প্রসূন গোস্বামী

কবিতা - রাত্রির বিদ্রোহ

প্রসূন গোস্বামী

রাত্রি যখন গিলে ফেলে স্বপ্ন, তখনই জন্ম নেয় বিদ্রোহের গান,
নিশীথ-আঁধারে জাগে নগর-শহর, বুকে নিয়ে দুঃসহ অপমান।
এসেছে এখানে উলঙ্গ-ছায়ার দল, অন্ধ ঈর্ষায় মত্ত,
ক্ষমতার লোভে ত্রাসের শাসন, মানুষ সেখানে কেবলই নগণ্য এক শর্ত।

তারা এল বন্য বিষধরের মতো, কূট-ফণা তুলে ভয়াল,
আলোকের পথ রুধিয়া দাঁড়ায়, শৃঙ্খলে বাঁধে মায়াজাল।
ন্যায়বিচারের দীপ নির্বাপিত, পথে পথে কেবলই কণ্টক,
শাসনের নামে চলে অবিচার, নীরব আর্তনাদ শোনে না কোনো লোক।

জনতার চোখে ঘুম নামে না আর, কেবলই জাগে সংশয়ের কালো মেঘ,
প্রতিটি ভোরে মৃত্যু-আভাস, প্রতিটি সন্ধ্যায় বাড়ে শোকের বেগ।
কৃষাণের লাঙল থেমে গেছে মাঠে, শ্রমিকের হাতে নেই বল,
সভ্যতা কাঁপে ভণ্ডামির ভারে, মিথ্যা এখানে মহীরুহের ফল।

তবুও গভীর তমসায় জ্বলে ক্ষীণ এক শিখা— দুরন্ত প্রাণের আশা,
মোর পরাধীন মাটি কেঁপে ওঠে, জাগে তার মুক্তির পিপাসা।
ধূসর ধূলির আড়ালে লুকানো যে অগ্নি, সে আজ করিবে হাহাকার,
দীর্ণ বক্ষে তবুও বাজে যে বাঁশি, আহ্বান করে প্রলয়ের পার।

এই বিষধরের শাসন করিবে ক্ষয়, কালের নিয়মে হবে লীন,
আকাশ ভরিয়া শুনি নব বার্তা, মুক্তির দিন – আসিতেছে সে দিন।
মানুষ ফিরিবে মানুষের রূপে, শৃঙ্খল হইবে ছিন্নভিন্ন,
মৃত্যুর পরেও জাগিবে জীবন, হবে না সে কভু দীর্ণ।

তখনই জাগে শত শত প্রাণ, মুক্ত প্রাণের সংগ্রাম,
রাত্রির বিদ্রোহেই ভোরের সূর্য ওঠে, অন্ধকারে লেখা হয় স্বাধীনতার নাম।

পরে পড়বো
৪৬
মন্তব্য করতে ক্লিক করুন