকে দাঁড়িয়ে দৃঢ় করব
নিজস্ব ব্রত। তার
নীল চোখে
দেখব 'প্রেমিক' খুনের অ্যাসিডিক
রাসায়নিক
বোমা....

তবু সে আসুক!
একবার এসে দেখে যাক আমার রাত শেষে দিন না আসা দুঃসময়ের অনুর্বর চাষবাস, দেখে যাক
করতলে পড়ে থাকা ভূমিষ্ঠ
যুবকের নিভৃতচার,
শুনে যাক একজন তিরিশোর্ধ প্রেমিকের
অসুস্থ আর্তরব....

'কেউ যদি আসে',
সেদিন ব্লিচিং পাউডার স্প্রে করে জীবাণুমুক্ত করব
সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, শরীরে
পচন ধরা বেওয়ারিশ কুকুরদের
শহর থেকে তাড়িয়ে দেব,
রাষ্ট্রীয় অর্থায়নে আঞ্জুমান-ই-মফিদুলে পাঠিয়ে দেব
মর্গে পড়ে থাকা পেন্ডিং মামলার
নথিবদ্ধ সব পচা-খসা
বিকৃত
লাশ.....

তার জন্য পুরোনো কলাপসিবল গেট রিপেয়ার করব,
অ্যালেন গিন্সবার্গের মতো বস্তুবাদের
বিরোধিতা করে হয়ে উঠব
সংঘবদ্ধ প্রেমিক। নিঃশব্দে দরজার
ওপারে দাঁড়িয়ে থাকার জন্য
একদিন সে আসুক,
আমার ড্রয়িংরুম-সোফাসেট-জানালার গ্রিল
কিংবা বিছানাপত্র এক মুহূর্ত
দেখার জন্য হলেও
একদিন সে
আসুক.....

উনিশ শতকের প্রাক্তন প্রেমিকদের
মতো তার মসৃণ ত্বকে খুঁজতে
থাকব ভালোবাসার
সিগন্যাল- 'যদি কেউ আসে!' তার
জন্য রক্ত চোখে ফিরে যাব নিশ্চিহ্ন
বাস্তুভিটায়, তার জন্য
মৃত্যুকে ভেঙে
ভেঙে প্রতিদিন
হব শহিদুল্লাহর নিঃশেষিত
শরীর....

সে আসুক, আসুক, আসুক! আসুক সে!
আমাকে দিখণ্ডিত করার জন্য হলেও সে একবার
আসুক!
আমাকে তার পাশে বসতে বলুক, আঙুল
ধরে দেখতে বলুক তার বুকে বেড়ে
ওঠা ভালোবাসার
গাণিতিক
রেখাচিত্র.....

আমি জানি,
তাকে ভালোবাসার জন্য ভিয়েতনামের ওপর লিখতে
হবে শোকার্ত স্বরলিপি! তবু একটি
অনুগত হরফকে ব্যাখ্যার
জন্য অন্তত একবার
সে আমার কাছে সমস্বরে একজন আদি
প্রেমিকের গল্প শুনতে
চাক, আমার জন্য
যেতে চাক
তাজিয়া মিছিলের
গণ-প্রতীকে....

শুধু বলব, আমাকে তুমি হারাতে দিয়ো না!
আমি হারিয়ে গেলে খুন হয়ে
যাবে তোমার নিজস্ব
সভ্যতার প্রাচীনতম
মাংসল গন্ধ,
ভেঙে যাবে স্বতন্ত্র ভালোবাসার
পরিশুদ্ধ উচ্চারণ....

১১/০৯/২০২২ খ্রি.
এখন পর্যন্ত কবিতাটি পড়া হয়েছে ৯৬ বার
যদি কবিতাটা সম্পর্কে কোন অভিযোগ থাকে, রিপোর্ট করুন
    মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন