(কাব্য-বক্তৃতা)
অভিবাদন বাংলাদেশ,
এই রক্তাক্ত মঞ্চে সবাইকে স্বাগত এবং বিগত-আগত রক্ত-উষ্ণ অভার্থনা
যা আপনাদের হাতে এখনো লেগে আছে।
নাকের ডগায় যে সুগন্ধ পাচ্ছেন; ওটা লাশের গন্ধ!
যাতে আপনারা অভ্যস্থ এবং আসক্ত।
দোদুল্যমান সচ্ছ কাপে টগবগে রক্ত-চা চুমুকে-চুমুকে নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে।
স্বাধীনতার গর্বে ভরা উদীয়মান সূর্যের মতো গোল রক্ত-বৃত্ত ঘেরা সবুজে সবুজময় জাতীয় পতাকা এখন যদি পুনরায় আঁকি এই বিশাল-সবুজ লালে লাল হয়ে যাবে।
হু হু বইছে শঠ-বাতাস সমবেদনার
আমিও সমবেদনা জানাতে জানি–
তবে আজ আমি ব্যথার ক্ষতে নুন ছিটিয়ে বেদনা বাড়াতে আসিনি,
কোনো দুঃখের অশ্রু ফেলবো, বিচার চাইবনা কোন হন্তারকের।
শুধু সমবেদনার সমবেদনা জানাই!
এই অগ্নিঝরা চোখে আপনাদের বিবেকের অপমৃত্যুর সমবেদনা,
আপনাদের পশুত্ব-মনুষ্যত্বের সমবেদনা।
হৃদয় হতে রক্ত ঝরলে টিস্যু দিয়ে চোখ মুছলে শহীদের সাথে বেইমানি করা হবে।
উপস্থিত, মাননীয় বিচারপতির লাশ
আপনার দীর্ঘায়ু কামনা করি!
আপনিতো আইনের আদ্যপান্ত জেনে-বুঝেই বেআইনি কাজ আইনের রাস্তায় করেন
পবিত্র সংবিধানের অলি-গলি আপনার হাতে রক্তাক্ত, কলুষিত।
আপনিতো মহামান্য বিচারপতি–
আপনার বিচার করবে কে?
জনতার বিচার করতে-করতে আপনার বিবেক এখন ক্লান্ত, উন্মাদ-পশু।
মানুষের তাজা রক্ত-রঙে আলপনা একেঁ রঙিন সিনেমা দেখান আর বাহবা কুড়ান!
প্রভুর চেয়ারের পর আপনার চেয়ারের ক্ষমতা ভেবে যা ইচ্ছে তাই করবেন?
কার রক্ত নিবেন আর কাকে দিবেন- দাঁড়িপাল্লা আপনার দিকে তাকিয়ে আছে;
আপনিও তাকান তা-না হলে ন্যয্য হিসেবের তপ্ত মাঠে-
মিযানের-পাল্লা আপনার দিকে ফিরেও তাকাবে না!
এতোগুলো নিরপরাদ হত্যাকান্ডের পর
একদিন আপনারও মৃত্যু হবে এটা যেনে এখন কেমন লাগছে?
দয়া করে জানাবেন!
চোক্ষু বুঁজলে যদি হৃদয়ের আয়নায় অনুভূত হয়; অসংখ্য লাশের মাঝে আপনি একা
মৃত্যুর জন্য কাতরাচ্ছেন, প্রাণে বাঁচতে চাইছেন তবে আপানার মৃত্যুর রশিতে
কলা মেখে দিবে জল্লাদের ঘন লোমশ হাত অর্থাৎ হালকা লঘু করা হবে মৃত্যুর স্বাদ
আর যদি মনে হয়, মৃত লাশের আবার মৃত্যুদন্ড দিবেন তবে মানুষের পর্যায় অতিক্রম করে
আপনি জানোয়ার হয়ে গেছেন এবার আপনার মৃত্যুদন্ড কার্যকর করবে হিংস্র হায়নারা
মানুষের হাতে পশুর বিচার বড্ড বেমানান।
মাননীয় সভাপতি, আপনার হবে কোন গতি?
চোখের সামনে আপনার অঙ্গ-প্রতঙ্গ ছিঁড়েখুঁড়ে খাবে, মৃত্যুর যন্ত্রণার যখন ছটফট করবেন
তখন আপনার দীর্ঘ-মৃত্যু কামনা করি কারণ এতগুলো প্রাণ চেয়েআছে খুনমাখা চোখে–
মুনসেফ-মনিটরে; যুগ থেকে যুগে।
তখন সমবেদনা জানাবে– কে?
আজ, আমিও সমবেদনা জানাতে এসেছি,
তবে ব্যথাতুর মায়ের, বেদনার্ত বোনের, রক্তাক্ত ভাইয়ের নিথর দেহের,
চিরতরে অশ্রু শুকিয়ে যাওয়ার বাবার রুদ্ধ-কণ্ঠ এবং বাংলাদেশের ক্ষতের যন্ত্রণায় সমবেদনা নয়;
শুধু মাত্র– সমবেদনার সমবেদনা জানাই;
তাতে যদি মৃত্যু হয় হবে-
আমাকে আজ জানাতেই হবে,
আপনাদের বিবেকের অপমৃত্যুর সমবেদনা
আপনাদের পশুত্ব-মনুষ্যত্বের সমবেদনা
আপনাদের ব্যবসা-সফল সমবেদনা।
আপনাদের এই সমবেদনার অভিনব-অভিনয়-
অন্তরের অনন্ত ক্ষতের সমবেদনা।
এই নারকীয় নাট্যমঞ্চ থেকে আজকের মতো বিদায় নিচ্ছি তবে যাচ্ছিনা।
যারা জীবিত আছেন; অসুস্থ উপায় সুস্থতা পেতে চান।
লাশের বুকে দাঁড়িয়ে উল্লাস করতে চান, রক্তে স্নান করে খুনি হতে চান। আমার ক্ষুধার্ত পেট প্রদর্শনী করে, উপোষী হাঁড়ির ঝনঝনানি বাজিয়ে আপনার প্রফুল্ল-পেট ফুলাতে চান।
ক্ষমতার চেয়ারের দিকে তাকিয়ে লালসার জিহ্বা ঝোলান;
মনে রাখবেন, উঁইপোকাদের ইতিহাস নিতান্তই নির্মম।
বাংলার পক্ষ থেকে এই শল্য চিকিৎসা আরো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে,
যা আপনারা স্বপ্নেও ভাবেননি।
জেনে রাখবেন, গুলির মুখে মৃত্যু নিশ্চিত না হলেও বুলির মুখে গুলির মৃত্যু অবধারিত এবং
ধাবমান– হয়েছে, হচ্ছে, হবে, বারবার হবে।
প্রতিরাতের পরই সকাল হয়, অরুণ প্রাতে তরুণ জাগে নির্ভয়; এক-দেহ-এক-প্রাণ;
কন্ঠে বাজে সমস্বরে সত্য-সুন্দর; ইসরাফিলের শিঙার মহা-হুংকার–
স্বাধীন বাংলার স্বাধীন কণ্ঠস্বর রূধিবে সাধ্য কার!
মুখের ভাষা কাইড়া নেয়ার দুঃসাহস দেখাবিনা,
কেউ না, কক্ষণো না!
আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি
স্বপ্নাতুর বাংলাদেশ তোমাকে অভিবাদন,
বাংলাদেশ চির-চিরন্তন।
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন