নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী

কবিতা - রাজপথে কিছুক্ষণ

লেখক: নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী

দেখুন মশায়,
অনেকক্ষণ ধরে আপনি ঘুরঘুর করছেন,
কিন্তু আর নয়, এখন আপনার সরে পড়াই ভাল।
এই আমি থেকে হলফ করে বলছি,
কলকাতা থেকে কৈম্বাটুর অব্দি একটা
প্যাসেঞ্জার বাস-সারভিস খুলবার সত্যিই খুব দরকার আছে কি না,
তা আমি জানি না।
আপনার যদি মনে হয়, আছে,
তা হলে বেশ তো, যান,
যেখানে-যেখানে সিন্নি দেবার, দিয়ে,
জায়গামতন ইনফ্লুয়েনস খাটিয়ে
লাইসেন্‌স পারমিট ইত্যাদি সব জোগাড় করুন,
যাঁকে যাঁকে ধরতে হয়, ধরুন,
আমাকে আর জ্বালাবেন না। আমি
নেহাতই একজন ছাপোষা লোক,
টাইমের ভাত খেয়ে আপিস যাই,
অবসর-টবসর পেলে ছোট মেয়েটাকে নামতা শেখাই,
কৈম্বাটুর যে কোথায়,
মাদ্রাজে না পাঞ্জাবে, তা-ই আমি জানি না।
আপাতত তাড়াতাড়ি
শ্যামবাজারে যাওয়া দরকার, ভাগ্যবলে যদি একটা
শাট্‌ল-বাস পাই,
তা হলেই আমি আজকের মতন ধন্য হতে পারি।

দেখুন মহাশয়,
সেই থেকে আপনি আমার সঙ্গে সেঁটে আছেন।
কিন্তু আর নয়, এখন আপনার সরে পড়াই ভাল। আপনি
বিশ্বাস করুন চাই না-করুন,
দুই হাতের পাতা উল্‌টে দিয়ে এই আমি
শেষবারের মতো জানালুম, কেন
কৃষ্ণমাচারী গেলেন এবং
শচীন চৌধুরী এলেন,
তার বিন্দুবিসর্গও আমি জানি না।
আমি একজন ধিনিকেষ্ট,
কলম পিষতে বড়বাজারে যাই,
পিষি,
সাবান কিংবা তরল আলতার শিশি
কিনে বাড়ি ফিরি, গিন্নি
কলঘরে ঢুকলে বাচ্চা সামলাই।
আমাকে কিছু জিজ্ঞেস করা না-করা সমান,
ভোটারদের আল্‌জিভ না-দেখিয়ে যাঁরা বক্তৃতা দিতে পারেন না
আপনি বরং তাঁদের কাছে যান।
আমার এখন তাড়াতাড়ি
শ্যামবাজারে যেতে হবে। সঙ্গে যদি আসতে চান, আসুন,
লজ্জা-টজ্জা না-করে একটু শব্দ করে কাসুন,
তা হলেই আপনার বাসভাড়াটা চুকিয়ে দিতে পারি।

এখন পর্যন্ত লেখাটি পড়া হয়েছে ৭৮ বার
যদি লেখাটি সম্পর্কে কোন অভিযোগ থাকে, রিপোর্ট করুন
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন