প্রসূন গোস্বামী

কবিতা - নিশীথের গর্ভে বাংলাদেশ

প্রসূন গোস্বামী

রাত এখন আর রাত নয়—
এ এক অন্ধকারের গর্ভাশয়,
যেখানে জন্ম নিচ্ছে
নির্বাক চিৎকার,
পলিথিনে মোড়ানো স্বপ্নের মৃতদেহ।

পোস্টারে হাসছে এক নেতা—
তার চোখে নেই পুতলি,
শুধু কাচের মতো স্বচ্ছ মিথ্যে।
তার পেছনে দাঁড়িয়ে আছে
একটা ছায়া,
যার নাম কেউ জানে না,
তবু সবাই ভয় পায়।

নিউজফিডে আজকের শিরোনাম:
“একটি মেয়ে নিখোঁজ,
তার ফেসবুক প্রোফাইল এখন রাষ্ট্রদ্রোহী।”
কমেন্টে কেউ লিখেছে:
“দেশটা বাঁচাতে হলে
প্রথমে কবিদের গলা টিপে ধরো।”

আমি দেখি—
একটা গাছ,
যার পাতাগুলো সব সিসিটিভি ক্যামেরা।
পাখিরা আর গান গায় না,
তারা এখন ড্রোনের মতো উড়ে
নির্বাচনী পোস্টারে বসে থাকে।

একটা নদী ছিল,
তার নাম ছিল ‘সত্য’।
তাকে ডাইং ফ্যাক্টরির বর্জ্যে ডুবিয়ে
নতুন নাম দেওয়া হয়েছে—
‘উন্নয়ন’।

তবু আমি লিখি।
আমার কলমে এখন কালি নয়,
একটা মৃত শিশুর চোখের জল।
আমি লিখি—
কারণ আমি জানি,
যতক্ষণ শব্দ বেঁচে আছে,
ততক্ষণ দেশটা পুরোপুরি মরে যায়নি।

তুমি জিজ্ঞেস করো— কী করা যায়?
আমি বলি—
একটা মোমবাতি জ্বালাও,
তার পাশে দাঁড়াও,
তার ছায়ায় দাঁড়াও না।
তারপর একটা কবিতা পড়ো—
যেটা কেউ সেন্সর করতে পারবে না,
কারণ সেটা লেখা থাকবে
তোমার চোখের ভেতর।

বাংলাদেশ এখনো নিঃশেষ হয়নি,
সে শুধু ঘুমিয়ে পড়েছে
একটা দীর্ঘ দুঃস্বপ্নে।
তাকে জাগাতে হলে
তোমাকে স্বপ্ন দেখতে হবে—
আরও গভীর, আরও বিপজ্জনক,
আরও সত্য।

৫৬
মন্তব্য করতে ক্লিক করুন