শংকর ব্রহ্ম

গল্প - ভি. আই. পি

লেখক: শংকর ব্রহ্ম
প্রকাশ - মঙ্গলবার, ৩০ জুলাই ২০২৪ ধরণ: অন্যান

ভি. আই. পি
শংকর ব্রহ্ম

আমি যখন উচ্চ-মাধ্যমিক পড়তাম খুব ইচ্ছে ছিল, বড় হয়ে একজন কেউকেটা ভি আই পি হব। সে ইচ্ছে পূরণ হয়নি। হয়ে গেছি কবি।

সেদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখলাম, আমি আর আমি নেই, কেমন অন্য-মানুষ গেছি। আমার ভিতরে কেউ ঢুকে পড়েছে রাতে ঘুমের মধ্যে। আমি একজন কেউকেটা ভি আই পি হয়ে গেছি। শিক্ষামন্ত্রীর ব্যক্তিগত সচিব।
হঠাৎ মনে পড়ল, রাজ্যপালকে একবার ফোন করতে হবে বিশ্ব-বিদ্যলয়গুলিতে উপাচার্য নিয়োগের ব্যাপারে। ডিনারটা কোন একটা বড় হোটেলেই সেরে নেব। এক কাপ চা হলে বেশ ভাল হত। মুখটাও এখনও ধোয়া হয়নি ।
ড্রাইভারকে বলি, গাড়ি বের করতে। হোটেলে গিয়েই প্রাত্যহিক কাজকর্ম সেরে নেব। সুটেড-বুটেড হয়ে বেরিয়ে পড়লাম মুহূর্তে।
হোটেলে ঢুকে, বাথরুমের কাজ আগে সারি। বেরিয়ে এসে চায়ের অর্ডার দিই। ফোনটা হাতে নিয়ে দেখি সি.এম ফোন করে ছিলেন, আমি তখন বাথরুমে।
চায়ে চুমুক দিয়ে, রিং ব্যাক করি।
– উনি এখন মিটিংয়ে, পরে ফোন করবেন বললেন তাঁর পি এ।
চা খেতে খেতে কাগজগুলিতে চোখ বুলাই ধীরে ধীরে।
নতুন কিছু জানার নেই। – ধুস্ রাবিশ সব। কাগজ সরিয়ে রাখি।
ডিনার রেডি করতে বলি দ্রুত।
রাজ্যপালকে ফোন করি। বেজেই যায়, ধরে না কেউ।
ডিনার সেরে বেরিয়ে পড়ি নবান্নের উদ্দেশ্যে, যদি সি. এম -এর দেখা পাই। গাড়ির মধ্যেই এক শিল্পপতির ফোন, – একবার আসবেন, স্যার? আপনার কমিশনের চেকটা রেডি।
– কোথায়?
– তাজ-হোটেলে
– হ্যাঁ, আসছি আমি একটু পরেই।
– খুব বেশি দেরী করবেন না স্যার
তার কথা শুনে মনে হল, সকাল সকাল প্রাপ্তি যোগের ব্যাপার।
বেশি দেরি করাটা ঠিক হবে না, তাই ড্রাইভারকে বলি গাড়ি ঘোরাতে বড়বাজারের দিকে। বলি দ্রুত চালাও। ড্রইভার গাড়ির স্পীড বাড়িয়ে দেয়। গাড়ি যেন পক্ষীরাজের ঘোড়া। বাইরে থেকে ফুরফুরে হাওয়া ঢুকছে। আচমকা একটা লড়ির সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষ।
আতঙ্কে বুকটা কেঁপে উঠল। মরে গেছি নাকি বেঁচে আছি?

হঠাৎ ঘুমটা ভেঙে গেল। বাস্তবিক সত্যি হলে কি হত, বুকের ভিতরটা কেমন করে উঠল। আমার আর বড় ভি.আ.পি. হয়ে কাজ নেই কোন।
আমি কবি মানুষ, সরস্বতীকে নিয়ে এই বেশ আছি।

৭৮
মন্তব্য করতে ক্লিক করুন