ডাক্তারের বিপত্তি
শংকর ব্রহ্ম
আমার বাড়ির পাশেই ডাক্তার রায়ের চেম্বার। বারান্দায় দাঁড়ালে দেখা যায় সব। ডাক্তার রায় বয়স্ক মানুষ। আগে খুব পসার ছিল তার। এখনও কিছু স্থানীয় রোগী তাকে দেখাতে আসেন। রাস্তার পাশেই ডাক্তারের চেম্বার, থাকবার ঘরটা বাড়ির একটু ভিতর দিকে।
বই পড়া ও লেখালেখির কারণে ব্যস্ত থাকার ফলে, শুতে যেতে আমার বেশ রাত হয়ে যায়, সকালের দিকে ঘুমটা গাঢ় হয়ে আসে।
সেদিন, গাঢ় ঘুমটা ভেঙে যায়,পাশে ডাক্তারের বাড়ির দরজায়, এক নাগাড়ে ডোরবেল বাজাবার শব্দে। ঘুম চোখ, চোখ কচলাতে কচলাতে বারান্দায় এসে দেখি, একটা উস্কো খুস্কো চেহারার লোক ডাক্তার বাবুর চেম্বারের ঘন্টি টিপে চলেছে।
তারপর দেখি, ডাক্তার বাবু ঘর থেকে বেরিয়ে, হন্তদন্ত হয়ে এসে লুঙ্গির কষি শক্ত করে কষে বাঁধতে বাঁধতে, দরজা খুলে দিয়ে লোকটাকে দেখতে পেয়েই বললেন, এত সকালে কি চাই তোমার?
লোকটি বলল, ডাক্তার বাবু আমায় কুকুরে কামড়েছে।
ডাক্তার বাবু বিরক্ত হয়ে বললেন, তুমি কি জান না, আমার চেম্বার সকাল দশটা থেকে খোলা থাকে?
লোকটি উত্তর দিল,আমি তো জানি স্যার। কিন্ত আপনার পাড়ার কুকুরগুলো বোধহয় জানে না। লোকটির উত্তর শুনে, আমি হেসে ফেললাম।
ডাক্তার বাবু তাই দেখে বললেন,আপনি হাসছেন কবি? আমার তো কান্না পাচ্ছে।
আমি বললাম, কেন লোকটির উৎপাতের জন্য, নাকি পাড়ার কুকুরগুলোর জন্য।
ডাক্তার বাবু বললেন, ধুর, সে’সব না?
– তবে? আমি প্রশ্ন করি।
আমার স্ত্রী ঘুম থেকে উঠে আমায় দেখতে না পেলে, প্রথমে শুয়ে শুয়ে কিছুক্ষণ হম্বিতম্বি করবে, শেষে আমায় কেউ মেসেজ করে বাইরে ডেকেছে ভেবে, বিছানা ছেড়ে উঠে বালিশের তলা থেকে আমার মোবাইলটা বের করে নিয়ে, আছড়ে ফেলে না ভাঙে, সেই চিন্তা হচ্ছে আমার। বলেই লোকটাকে নিয়ে ডাক্তার বাবু চেম্বারের ভিতরে ঢুকে গেলেন। আর আমি ঘরে ঢুকে আবার বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম।
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন