আর কতবার এই রাস্তা ধরে হেঁটে যাওয়া যায়, বলো?
পুরোনো ফুটপাথ, পুরোনো সস্তা চায়ের দোকান,
আর পুরোনো আমার এই মধ্যবিত্ত হাড়-মাংসের শরীর।
খুব একটা বদলায়নি কিছুই, কেবল
তোমার চোখের সেই কোণটা, যেখানে এক চিলতে হাসি
যেন বিদ্যুৎ-স্পৃষ্ট করে দিত সমস্ত পাড়াকে।
ওই হাসি, না কি চোখের ভেতরে লুকিয়ে থাকা
অন্য কোনো গভীর কুয়ো— আমি বুঝতে পারিনি তখন।
আসলে, আমার বোঝার ক্ষমতাটা বরাবরই কম।
লোকে প্রেম-ট্রেম করে, ফুল-টুল কেনে,
আমি শুধু সস্তা খবরের কাগজের মতো
তোমাকে উল্টে পাল্টে দেখতাম।
সেই চোখদুটো, যা কিনা হওয়া উচিত ছিল শান্তির জল,
তা-ই হয়ে উঠলো আমার অমোঘ ধ্বংসের ইশতেহার।
একটা আস্ত সাম্রাজ্য, ধরো, কিংবা বড়সড় একটা কেরানিগিরি—
এক লহমায় ধসে পড়ল বিনা নোটিশে।
অথচ কী আশ্চর্য, বাইরে থেকে দেখলে
কেউ বলবে না আমার ভেতরে এখন পোড়োবাড়ির জঙ্গল।
আমি তো ভেবেছিলাম, এ কেবল একটা সটান চাউনি,
দশটা অফিসের ফাইলের ভিড়ে যেমন
থাকে একটা লাল কালির দাগ।
কে জানত, সেই দাগটা আসলে মৃত্যুচিহ্ন।
শার্টের কলারটা একটু উল্টে নিয়ে
আমিও বেশ মানিয়ে চলি এই বাজারে,
শুধু রাতের বেলা, যখন পাড়ার কুকুরগুলোও ঘুমিয়ে,
তখন চোখের পাতা বন্ধ করলেই দেখি
সেই কুরুক্ষেত্র— আর তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে তুমি,
একটুও অবাক না হয়ে, যেমন দাঁড়াও কফি হাউসের বিল মিটিয়ে।
তোমার কোনো দোষ নেই।
আমিই দেখতে চেয়েছিলাম মুক্তির ছবি,
দেখলাম শতাব্দীর সেরা ভুল, আর দেখলাম—
আমার নিজস্ব সর্বনাশ।
ভালো থেকো। কিংবা না থেকো। আমার তাতে কী আসে যায়।
তোমার দৃষ্টির ধার এখনো তেমনই আছে,
শুধু আমিই এখন আর লক্ষ্যবস্তু নই।
৬০

মন্তব্য করতে ক্লিক করুন