বুকের ভিতর দারুণ ঝড়, বুক পেতেছি গুলি কর

এম মনজুরুল ইসলাম এম মনজুরুল ইসলাম

Even before the recent dictatorship, there was dictatorship in Bangladesh. So why will this dictatorship take all the blame? Who is responsible for the violent events
after the fall of the new
dictatorship?

(মূল কবিতা এখান থেকে)

৫ আগস্ট, ২০২৪!
-একটি বাতিল ইশতেহার, সাংবিধানিক গণভবনে একুশোর্ধ
বাঙালি সাহাবিদের
হিপোক্রেটিক
উত্থান এবং শোক-সংহতির একটি
অ-অনুমদিত খিলাফত
ইতিহাস....

একটি অতি-অভ্যুত্থানের সূচিভুক্ত এবং প্রশ্নবিদ্ধ এক আত্ম-বিজ্ঞাপন, সদ্যকৃত বধ্যভূমিতে বয়স
ভিত্তিক এক এলিটিক সিটিজেনের
কৃত্রিম পরাজয়ের নৃশংস
ও মেয়াদোত্তীর্ণ ক্যালেন্ডারের
বেজন্মা গাণিতিক
প্রতীক.....

কিন্তু আমি এখনো সেই অভ্যুত্থান বুঝি না কেন? অভ্যুত্থান বুঝি না বলেই ট্রিগার-বারুদ-বিস্ফোরণের
সামনে দাঁড়িয়ে আজও বলতে পারিনি,
বলতে পারি না- 'বুকের ভিতর
দারুণ ঝড়, বুক
পেতেছি
গুলি
কর!'

আর্য-পুরুষদের মতো উদ্ভাসিত হতে থাকল দুই হাজার চব্বিশ! কোটা সংস্কারের 'গণ-উন্মেষ' অনুসূচি মোতাবেক সুঠাম
না হয়ে
মেটিকুলাসলি হতে থাকল বুদ্ধিবৃত্তিক
প্রজন্মবাদের অশ্লীল
স্লোগান.....


তাই আমি হরতাল ঘোষণা করব, ব্যক্তিগত সেই হরতাল! দাবি তুলব- একাত্তরের ওই বিপ্লবী রক্তাক্ত
পঞ্জিকা চুয়ান্ন বছর পর আজ আবার
কেন ফাঁসির মঞ্চে দাঁড়িয়ে
ফিনকি দিয়ে গলগল
কালচে রক্ত
ঝরায়?


বাংলা অ্যাকাডেমির সাহিত্য সভায় চব্বিশের স্বৈরশাসক পতনের গণ-আন্দোলন
কীভাবে 'দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ'
সনদের অছিয়তনামা
হিসেবে লিপিবদ্ধ
হয় অপঠিত
পাণ্ডুলিপিজুড়ে?
কেনই বা
জারিকৃত প্রজ্ঞাপনে দেখা যায় রাষ্ট্রীয়
ব্যক্তিবর্গের ইনিসিয়ালি
দস্তখত?- আমি
তা লিখিতভাবে জানতে
চাইব....

আমাকে তুমি দাঁড়াতে বলেছ! দাঁড়াতে বলেছ
একটি শোধিত সংস্কারের সামনে, আঙুল
ভরতি অপবাদের সামনে, গণবিপ্লবের
বিরুদ্ধে অভুক্ত মুরশিদদের
অগ্নিময় ঘৃণার
সামনে.....

কিন্তু আমি কীভাবে দাঁড়াব? আমাদের তরুণদের
রক্তে এখন শ্বাপদসংকুল জনপদের বিষাক্ত
বুদ্বুদ! ওরা পিকাসোর ম্যুরাল ভাঙতে
গিয়ে উন্মাদ হয়ে ওঠে, গণভবন
লুট করতে গিয়ে সত্তুরোর্ধ
সাবেক
এক যুবতীর অন্তর্বাসে
খুঁজে পায় উলঙ্গ
উল্লাস....

এই দেশ কি তবে এখন নেড়ি
কুত্তাদের বুনিয়াদি
সঙ্গমভূমি?

আমাদের যাবতীয় যৌক্তিক স্লোগান, আমাদের শক্তি,
আমাদের জ্ঞান- ওদের কাছে কেবলই বিশ
শতকের অনাবশ্যক সভ্যতা! ওরা
এখন মুফতি-মুহাদ্দিস, ওরা
বুজুর্গান, মানুষ হওয়ার
পরিবর্তে ওরা এখন
অধিভুক্ত
গণসমন্বয়ক....

বাংলাদেশ কি তোদের বাপের হে? সোয়া
উনিশ কোটি বাঙালির ইলেকট্রিক
এই উপসেক্টর কে তোদের
'ওয়াক-ফ' দিয়েছে?


সংস্কারের নামে দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে ওঠে না ওদের স্ফিত শিরা-উপশিরা! পদত্যাগ-পত্রে স্বাক্ষর
করা শিক্ষকদের জন্য ওরা এখন
রক্তলগ্ন বিষধর সাপ, বিধ্বস্ত
ভূমিকম্প এবং
জ্বরজ্বালা বীভৎস মৃত্যুর
পুরোনো
নগরী....


আমরা জানতে চাই-
উত্তাল মধ্য-জুলাইয়ে সেভেন পয়েন্ট সিক্স-টু ক্যালিবারের যে বিষাক্ত বুলেট ছাত্র
জনতার বুক থেকে ভুসভুস
রক্ত ঝরিয়েছিল,
এক একটি
অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু মগজ কামড়ে ধরেছিল
জাতিসংঘের, টিএসসি, কেন্দ্রীয়
শহিদ মিনার, মধুর ক্যান্টিন,
রাজু ভাস্কর্য, শাহবাগ,
যাত্রাবাড়ী উত্তপ্ত
হয়ে উঠেছিল
মুষ্টিবদ্ধ
অপরিমিত গণ-পদভারে- সেই বুলেটগুলো তো
যুক্তরাষ্ট্রীয় ন্যাটো কর্তৃক ব্যবহৃত
মেট্রিক পরিমাপ! তবে
এদেশীয়
বেসামরিক সিকিউরিটি
ফোর্সের রাইফেলে
কীভাবে
এল?


তাই মার্ক্সবাদী চে-গুয়েভারার মতো অপভ্রংশ, রক্তস্নাত ও শরবিদ্ধ হয়েও আঙুল উঁচিয়ে সশব্দে
বলব- তোরা তো রুগণ শকুনের
জেনেটিক জন্মজাত,
ভ্রূণভ্রষ্ট মিছিলের
বর্ণচ্যুত
ব্যানার, এবার তোরা
মানুষ হ! বিকৃত
নসিহতনামার বিদআত
ফজিলত শেষে
মৃতপ্রায় এই উপত্যকার সিএস-ভূমি
ছেড়ে তিপান্নটি পাবলিক
ভার্সিটির আবাসিক
হলগুলোতে
ফিরে
যা.....



জেনে রাখিস, তোদের বিরোধিতা করার জন্য
আমিও কবি লোরকার মতো শ্বাসরোধে
খুন হতে নিজেকে
প্রস্তুত রাখব,
ফ্যাসিজমের পক্ষে উচ্চারিত শব্দগুলোর
জন্য এই মৃত্যপুরীর নগ্নদেহে
করব রক্তস্নান,
এশিয়ার একজন
আয়রন লেডির 'ফ্যাসিবাদ' নামকরণের
বিরুদ্ধে আদালতে দ্ব্যর্থহীন নারাজি
পত্র দাখিল করতে আমি
রাজপথেই
থাকব, ইনশাআল্লাহ...

যে মানুষ মিথেন অন্ধকারে ইলেকট্রনিক আলোয়
খোঁজে একটি ধর্ষিত ব-দ্বীপের খণ্ড খণ্ড
লাশ, যে মানুষ শত সংশয়েও হয়ে
ওঠে ফিনিক্স কবিতার
শেষের সর্বশেষ
পঙক্তি- ওরা সেই সচ্ছল
মানুষ হয়ে উঠবে
কবে?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলে
ওরা তো এখন একপ্লেট ভাতের বিনিময়ে
বিচার বহির্ভূত জীবন কেড়ে নেয়
বিকৃত মস্তিষ্কের এক
বনি-আদমের!
পিটিয়ে
হত্যার পর গণ-মজলিসে
উবু করে ঝুলিয়ে রাখে আন্ডারওয়্যার
পরা যুবকের কালসিটে
মৃতদেহ.....

এ যেন একষট্টি হিজরির দশ-ই
মহররমের আছর
ওয়াক্ত....

তবু তরুণ বিদ্রোহী হয়ে
যেতে বলেছ শহরগুলোর প্রতিটা গলি-কণায়,
প্রতিটা মফস্বলের এমুড়ো
থেকে সেমুড়ো....

আমাকে তৈরি থাকতে বলেছ! স্নায়ুতন্ত্র মজবুত করে
দেখতে বলেছ একটি অভ্যুদয়! যে
অভ্যুদয় মৃত্তিকার বুকে
এঁকে দেয় জলরঙ
বিপ্লব, যে
অভ্যুদয় দীর্ঘকাল অপেক্ষার
পর এনে দেয় সশস্ত্র
ইতিহাস.....

ওদের বিরুদ্ধে স্টেনগান কাঁধে আমাকে রাস্তায়
নামতে বলেছ, মৃত্যুকে অভিবাদন
জানিয়ে যেতে বলেছ উত্তাল
ঊনসত্তরে....

কিন্তু আমি তো ঊনসত্তরও বুঝি না! আমি 'মৃত্যু' বুঝি
না, আমি অভিবাদনও বুঝি না! আমি কেবল
বুঝি অপচয়কৃত শত-সহস্র শব্দের
মাঝে একটি শব্দ
'বাংলাদেশ'......

০১/১০/২০২৪ খ্রি.
এখন পর্যন্ত কবিতাটি পড়া হয়েছে ৩৫৫ বার
যদি কবিতাটা সম্পর্কে কোন অভিযোগ থাকে, রিপোর্ট করুন
    মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন