বিকেল থেকে মন ভালো নেই।
সন্ধ্যা থেকে ইলেক্ট্রিসিটি নেই। গাঢ় অন্ধকারে আমি একা। এইসময়গুলোতে আমি অদ্ভুত অদ্ভুত কাজ করি। আজ যা করছিলাম, তা হলো নিজের সাথে কথা বলা। কথা বলতে গিয়ে আবিষ্কার করি, কেউ একজন আমার প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে। জিজ্ঞেস করছে, ‘কী হয়েছে?’
আমি বললাম, ‘আমার মন ভালো নেই’।
সে বলল, ‘কেন?’
আমি বললাম, ‘তুমিতো জানো। তুমি আমার ভেতরেই থাকো। তোমারতো না জানার কথা না!’
সে বলল, ‘জানা কথা কি আমাদের জানতে ইচ্ছে হয় না?
আমি বললাম, ‘হয়। কিন্তু সে অন্যের কথা। নিজের কথা না’।
সে বলল, ‘আমি কি তোমার নিজ?’
আমি বললাম, ‘তা নয়তো কি?’
সে বলল, ‘মানুষ নিজের সাথে কখন থাকে?’
আমি বললাম, ‘নিজের সাথে কখন থাকে এটা কী ধরনের প্রশ্ন? মানুষ নিজের সাথেইতো সবসময় থাকে!’
সে হাসল। তারপর বলল, ‘তাহলে কেবল মন খারাপ হলে, একা হলে, অন্ধকার হলেই কেন তুমি আমার কাছে আসো? কেন শুধু এই সময়েই আমার সাথে কথা বলো? আনন্দময় মুহুর্তগুললোতে কেন নয়?’
আমি বললাম, ‘তখন অনেক ব্যস্ততা থাকে। অনেক কাজ, মানুষ, হইহুল্লোড় থাকে!’
সে বলল, তাহলে? ওই আনন্দময় প্রাপ্তির মুহূর্তগুলোতে তুমি নিজের সাথে থাকো না? থাকো অন্যের সাথে? কেবল বিষাদ সময়ে, দুখের সময়ে নিজের কাছে ফিরে আসো?’
আমি খানিক থতমত খেয়ে গেলাম।
সে বলল, ‘মানুষ নিজেই কী ভীষণ স্বার্থপর, দ্বিচারি। সে নিজেকেই নিজে ব্যবহার করে তার প্রয়োজনে, তার একাকীত্বে, তার অন্ধকার দুঃসময়ে। আর ভুলে যায় প্রাপ্তিতে, আনন্দে। অথচ, তার সাথে অন্য কেউ যখন এমন করে, তখন সে হয়ে যায় স্বার্থপর। তাই না? তখন অন্যের স্বার্থপরতা, হীনতা, দ্বিচারিতা নিয়ে সে মন খারাপ করে। অথচ সে নিজেই নিজের সাথে ক্রমাগত কী ভয়াবহ স্বার্থপর, দ্বিচারি আচরণ করে যায় অবলীলায়! অদ্ভুত না?
আমি জবাব দিতে পারলাম না। গাঢ় অন্ধকারে ঘড়ির কাটায় টিক টিক শব্দ হচ্ছে। বয়ে যাচ্ছে সময়। অন্ধকারের সেই সময়ে আমি স্তব্ধ হয়ে বসে রইলাম।
(কবি সাদাত সাদাত হোসাইনের ফেসবুক প্রোফাইল থেকে)
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন